বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির আওতায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য ৩৪ হাজার ৭৩ জনকে প্রার্থীকে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়েছে। পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান রেখেই তাঁদের নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
এনটিআরসিএ’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইতিমধ্যে সুপারিশ পাওয়া প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এনটিআরসিএর ওয়েবসাইট থেকে সুপারিশপত্র ডাউনলোড করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুপারিশপত্রে উল্লিখিত তারিখের মধ্যে তাঁদের যোগ দিতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এনটিআরসিএর তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির আওতায় ৩৮ হাজার ২৮৩ জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়। কিন্তু ৪ হাজার ১৯৮ জনকে পুলিশ ভেরিভিকেশন ফরম না পাঠানো, ৯ জনকে প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ হওয়ায় এবং তিনজন নিয়োগে বিজ্ঞপ্তির শর্ত না মানায় মোট ৪ হাজার ২১০ জন প্রার্থীকে সুপারিশ করা হয়নি। যেসব প্রার্থীকে সুপারিশ করা হয়নি তাদের তালিকা এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটের তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির সেবা বক্সে পাওয়া যাবে।
এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান রেখেই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘স্কুল-কলেজগুলোয় অনেক শিক্ষকের পদ ফাঁকা। এ জন্য আমরা পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান রেখেই তাঁদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিয়োগের পর পুলিশ ভেরিফিকেশনে কারও বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য এলে তা এনটিআরসিএকে জানানো হবে এবং তাঁদের নিয়োগ বাতিল হবে।’
এনটিআরসিএর তৃতীয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আওতায় ৩৪ হাজার ৭৩ জন প্রার্থীর নিয়োগ পুলিশ ভেরিফিকেশনের কারণে এত দিন আটকে ছিল। উত্তীর্ণ হয়েও চাকরিতে যোগ দিতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন নিয়োগের জন্য সুপারিশ পাওয়া এসব চাকরিপ্রত্যাশীরা। এ নিয়ে প্রথম আলোতে গত ২৪ ডিসেম্বর ‘এনটিআরসিএ: তিন বছরেও শেষ হয়নি শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া’
এনটিআরসিএ সূত্র জানায়, সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে) শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধনের এই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিল। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা হয় ২০১৯ সালের জুলাইয়ে। এরপর মৌখিক পরীক্ষা হয় ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয় গত বছরের ১৫ জানুয়ারি।
এনটিআরসিএ সূত্র আরও জানায়, ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে স্কুল ও কলেজে শিক্ষক নিয়োগের জন্য গত বছরের ৩০ মার্চ তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। গণবিজ্ঞপ্তির আলোকে ৪ এপ্রিল আবেদন গ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় ৩০ এপ্রিল। গত ১৫ জুলাই ৩৮ হাজার ২৮৩টি পদে নিয়োগের সুপারিশ করে এনটিআরসিএ।
এর আগে দুটি গণবিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে দুই দফায় শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে এনটিআরসিএ। ওই দুই গণবিজ্ঞপ্তিতে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে নিয়োগ পেয়েছেন প্রায় ৩৬ হাজার শিক্ষক।
তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম যাচাই শেষে ওয়েবসাইটে সুপারিশপত্র প্রকাশ করা হবে। এরপর প্রার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন। সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা ২৫ আগস্ট থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটে পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম পূরণ করেন। তবে গত চার মাসেও শেষ হয়নি পুলিশ ভেরিফিকেশন। অবশেষে পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান রেখেই তাঁদের নিয়োগ দিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিষয়টি ছিল না। পুলিশ ভেরিফিকেশন না থাকায় প্রথম গণবিজ্ঞপ্তিতে চূড়ান্ত ফল প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ১৫ দিনের মধ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়।