The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪

২০২১-২২ অর্থবছরে চবিতে ৬৮ কোটি টাকার অনিয়ম

চবি প্রতিনিধিঃ ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বিভিন্ন খাতে ৬৮ কোটি টাকার অনিয়মের বিষয়টি সামনে এসেছে। সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত এ বিশাল অংকের টাকা খরচের খাতায় উঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের সর্বোচ্চ অডিট প্রতিষ্ঠান  সিএজি বা মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক থেকে পরিচালিত এক অডিটে এ অনিয়ম ধরা পড়ে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক খরচের ক্ষেত্রে ২৭টি বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে সিএজির কর্মকর্তারা। যার মধ্যে ১৪টি খুবেই গুরুতর আর্থিক অনিয়ম (এসএফআই) ও ১৩টি গুরুতর নয় এমন আর্থিক অনিয়ম (নন-এসএফআই) রয়েছে। গুরুতর এই আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি উল্লেখ পূর্বক অডিট শেষে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত অডিটররা।

ষিয়টি সামনে আসলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন জানিয়েছে, আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কেই এ টাকা নিয়ম মেনেই খরচ হয়েছে মর্মে প্রমাণ করতে হবে। নতুবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের টাকা ফেরত দিতে হবে। সংশ্লিষ্টরা যদি এখন টাকা না দিতে পারে তাহলে তা তাদের পেনশন থেকে কেটে নেয়া হবে।

অডিট রিপোর্টে উল্লেখিত অনিয়ম:

অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা অনিয়ম গুলোর মধ্যে আছে, নিয়ম বহির্ভূতভাবে শিক্ষকগণকে তাদের প্রাপ্যতা থেকেও বেশী দায়িত্ব ভাতা প্রদান করার ফলে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৬৮ লাখ ৯০ হাজার ৩১৬ টাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাগণকে প্রদত্ত অগ্রিম টাকা সমন্বয় করা হয়নি, যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি হয়েছে ৫ কোটি ৩২ লাখ ৭ হাজার ২৩৭ টাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে বসবাস করা সত্ত্বেও শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বেতন বিল হতে নির্ধারিত হারে বাড়ি ভাড়া কর্তন না করার কারনে আর্থিক ক্ষতি ১ কোটি ২২ লাখ ৭৪ হাজার ৯২৯ টাকা, ডিজিটাল লাইব্রেরি সেবার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে বরাদ্দকৃত সরকারের অনুদান মঞ্জুরি থেকে ইউজিসি কর্তৃক অনিয়মিতভাবে কর্তন ৯ লাখ ৮৬ হাজার ৫৬২ টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রাপ্যতার অতিরিক্ত বই ভাতা প্রদান করায় আর্থিক ক্ষতি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৬০৯ টাকা, দোকান ও মার্কেট ভাড়া বাবদ অনাদায়ী অর্থ আদায় না করায় আর্থিক ক্ষতি ৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৮০ টাকা, পদ ছাড়াই অর্গানোগ্রাম বহির্ভূত বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে শিক্ষকদের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানপূর্বক দায়িত্ব ভাতা প্রদান করায় আর্থিক ক্ষতি ২ লাখ ৮৮ হাজার ৪৬২ টাকা, সরকারি অর্থে বাস্তবায়িত প্রকল্পের অব্যয়িত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি ২৯ কোটি ৯ লাখ ৬৫ হাজার ৪৪০ টাকা।

এছাড়াও অডিট রিপটে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রদত্ত সম্মানী বিল হতে কর্তনকৃত আয়কর পরিশোধকারী কর্তৃক সরকারি কোষাগারে জমা না করায় রাজস্ব ক্ষতি ৫১ লাখ ৯১ হাজার ৫৩০ টাকা, ১ম বর্ষ সম্মান শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার ফি হতে প্রাপ্ত আয়ের ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা প্রদান না করায় আর্থিক ক্ষতি ৪ কোটি ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৪০০ টাকা, বিধি বহির্ভূতভাবে প্রাপ্যতা ছাড়াই গবেষণা ভাতা প্রদান করায় আর্থিক ক্ষতি ২ কোটি ৭২ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৯ টাকা, গবেষণা প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও রিপোর্ট দাখিল না করে প্রকল্পের জন্য মঞ্জুরিকৃত অর্থ অনিয়মিতভাবে ব্যয় ৬০ লাখ টাকা,

