The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪

১৪তম জুডিশিয়ারির মৌখিক পরীক্ষা একটি গোছানো প্রস্তুতি স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে

২০ মার্চ শুরু হতে যাচ্ছে ১৪তম জুডিশিয়ারির মৌখিক পরীক্ষা। এটি চলবে প্রায় এক মাসব্যাপী। ১০০টি পদের বিপরীতে ৬৩৭ জন লিখিত উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থী মৌখিক দেবেন। অন্যান্য প্রথম শ্রেণির চাকরির ভাইভার সঙ্গে জুডিশিয়ারির ভাইভার পার্থক্য হচ্ছে ফলাফলের ক্ষেত্রে এখানে কোনো ওয়েটিং লিস্ট কিংবা আলাদা ক্যাডার, নন-ক্যাডার লিস্ট হয় না। যতজন নিয়োগ পাবেন, ঠিক ততজনেরই ফল প্রকাশ করা হয়। একটি গোছানো ভাইভা প্রস্তুতি ও চমৎকার উপস্থাপন আপনার বিচারক হওয়ার লালিত স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

ভাইভার বিজ্ঞপ্তিতে যেসব কাগজপত্র দাখিলের কথা বলা আছে, পরীক্ষার দিনের অন্তত এক সপ্তাহ আগেই সেগুলো ঠিকঠাকভাবে গুছিয়ে রাখা উচিত। ভাইভা বোর্ডের অনুমতি নিয়ে ধীরস্থিরভাবে ভাইভা কক্ষে প্রবেশ করতে হবে। লিখিত ও ভাইভার নম্বর মিলিয়েই ফলাফল প্রকাশিত হয়। লিখিত পরীক্ষায় পাস করে আসা অবশ্যই আপনার যোগ্যতার পরিচয় বহন করে। তাই ঠান্ডা মাথায় প্রতিটি প্রশ্ন শুনে ও বুঝে উত্তর করতে হবে। একেবারে নিশ্চিত না হয়ে কিংবা আন্দাজে কোনো প্রশ্নের উত্তর করতে যাওয়া অনুচিত। প্রশ্নের উত্তর না পারলে বিনয়ের সঙ্গে ‘দুঃখিত’ বলাটাই শ্রেয়।

ভাইভা পরীক্ষার নির্ধারিত কোনো সিলেবাস নেই। প্রশ্নকর্তা যেকোনো প্রশ্নই আপনাকে করতে পারেন। তবে অধিকাংশ প্রশ্নই হবে আইনবিষয়ক। এ ক্ষেত্রে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসে থাকা সব কটি আইনের ওপর সম্যক দক্ষতা থাকা বাঞ্ছনীয়। বিভিন্ন আইন কিংবা ধারার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, ধারাগুলোর বাস্তবিক জীবনে ব্যবহার, ভিন্ন ভিন্ন আইন অনুসারে মামলার ধাপগুলো সম্পর্কে প্রশ্ন হতে পারে। সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ এবং মামলা, বিভিন্ন ইস্যুতে সাম্প্রতিক সাড়া জাগানো উচ্চ আদালতের রায়, সাম্প্রতিক সময়ে প্রণীত নতুন আইন কিংবা সংশোধনীগুলোর ওপর ভালো দখল থাকাটা জরুরি। ভাইভা প্রার্থীদের মধ্যে যাঁরা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে জড়িত আছেন, তাঁরা নিজ নিজ পেশা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন। এই ধরুন, আপনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হন, তাহলে যে বিষয়ে পড়িয়ে থাকেন, সেটি নিয়ে প্রশ্ন করা হতে পারে। ভাইভা বোর্ড বিভিন্ন ছোট ঘটনা বর্ণনা করে আইনি সমস্যার সমাধান চাইতে পারেন আপনার কাছ থেকে। আপনার উত্তর শুনেই ভাইভা বোর্ড আপনার বিচারিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে ধারণা পাবেন। পূর্ববর্তী প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নোত্তরগুলোর ওপর দখল রাখা জরুরি।

নিজ নাম, জেলা, জেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি-স্থাপনা-ইতিহাস, নিজ বিশ্ববিদ্যালয়, হল ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যাবেন। প্রশ্নকর্তা যে ভাষায় প্রশ্ন করবেন, সে ভাষাতেই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। আইনের বাইরে জাতীয় ইতিহাস, দেশভাগ থেকে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্য, সমসাময়িক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিক্রমা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন হতে পারে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।

আপনি কেন বিচারক হতে চান কিংবা বিচার করতে গিয়ে আপনি সহানুভূতিশীল হবেন না কঠোর হবেন—এ ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে কোনো গৎবাঁধা মুখস্থ উত্তর না দিয়ে নিজের মতো করে মতামত দেওয়াটাই উচিত হবে। ভাইভা বোর্ডের লক্ষ্য থাকবে, আপনার মধ্যে বিচারক হওয়ার মতো চারিত্রিক ও মানসিক দৃঢ়তা আছে কি না, তা যাচাই করা। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা কিংবা ভীতি না রেখে নিজের স্বাভাবিক আচরণ বজায় রেখে উত্তর করতে পারলেই সাফল্য আশা করা যায়। আপনার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু বজায় রাখুন, বাকিটা সৃষ্টিকর্তা ও ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল।

