৪৪তম বিসিএসের আবেদন ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭১৬ জন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হতে পারে আগামী ২৭ মে। প্রতিযোগিতামূলক এই চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পরিকল্পনামাফিক প্রস্তুতির বিকল্প নেই। বিসিএসে কোনো বিষয়ে দুর্বলতা রাখা যাবে না। প্রিলিমিনারিতে নম্বর বণ্টন কমবেশি হতে পারে, তবে সব বিষয় সমান গুরুত্বপূর্ণ। এখন এড়িয়ে গেলে লিখিত পরীক্ষার সময় বেশি চাপ পড়বে।
বিসিএসের সিলেবাস বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এর আওতা বোঝা। অনেক কিছুই সিলেবাসে সরাসরি উল্লেখ না–ও থাকতে পারে, তবে পরোক্ষভাবে সেটা যে সিলেবাসের ভেতরেই, তা বুঝে নিতে হবে প্রস্তুতির শুরুতে। চাকরিপ্রার্থীদের সুবিধার্থে ৪৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ এখানে তুলে ধরা হলো।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্য মিলে ৩৫ নম্বর থাকে। ব্যাকরণের জন্য নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বোর্ড বইটি সহায়ক হবে। ব্যাকরণের বিভিন্ন বিষয় উদাহরণসহ পড়তে হবে। খাতায় নোট করে নিলে অল্প সময়ে রিভিশন দেওয়া সহজ হবে। এ ছাড়া ব্যতিক্রমী উদাহরণগুলো টুকে নিতে হবে। সাহিত্যের ক্ষেত্রে পিএসসির নির্ধারিত ১১ জন সাহিত্যিক, বাংলা সাহিত্যের পঞ্চপাণ্ডব ও আধুনিক সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্তত ২০ জনের সাহিত্যকর্ম নিয়ে প্রস্তুতি থাকতে হবে। ছড়া বা শব্দ সংকেতের মাধ্যমে মনে রাখা সহজ। মনে রাখতে হবে, বাংলা সাহিত্য একটি বিশাল সিলেবাস। সব আয়ত্ত করা যায় না, চেষ্টা করাও উচিত হবে না।
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের প্রশ্ন অপেক্ষাকৃত সহজ হয়। ইংরেজিতে ভালো করার বিকল্প নেই। ইংরেজির কিছু টপিক বিসিএসে প্রতিবারই আসে। যেমন, ভোকাবুলারি, ফ্রেজ অ্যান্ড ইডিয়মস, প্রিপজিশন ও পার্টস অব স্পিচ। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় গ্রামার রুল শেখার সময় রুলের অন্তর্গত নানা চাকরির পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন অনুশীলন করা। এতে সহজে বোঝা যাবে। সাহিত্যিকদের ক্ষেত্রে আগের প্রশ্ন ও তাঁদের সৃষ্টিকর্ম পড়া যেতে পারে।
বাংলাদেশ বিষয়াবলি
বাংলাদেশ বিষয়াবলির সিলেবাস বেশ বড়। সিলেবাস দেখেই অনেকে হতাশ হয়ে যান। আরও হতাশ হয়ে পড়েন সাধারণ জ্ঞানে তুখোড় কাউকে দেখলে। এ বিষয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশ বিষয়াবলির প্রস্তুতিতে তিনটি পর্যায় আছে—প্রথমত, নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বই, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পৌরনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস বইগুলো রাখা যায়। এসব বইয়ের এমসিকিউ নোট আকারে সহায়ক বই পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন সহায়ক বই। তৃতীয়ত, পত্রিকা, টিভি নিউজ ও বিভিন্ন সম্পাদকীয় সংকলন। পাশাপাশি সংবিধানের আগাগোড়া জানতে হবে।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি
বৈশ্বিক ইতিহাস, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংগঠন, বাণিজ্য চুক্তি, অন্যান্য চুক্তি, যুদ্ধ, যুদ্ধবিরতি, খেলাধুলা ও সাম্প্রতিক বিষয়ে প্রায়ই প্রশ্ন আসে। এই অংশে জানাশোনা কম থাকে বলে প্রার্থীদের মধ্যে ভীতি দেখা যায়। সাধারণ বইয়ের বাইরে প্রশ্ন হলে, সেটা সবার জন্য কঠিন। তবে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ প্রশ্ন সব সময়ই কমন থাকে।
সাধারণ বিজ্ঞান
এই অংশের সিলেবাসের আয়তন ও বরাদ্দ করা নম্বর ব্যস্তানুপাতিক। আগের প্রশ্নগুলো পড়লেই ৮৫ ভাগ প্রস্তুতি হয়ে যায়। বিজ্ঞানে নম্বর কম বলে অনেকে বিজ্ঞানে কম প্রস্তুতি নেন বা এড়িয়ে যেতে চান। সে ক্ষেত্রে লিখিত প্রস্তুতির সময় অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হবে বিজ্ঞানের জন্য।
ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
নবম-দশম শ্রেণির ভূগোল বই থেকে বিসিএস সিলেবাস–সংশ্লিষ্ট অংশ পড়ুন। তবে গাইড বইয়ের চেয়ে আগের বছরে আসা প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ। মানচিত্র সঙ্গে নিয়ে পড়লে সহজে রপ্ত করা যায়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, চুক্তি ও সম্মেলন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
গাণিতিক যুক্তি
এই অংশে প্রস্তুতি দুই রকম। যদি প্রার্থীর বেসিক ধারণা ভালো হয়, তাহলে বই থেকে অনুশীলন করলেই চলে। আর দুর্বল হলে নিম্নমাধ্যমিকের গণিত বই সহায়ক হতে পারে। তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় দীর্ঘ গণিত বা জটিল গণিত আসে না। এ ক্ষেত্রে ইউটিউব থেকে সাহায্য নিলে প্রস্তুতি ভালো হবে।
মানসিক দক্ষতা
আগের বিসিএসে আসা প্রিলিমিনারি ও লিখিত প্রশ্নের সমাধান করতে হবে। মানসিক দক্ষতায় বিভিন্ন সূত্র প্রয়োগ করে সমাধান করলে ভুল হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি
তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির আইসিটি বইয়ের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। তবে নবম-দশম শ্রেণির আইসিটি বইটি সহজে বোঝা যায়। এ ছাড়া বিসিএসসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন পড়তে হবে।
নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন
সবচেয়ে বেশি কনফিউজিং প্রশ্ন থাকে এ অংশে। একই প্রশ্নের উত্তর ভিন্ন দেখা যায়। যদিও বেশির ভাগ প্রশ্নের উত্তর কমনসেন্স থেকে করা যায়। জাতিসংঘসহ অন্যান্য বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের সুশাসন–সম্পর্কিত পদক্ষেপ জানা জরুরি।