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদকে অনিয়মিতভাবে চাঁদা প্রদান ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা, সিটি করপোরেশনের এলাকার বাইরে হওয়া সত্ত্বেও কর্মচারীদের যাতায়াত ভাতা প্রদান করায় আর্থিক ক্ষতি ৫২ লাখ ৫৯ হাজার ৬০০ টাকা, নির্ধারিত চাকরিকাল শেষ হওয়ার পরেও সেশন বেনিফিটের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিধি বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত সময়ের চাকরির সুযোগ প্রদান করে বেতন ভাতাদি পরিশোধ করায় আর্থিক ক্ষতি ১ কোটি ৫৪ লাখ ৬৬ হাজার ১২১ টাকা। সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী প্রাপ্য হার অপেক্ষা বেশি হারে বাড়ি ভাড়া ভাতা প্রদান করায় আর্থিক ক্ষতি ২ কোটি ৮২ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৮ টাকা, ইউজিসি’র নির্দেশনা লঙ্ঘন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থিত স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকদের বেতনভাতা রাজস্ব বাজেট হতে প্রদান করায় আর্থিক ক্ষতি ২ কোটি ১১ লাখ ১৫ হাজার ২৫৬ টাকা।

আর্থিক ক্ষমতা বহির্ভূত গাড়ি মেরামত বাবদ অতিরিক্ত ব্যয় করায় আর্থিক ক্ষতি ১৭ লাখ ৪৮ হাজার ৮১২ টাকা, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও অনিয়মিতভাবে সময় বর্ধন করে ঠিকাদারকে সুবিধা প্রদান, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও অনিয়মিতভাবে বিল পরিশোধ ১৪ কোটি ৫৮ লাখ ৬২ হাজার ৮৭৭ টাকা,

পিপিআর ২০০৮ লঙ্ঘন করে আরএফকিউ পদ্ধতিতে সিলিং অতিরিক্ত অনিয়মিত ব্যয় ৪২ লাখ ৬৩ হাজার ১০৬ টাকা, কর্মচারীগণের যাতায়াত ও আপ্যায়ন ভাতা বিধি বহির্ভূত পরিশোধ করায় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ৬৩৭ টাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত দোকানের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল অনাদায়ী ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৫৮৪ টাকা, অনুমোদিত সংশোধিত প্রাক্কলনে নির্ধারিত কাজের পরিমাণ অপেক্ষা অতিরিক্ত কাজের পরিমাণ গ্রহণ করে ঠিকাদারকে সরকারি তহবিল হতে বিল পরিশোধ করায় আর্থিক ক্ষতি ৬ লাখ ৩৫ হাজার ২৯৮ টাকা। সর্বমোট ৬৮ কোটি ৮ লাখ ৪৩ হাজার ৯৬৩ টাকার নিয়মবহির্ভূত খরচের প্রমাণ মিলেছে সিএজির অডিটে।

মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক পরিচালিত অডিট রিপোর্টের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের বলেন, অডিট আপত্তির বিষয়টি আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জানতে চাইবো। তারা যদি এ টাকা খরচের সুনির্দিষ্ট যুক্তি না দেখাতে পারেন তাহলে এটা ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় যাবে। যেখানে সিএজিও থাকবে। তারাসহ যদি এটার নিষ্পত্তি না হয় তাহলে এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে নিষ্পত্তির জন্য বসা হবে। সেখানেও যদি বিশ্ববিদ্যালয় এ টাকা খরচের যথাযথ কারণ না দেখাতে পারে তাহলে সংসদের ফাইন্যান্স কমিটিতে নিষ্পত্তির জন্য যাবে। যদি বিষয়টি নিষ্পত্তি না হয় তাহলে অবশ্যই এ টাকা ফেরত দিতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, অভিযোগের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এখন না দিলে পেনশন থেকে কাটা যাবে। বিশেষ করে গুরুতর আর্থিক অনিয়মের (এসএফআই) ক্ষেত্রে মাফ পাওয়ার সুযোগ নেই। হয়তো নন-এসএফআই বিভিন্নভাবে আমরা ছাড় দিতে পারি। এখন এটা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে যথাযথ যুক্ত হাজির করতে হবে নতুবা নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় ঠিক হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হিসাব কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ৬৮ কোটি টাকা অনিয়মের বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। কোনো বিষয়ে অডিট আপত্তি থাকলে আমরা জবাব দেবো। আমরা নিয়ম মেনেই কাজ করেছি। অডিট একটি রুটিন ওয়ার্ক। সরকারের পক্ষ থেকে অডিট পরিচালিত হয়। তারা বিভিন্ন পরামর্শ দেন। আমরাও সেগুলো আমলে নিয়ে কাজ পরিচালনা করে থাকি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ বলেন, অডিটে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অনিয়মের কথা বলা হয়েছে। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনেই এ টাকা খরচ করা হয়েছে। আমরা আমাদের নিয়মের ব্যাপারে সকল তথ্য সরকারকে জানাবো।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.