আমার ভাইভা অভিজ্ঞতা যেমন ছিল

ভাইভা বোর্ড-১

সময়: ২০-২৫ মিনিট

কক্ষে ঢুকে ঠিকঠাক বসে মাইক্রোফোন অন করে সালাম দিলাম। নাম, গ্রামের বাড়ি ইত্যাদি খুঁটিনাটি বিষয়ে প্রশ্নের পর চেয়ারম্যান স্যার আইনের প্রশ্ন শুরু করলেন একটা ফ্যাক্ট বর্ণনা করে।

চেয়ারম্যান: ধরুন, আপনার গ্রামের বাড়িতে ময়মনসিংহ থেকে একজন লোক কাজ করতে এলেন। কিছুদিন পর স্থানীয় কয়েক ছেলের ছুরিকাঘাতে তাঁর মৃত্যু হলো। যারা খুন করেছে, তারা নিজেরাই থানায় এফআইআর করল অন্য চার-পাঁচজনকে আসামি করে। ঘটনার এক মাস পর ভুক্তভোগীর বাবা আপনার গ্রামে এসে প্রকৃত অপরাধীদের আসামি করে এফআইআর করতে চেয়ে ব্যর্থ হলো। ভদ্রলোক ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে কি অভিযোগ করতে পারবেন? আর এফআইআরের তদন্ত চলাকালে কমপ্লেইন্ট করলে কোন মামলা আগে চলবে, এটা নিয়ে সিআরপিসিতে কোথায় বলা আছে?

আমি: স্যার, পারবেন অভিযোগ করতে। সেকশন ২০৫ডিতে বলা আছে।

চেয়ারম্যান: রিট কয় প্রকার? সংবিধানে কি রিটের প্রকারভেদ ডিরেক্টলি করা আছে?

আমি: না স্যার, তবে ১০২ (২) অনুচ্ছেদে ৫ ধরনের রিটের আলোচনা আছে নাম উল্লেখ না করে।

চেয়ারম্যান: বলেন তো ৫টি রিটের উল্লেখ কোন অনুচ্ছেদে কীভাবে আছে।

আমি: ১০২ অনুচ্ছেদ ব্যাখ্যা করলাম।

বোর্ড মেম্বার ২: ক্রিমিনাল মামলার ট্রায়াল শেষ করার তো ফিক্সড সময় বলা আছে, সিভিল মামলার ক্ষেত্রে ফিক্সড করা আছে?

আমি: স্যার, ফিক্সড করা নেই।

মেম্বার ২: আছে, অর্ডার ১৮-তে বলা আছে।

আমি: সরি স্যার, আমার এ ব্যাপারে জানা ছিল না।

চেয়ারম্যান: নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সম্প্রতি সংশোধনীগুলো বলুন।

আমি: বিস্তারিত বললাম।

মেম্বার ২: ইভ টিজিং মামলা কোন আইনে করা হবে?

আমি: স্যার, পেনাল কোডেও বিধান আছে। তবে এখন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা হয়।

চেয়ারম্যান: ধর্ষণসহ খুনের মামলায় নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ধর্ষণের প্রমাণ পেলেন না, তবে খুনের প্রমাণ পেলেন। এখন কি খুনের জন্য আলাদা মামলা করা লাগবে নতুন করে পেনাল কোড অনুসারে নাকি ট্রাইব্যুনালই বিচার করতে পারবে?

আমি: স্যার, নতুন মামলা করা লাগবে না, ট্রাইব্যুনালই পারবে।

চেয়ারম্যান: কোথায় বলা আছে? কোনো কেস রেফারেন্স দিতে পারবেন?

আমি: স্যার, সেকশন ২৭, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন। কিছু কেস পড়েছিলাম এ ব্যাপারে, এখন মনে পড়ছে না।

চেয়ারম্যান: আচ্ছা মুসতানসীর সাহেব, একজন বিচারকের কী কী গুণ থাকা উচিত বলে মনে করেন?

আমি: পরিশ্রম, সততা, সমাজসচেতনতা, সিমপ্যাথেটিক থাকা।

চেয়ারম্যান: এর মধ্যে কোন গুণটি আপনার নেই?

আমি: স্যার, আমি তুলনামূলক কম পরিশ্রমী।

চেয়ারম্যান: (হাসতে হাসতে) আপনার নিজের বলা গুণই আপনার মধ্যে নেই, আপনাকে কি নিয়োগ দেওয়া ঠিক হবে?

আমি: স্যার, আসলে কোনো কাজের টার্গেট থাকলে নিজস্ব একটা প্ল্যানিংয়ে কাজটা করে ফেলি, তাই কম পরিশ্রমে কাজ হয়ে যায়।

চেয়ারম্যান: আচ্ছা বলেন, জাজ হওয়াই লাগবে—এ চিন্তা কবে এসেছে? কারণ কী?

আমি: নিজস্ব উত্তর দিয়েছিলাম।

মেম্বার: আপনি এবার আসতে পারেন, ধন্যবাদ আপনাকে।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.