বেরোবি প্রতিনিধি: করোনাকালীন সময়ে মাত্র ১লক্ষ টাকা পুঁজি নিয়ে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসাইন এখন সফল উদ্যোক্তা।মাসে আয় দশ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
শাহাদাত হোসাইনের বাড়ি তারাগঞ্জ উপজেলায়। তিনি বেরোবি থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পূর্ণ করেছেন।শাহাদাত হোসাইনের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনে আমার মামার কাছ থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছি।তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন।দেখতাম মামা সবার খরচ চালানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। আমারও পড়াশোনায় যতটাকা লাগে উনিই দিতেন।
আমিও তখন মামাকে দেখে ভাবলাম আমি যদি চাকুরী করি সে ক্ষেত্রে আমি আমার স্ত্রী,সন্তানের দায়িত্ব নিতে পারবো।আর মা-বাবাকে তো দেখা লাগবেই।কিন্তু আমি আমার ভাগিনী,ভাতিজি ভাগিনা এদের দায়িত্ব তো নিতে পারবো না।
আর চাকুরীর ক্ষেত্রে সাধারণ জ্ঞান মুখস্থ করে চাকুরী নেওয়া লাগবে এটা আমার ভালো লাগে নাই।বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ এমবিএ শেষ করলাম। আবার কেনো আমি আরো পাঁচ বছর মুখস্থ পড়া পড়ে চাকরির পিছনে ছুটতে যাবো।মূলত সবার দায়িত্ব নিতে ও চাকরির ব্যবস্থাকে ভালো লাগে নাই এবং তৃতীয় সমাজের জন্য কিছু একটা করতে লাগবে।এখান থেকেই আমি তখন ভানলাম উদ্যোক্তা হবো।
শাহাদাত বলেন,যখন আমি দোকানে কোনো জিনিস কিনতে যেতাম তাদের পণ্য গুলো ভালো মানের ছিলো না আর একটা বিষয় আমি কোনো পণ্যের জন্য দামাদামি করতে পারতাম না।এসব দেখে আমার কাছে ত্রিশ হাজার টাকার মত ছিল আর মায়ের কাছ থেকে চল্লিশ-পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে প্রায় এক লক্ষ টাকা দিয়ে ব্যবসায় শুরু করি।
ক্রাফট ফান্ডিং এর মাধ্যমে সততাবিডি নামে একটা কোম্পানি দার করিয়েছি।এখানে বিনিয়োগ করার অপশন রেখেছি।অনেকে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।দিনদিন বিনিয়োগকারির সংখ্যা বাড়তেছে।এই কোম্পানিতে আমি একাই কাজ করি।কারণ আমি অন্যের জীবনের ঝুঁকি কেনো নিবো।আগে কোম্পানিকে দ্বার করবো তারপর এখানে অনেকে কাজ করার সুযোগ পাবে।তবে এক্ষেত্রে বিনিয়োগ কারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
সততাবিডি নাম রাখার পিছনে কারণ জানতে চাইলে তিনি বলে, আমি সততার সাথে ব্যবসা করতে চাই।কাস্টমারকে ঠকাতে চাই না।মানুষকে ঠকানোর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে চাই না এজন্য মূলত সততাবিডি নাম রাখা হয়েছে।
আপনার ক্রেতা কারা এবং বিনিয়োগ কারীদের মধ্যে কারা আছেন এমন প্রশ্নে শাহাদাত বলেন,কোচিং সেন্টার,বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাসহ সকল পেশার মানুষ এবং পুরো বাংলাদেশে অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য ডেলিভারি করে থাকি।আর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী,শিক্ষক সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।আর লভ্যাংশ কোম্পানির লাভের উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ কারীদের দেওয়া হয়।
তিনি বলেন,রংপুরের হাড়িয়াভাঙ্গা আম,বগুড়ার দই, শার্ট, টি-শার্ট, জার্সি,খেজুরের বিভিন্ন প্রকার খাঁটি গুড়।যেমন পাটালি গোল গুড়,পাটালি ফয়েল প্যাকেট গুড় ইত্যাদি।
আমার ফান্ডিং এর ঘাটতি রয়েছে।ফান্ড বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন প্রকার পণ্য যুক্ত করবো।সেটা করতে একটু সময় লাগবে।প্লান অনেক বড় তবে শুরু করা হয়েছে ছোট করে।
পরিবারের বাধা আছে কি না? শাহাদাত বলেন,পরিবারের বাধা তো আছেই চাকরি করবো না বলে অভিমান করে বের হয়ে চলে আসা লাগছে।আমি আমাদের দেশের চাকরি পাওয়ার যে প্রশ্নপদ্ধতি প্রচন্ড ঘৃণা করতাম তার অনেক কারন আছে।অবশ্য দোষটা আমাদের সমাজের কারন চাকরি চাকরি করে সবার মাথা খেয়েছে।মা অসুস্থ হলে তখন তখন বাড়িতে যাই কিন্তু কিছুক্ষণ থেকে চলে আসি আর ফোনে তেমন কথা হয় না। আমার মা-মামাকে অনেক ভালোবাসি
যারা নতুন উদ্যোক্তা হতে চান তাদের উদ্দেশ্যে শাহাদাত বলেন, আপনার প্যাশন কি বলে আপনার মন কি চায় সেটাকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং আপনি কোন বিষয়ে পারদর্শী কোন কাজটা করলে আপনাকে ভালো লাগে সেটাই করতে হবে।
এম কে পুলক আহমেদ/