ক্ষমতার অপব্যবহার, নিয়োগ বাণিজ্য, ঘুস, অর্থপাচার ও দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, ছেলে শাফি মোদ্দাছির খান, মেয়ে শাফিয়া তাসনিম খান এবং কামালের এপিএস মনির হোসেনের বিরুদ্ধে ৫টি পৃথক মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার দুদকের কর্মকর্তারা ঢাকা জেলা কার্যালয়ে এসব মামলা দায়ের করেন। আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগ করা হয়েছে।
দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-১ বিভাগের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মানি লন্ডারিং, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যসহ বিভিন্ন উপায়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। তার ৮টি ব্যাংক হিসাবে ৫৫ কোটি ৯২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৩৬ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য রয়েছে দুদকের হাতে। অবৈধ উপায়ে অর্জিত এসব সম্পদ গোপন বা আড়াল করার জন্য রূপান্তর, হস্তান্তর করার অভিযোগে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
লুৎফুল তাহমিনা খান ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে অপর ১০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৪৩ কোটি ৭৭ লাখ ৭৪৫ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুদক। এ অভিযোগে তাদের দুই জনকে আসামি করে দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বাদী হয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দায়ের করেন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ছেলে শাফি মোদ্দাছির খান জ্যোতির বিরুদ্ধে তৃতীয় মামলাটি দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। ওই মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ৮৪ কোটি ৭৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭২ টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর, স্থানান্তরের মাধ্যমে সন্দেহজনক লেনদেন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মেয়ে শাফিয়া তাসনিম খানসহ আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে চতুর্থ মামলাটি দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জিন্নাতুল ইসলাম। এ মামলার এজাহারে বলা হয়, বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ২৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার ৫৪২ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করা হয়।
আসাদুজ্জামান খান কামালের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) মনির হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন। মনির হোসেনের ১২টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৩১ কোটি ৩১ লাখ ৭০ হাজার ৮৩৪ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুদক।
অভিযোগে বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান খান কামাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে ঘুস হিসেবে বস্তা বস্তা টাকা নিতেন। পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস থেকে এই টাকা সংগ্রহ করা হতো। এজন্য তিনি তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ড. হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন।
এর আগে গত ১৫ আগস্ট দুদক কামাল ও তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে নিয়োগ-পদোন্নতি কিংবা বদলিতে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। অনুসন্ধান শুরু হওয়া পর আজ এসব মামলা দায়ের করা হয়।
২১ আগস্ট কামালের পরিবার ও তার সাবেক পিএসসহ আটজনের ব্যাংক হিসাবের লেনদেনের তথ্য তলব করে দুদক। এছাড়া ১ সেপ্টেম্বর কামাল এবং তার স্ত্রী, মেয়েসহ ১০ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
উল্লেখ্য ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আসাদুজ্জামান আত্মগোপনে রয়েছেন।