স্মার্টফোনের ব্যাটারি পুরো চার্জ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। ক্লাস শেষে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে যখন বাসে উঠলেন, তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা প্রায়। বাসে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য পকেট থেকে স্মার্টফোন বের করেই চমকে উঠলেন তিনি। স্মার্টফোনের ব্যাটারি প্রায় শেষের পথে। কিন্তু তিনি তো আজ বেশি সময় স্মার্টফোনে কথা বলেননি, ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করেছিলেন কেবল। তাহলে ব্যাটারি শেষ হলো কীভাবে? মোস্তাফিজুরের মতো এ সমস্যা আমাদের অনেকেরই হয়। কারণ আর কিছুই নয়, আমাদের স্মার্টফোনে থাকা অ্যাপগুলোই গোপনে শেষ করে দেয় ব্যাটারির চার্জ । এমনকি চালু না থাকলেও ঠিকই ব্যাটারি খরচ করতে থাকে অ্যাপগুলো। স্মার্টফোনে বেশি ব্যাটারি খরচ করা অ্যাপগুলোর পরিচয় জেনে নিন।
স্ন্যাপচ্যাট
স্ন্যাপচ্যাট অ্যাপ আমরা অনেকেই ব্যবহার করি। কিন্তু আপনি জানেন কি, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপটি স্মার্টফোনের ব্যাটারি ধীরে ধীরে শেষ করে ফেলে। এমনকি ব্যবহার না করলেও গোপনে কাজ করতে থাকে। আপনার অবস্থানের তথ্য সংগ্রহ করে হালনাগাদ নোটিফিকেশন বার্তা জানান দিতেই এমনটি করে অ্যাপটি। শুধু তা-ই নয়, আপনাকে না জানিয়েই নিয়মিত হালনাগাদ হতে থাকে। ফলে ব্যাটারি দ্রুত খরচ হয়। এ ছাড়া বার্তা বিনিময় ও ভিডিও দেখানোর জন্য স্মার্টফোনের ব্যাটারি বেশি খরচ করে অ্যাপটি।
নেটফ্লিক্স এবং ইউটিউব
যেকোনো ভিডিও অ্যাপ ব্যবহারের সময় ব্যাটারি বেশি খরচ হয়। ব্যাটারি বেশি খরচ করা অ্যাপগুলোর তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে নেটফ্লিক্স। নতুন সিনেমা বা সিরিজের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহের জন্যও সব সময় স্মার্টফোনে চালু থাকে নেটফ্লিক্স অ্যাপ। ফলে স্মার্টফোনের ব্যাটারি বেশি খরচ হয়।
ইন্টারনেটের গতি বেশি থাকায় অনেকেই ইউটিউবে দীর্ঘক্ষণ ভিডিও দেখেন। কিন্তু অনলাইন থেকে সরাসরি ভিডিও প্রদর্শন করায় স্মার্টফোনের ব্যাটারি দ্রুত শেষ করে ইউটিউব। তবে ইউটিউব ব্যবহারের সময় কমিয়ে ব্যাটারি বাঁচানো সম্ভব। ইউটিউবের Remind me to take a break ফিচারটি ব্যবহার করে স্মার্টফোনের ব্যাটারি বাঁচানোর সুযোগ মিলে থাকে।
ফেসবুক
বার্তা বিনিময়ের পাশাপাশি আমরা প্রায় সবাই ফেসবুকে ভিডিও দেখে থাকি। এতে তুলনামূলক বেশি ব্যাটারি খরচ হয়। তবে ফেসবুক অ্যাপের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, এটি আপনার অজান্তেই স্মার্টফোনে চালু থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে। পাশাপাশি নিজেদের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার মালিকানাধীন অন্যান্য অ্যাপের সঙ্গেও যুক্ত থাকে। ফলে দ্রুত ব্যাটারি খরচ হয়। তবে ফেসবুক লাইট অ্যাপ ব্যবহার করে ব্যাটারি খরচ কিছুটা কমানো যায়।
মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ
মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ অন্য মেসেজিং অ্যাপ থেকে সবচেয়ে বেশি ব্যাটারি খরচ করে। কারণ, ফেসবুকের মতো মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপও গোপনে সব সময় স্মার্টফোনে চালু থাকে। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন অ্যাপ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে।
ভিপিএন অ্যাপ
অনলাইনে বিভিন্ন প্রয়োজনে অনেকেই ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) অ্যাপ ব্যবহার করেন। ভিপিএন অ্যাপও গোপনে সব সময় চালু থাকে। ফলে স্মার্টফোনের ব্যাটারি দ্রুত খরচ হয়।
গেম
স্মার্টফোনে গেম খেললে ব্যাটারি খরচ বেশি হয়, এ তথ্য সবারই জানা। মূলত গেম খেলার সময় স্মার্টফোনের স্পিকার, গ্রাফিকস, টাচস্ক্রিন বেশি ব্যবহারের কারণেই ব্যাটারি বেশি খরচ হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন গেম অনলাইন থেকে বিভিন্ন তথ্যও সংগ্রহ করতে থাকে। ফলে ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যায়
টিকটক
টিকটকে ভিডিও দেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় পার করেন অনেকেই। ভিডিও দেখার পাশাপাশি ভিডিও ধারণের সুযোগ থাকায় অ্যাপটি অনেক বেশি ব্যাটারি খরচ করে। শুধু তা-ই নয়, ব্যবহারকারীদের অবস্থান ও আগ্রহ অনুযায়ী ভিডিও দেখাতে স্মার্টফোনে চালু থাকে অ্যাপটি।
ব্যাটারি বুস্টার
অনেকেই ব্যাটারির ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ব্যাটারি বুস্টার অ্যাপ ব্যবহার করেন। অ্যাপটি ডাউনলোড করার পর স্মার্টফোনে থাকা অন্য অ্যাপগুলোকে গোপনে চালু হতে বাধা দেয়। কিন্তু এ কাজ করার জন্য নিজেই সব সময় চালু থেকে ব্যাটারি খরচ করতে থাকে।
মাইক্রোসফট আউটলুক
দৈনন্দিন জীবনে খুব দরকারি অ্যাপ হলেও ব্যাটারি খরচ করা অ্যাপের তালিকায় মাইক্রোসফট আউটলুকও রয়েছে। অনলাইনে নিয়মিত হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করায় অ্যাপটি ব্যাটারির খরচ বেশি করে।
কেনাকাটার অ্যাপ
অনলাইনে কেনাকাটা করার জন্য বিভিন্ন শপিং অ্যাপে ঢুঁ মারেন অনেকেই। অ্যাপগুলো ক্রেতাদের সামনে বিভিন্ন অফার ও ছাড়ের তথ্য তুলে ধরতে সব সময় অনলাইনে যুক্ত থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে, ফলে ব্যাটারির খরচ তুলনামূলক বেশি হয়।