The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪

১৭ দফা দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি

মোঃ রাহাদ আলী সরকারঃ গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী রাষ্ট্রীয় সংস্কারের অংশ হিসেবে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি এর শিক্ষার্থীরা।আজ ৩রা সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) ১১ ঘটিকায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মেঘনা ভবনের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়।

বিক্ষোভে তারা ১৭ দফা দাবি জানায়।

দাবি গুলো হচ্ছে :-
১। সকল শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি মোতাবেক, দ্রুততম সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান নাম পরিবর্তন করে “বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি” নামকরণ করতে প্রয়োজনীয় দাপ্তরিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। একই সাথে দ্রুততার সাথে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে হবে। এ বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে হবে।

২। অন্যান্য সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুপাতে ক্রেডিট ফি সমন্বয় করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের বিষয়ভিত্তিক ক্রেডিট ফি হ্রাস করে প্রতি ক্রেডিট পঞ্চাশ (৫০) টাকায় আনতে হবে। সেমিস্টার ফি সর্বোচ্চ ২৩০০ টাকা রাখতে হবে। এছাড়াও ডিগ্রি++ কোর্সগুলোর কোর্স ফি, ল্যাব ফি উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে হবে।

৩। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত অডিও ক্লিপ থেকে প্রমাণিত সরাসরি নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত মোঃ ইখতিয়ারুল হক, (সহকারী রেজিস্ট্রার), মোঃ আরিফুর রহমান খন্দকার(সেকশন অফিসার), মো: নুরুল আমিন (সহকারী রেজিস্ট্রার) এর অপসারণসহ দুর্নীতি করে নিয়োগ, নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগ ও পদোন্নতির সুষ্ঠু তদন্ত করে জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। ভবিষ্যতে সকল ধরনের নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে ওয়েটিং লিস্ট পাবলিশ না করে অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে শিক্ষার্থী ভর্তি করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিয়ে আসতে হবে।

৪। একটি অরাজনৈতিক, স্বতন্ত্র এবং সম্পূর্ণরুপে ছাত্রছাত্রী দ্বারা পরিচালিত ছাত্র সংসদ “বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন- মাকসু” গঠন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারক কমিটিগুলোতে (সিন্ডিকেট, সিনেট) উক্ত ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরকে স্থান দিয়ে তাদের যৌক্তিক মতামত প্রদানের সুযোগ দিতে হবে।

৫। যৌক্তিক/অসুস্থতার কোনো কারণে একটি পরীক্ষা দিতে না পারলে পুরো সেমিস্টার বাতিল করার পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার খাতায় একাডেমিক রোলের পরিবর্তে “এক্সাম রোল” চালু করতে হবে এবং প্রত্যেক সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল, পরীক্ষা শেষ হওয়ার দিন থেকে সর্বোচ্চ ৪ সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। পরীক্ষার ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটের নোটিশ পোর্টালে না দিয়ে BIMS সিস্টেম দ্বারা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিজস্ব আইডিতে দিতে হবে। সকলকে সেমিস্টার ভিত্তিক রেজাল্ট শীট প্রদান করতে হবে। পরীক্ষার ইমপ্রুভমেন্টে/মেকআপ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য নির্ধারিত CGPA বাড়াতে হবে। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ৩.০০ CGPA থেকে নূন্যতম ৩.৫০ পর্যন্ত বাড়াতে হবে। নিয়মানুযায়ী স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামগুলোতে স্নাতকে শেষ করে আসা কোর্স পুনরায় করতে বাধ্য করা যাবে না।

৬। সেমিস্টার শেষে টিচার্স ইভাল্যুয়েশন ফর্ম এর যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে এবং এর প্রেক্ষিতে শিক্ষকদের পরবর্তী সেমিস্টারে কোর্স প্রদান করতে হবে।

৭। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শুধুমাত্র শিক্ষকদের উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে বিদেশ পাঠানোয় উদ্যোগী না থেকে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত থাকার সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে অতি দ্রুত স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামসহ অন্যান্য শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক সুযোগ সুবিধার সূচনা করতে হবে। একই সাথে একজন অভিজ্ঞ একাডেমিশিয়ানকে প্রো-ভিসি পদে নিয়োগ দিতে হবে । ফ্যাকাল্টি/ডিপার্টমেন্ট এর উন্নতির জন্য ডীন, ডিপার্টমেন্ট হেডের ক্ষেত্রেও নৌবাহিনী থেকে নিয়োগ না দিয়ে একাডেমিশিয়ান নিয়োগের ক্ষেত্রে নজর দিতে হবে।

