দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দুই সপ্তাহের জন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুরোপুরি বন্ধ না হলেও অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষার পথে হাঁটছে। তবে আবাসিক হলগুলো খোলাই থাকছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রজ্ঞান জারির পর ইতোমধ্যে ১০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। আবাসিক হল খোলা রেখে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও একই পথে হাঁটার পরিকল্পনা করেছে।
সিদ্ধান্ত না জানানো একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের এই সিদ্ধান্তের সাথে মিল রেখে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। তবে এখনই আবাসিক হল বন্ধের চিন্তাভাবনা নেই তাদের।
এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, শিক্ষার্থীরা বাড়িতে গেলেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। এছাড়া গ্রামে ইন্টারনেট সংযোগ তেমন একটা ভালো না। অনেক শিক্ষার্থীর ভালো মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ নেই। যার ফলে গ্রামে গিয়ে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে সমস্যায় পড়তে পারেন। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় আবাসিক জল খোলা রেখে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রজ্ঞাপন জারির পূর্বে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্কুল-কলেজ বন্ধে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এর কিছুক্ষণ পর এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনুরূপ সিদ্ধান্ত নেবে। এমন প্রজ্ঞাপনের পর জরুরি ভিত্তিতে ১০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিলের সভা আয়োজন করে।
প্রজ্ঞাপন জারির পর সবার আগে নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানায়, মন্ত্রিপরিষদ থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের আলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সহযোগিতায় অব্যাহত থাকবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। শুক্রবার একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা শেষে বৈঠক শেষে জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, করোনার বিরূপ পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১৪ দিনের ছুটির সিদ্ধান্তের বিষয়টি বিবেচনা করে এই জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে সশরীরে ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আবাসিক হলগুলো খোলা থাকবে।
সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষাগুলো সশরীরেই নেবে। শুক্রবার রাতে এক নোটিশের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। তবে ক্লাসগুলো অনলাইনে চলবে। দুই সপ্তাহ পরে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যেসকল বিভাগে পরীক্ষা আছে সেগুলো নিয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান ও ডীনদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।