৮। যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ করে প্রতিটি ফ্যাকাল্টির শূন্য পদসমূহ দ্রুত পূরণ করতে হবে। এডজাঙ্কড ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের দ্বারা কোর্স পরিচালনা প্রয়োজনভেদে কমিয়ে আনতে হবে। নিয়োগকৃত গেস্ট ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের বিভিন্ন অনিয়ম, যেমন ৩ ক্রেডিটের কোর্সে সপ্তাহে তিন(৩) টি ক্লাসের পরিবর্তে এক (১) টি ক্লাস নেয়া, এক ক্লাসে এসে ৫-৬টি হাজিরা দেয়া, পুরো সেমিস্টার জুড়ে উদাসীন থেকে সেমিস্টারের শেষদিকে এসে জোরপূর্বক সিলেবাস শেষের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ ইত্যাদিসহ সকল অনিয়ম চিহ্নিত করে সেগুলো বন্ধ করতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
যুক্তিসঙ্গতভাবে কারিকুলাম সংশোধন করতে হবে, এডভান্সড কোর্স সংযুক্ত করতে হবে যা চাকরির ক্ষেত্রে সুবিধা দেয়। বিষয়ভিত্তিক দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।

৯। অপরিকল্পিতভাবে অতিরিক্ত ব্যাচ ভর্তি করানোর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বিন্ডিংয়েই পর্যাপ্ত ক্লাসরুমের অভাব ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। এ অভাব পূরণে নতুন বিল্ডিং ভাড়া করতে হবে এবং অপরিকল্পিতভাবে একটি শিক্ষাবর্ষে একের অধিক ব্যাচ ভর্তি বন্ধ করতে হবে। দ্রুততম সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ কাজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ও স্থায়ী ক্যাম্পাসে একামেডিক কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

১০। আবাসিক হলগুলোতে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি বলতে ডাবল বেডে একজনের মাথার উপর আরেকজনকে তুলে দেয়া নয়। পূর্ববর্তী সময়ের মত পর্যাপ্ত সিঙ্গেল সিটের ব্যবস্থা করতে হবে। উল্লেখ্য যে, ছাত্রী হলের সিট সংখ্যা খুবই অপর্যাপ্ত, তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ছাত্রীদের আবাসন নিশ্চিতের জন্য আরও একটি হল বরাদ্ধ দিতে হবে এবং সকলের পড়াশুনার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। হলের সিট ভাড়া সমন্বয় করে হ্রাস করতে হবে। এক্ষেত্রে হলের সিট ভাড়া সর্বোচ্চ ১০০০/- টাকা রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিগুলোতেও আসন ও বই এর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী একসাথে বসতে পারে।

১১। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়াগুলোতে ভর্তুকির অভাবে খাবারের দাম বেশি। ভার্সিটি কর্তৃক ভর্তুকি প্রদান করে শিক্ষার্থীদের জন্যে সুলভ মূল্যে খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে সকল হলের মিলে ন্যূনতম ৩৩% ভর্তূকীর ব্যবস্থা করতে হবে।

১২। প্রিপারেটরি লিভ, সেমিস্টার ব্রেকসহ যেকোনো একাডেমিক ছুটি থাকাকালীন এক্সট্রা ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট/টার্ম পেপার/ল্যাব রিপোর্ট সাবমিশন, ল্যাব ফাইনাল পরীক্ষা ইত্যাদি পরিচালনা করে শিক্ষার্থীদের কোনোরুপ হয়রানি করা যাবে না।

১৩। দুর্গাপুজার ছুটি কমপক্ষে ১০ দিন দিতে হবে, এবং দুর্গাপুজার সময় কোনো প্রকার পরীক্ষা, ফিল্ড ট্রিপ বা অন্য কোনো একাডেমিক কার্যক্রম যা ইতোপূর্বে রাখা হয়েছিলো কোনোভাবেই তার পুনরাবৃত্তি করা যাবে না। সম্পূর্ণ রমজান মাসে অনলাইনে ক্লাস নিতে হবে। রমজান মাসে ফাইনাল পরীক্ষা রাখা যাবে না।

১৪। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ও আবাসিক হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিরত কোনো কর্মচারী কর্তৃক শিক্ষার্থীরা যদি কোনোরুপ অশোভনীয় আচরণের স্বীকার হয় তা দ্রুততম সময়ে বিবেচনায় আনতে হবে এবং যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

১৫। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম ও সুযোগ-সুবিধা নীতিগত সর্বোপরি শিক্ষার্থী বান্ধব- এই চেতনা ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্থরে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

১৬। সরকারি বেসরকারি মেরিটাইম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকারের জন্য দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। মেরিটাইম সেক্টর ভিত্তিক ওইসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেরিটাইম সংশ্লিষ্ট প্রশ্নপত্র প্রণয়নের জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। স্নাতক/স্নাতকোত্তর শেষে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে হবে।

১৭. ফ্যাকাল্টি, ডিপার্টমেন্ট এবং আবাসিক হলে উদ্ভুত যৌক্তিক দাবিগুলো স্ব স্ব ডিন, ডিপার্টমেন্ট হেড, প্রোভোস্ট কর্তৃক সমাধানের আশ্বাস দিতে হবে।

বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা জানায় যথাযথ কতৃপক্ষকে তাদের দাবি শুনতে হবে এবং এ ব্যাপারে পরবর্তী দুই কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত আকারে জানাতে হবে।অন্যথায় তারা সকল ধরনের ক্লাস পরিক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.