পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ও র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের স্ত্রীর নামে মাত্র দুই বছরে প্রায় ৯০ একর জমি কেনা হয়েছে! বেনজির আহমেদের কাছে জমি বিক্রি করা অনেকেই জোর জবরদস্তির শিকার হয়েছেন। কেউ কেউ জমি না দেয়ায় নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগও করেছেন। এখন এই বিষয়ে মুখ খুলছেন ভুক্তভোগীরা।
গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরের সীমানাবর্তী রাজৈর উপজেলা। বেনজীর অবসরে যাওয়ার একমাস আগ পর্যন্ত মাত্র দুই বছরে এখানে প্রায় ৯০ একর জমি কেনা হয়েছে তার স্ত্রী জিশান মীর্জার নামে। ১১৩টি দলিলে কেনা এসব জমির বেশির ভাগই ফসলি। এতো জমি কেনার টাকা জোগান দিতে দুর্নীতি হয়েছে কি না তা জানতে সাবেক আইজিপিকে সপরিবারের হাজির হতে তলব করেছে দুদক।
আর এই সুযোগে নিজেদের উপর হওয়া জবরদস্তির বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন রাজৈরের ভুক্তভোগীরা। তাদের অভিযোগ স্ত্রীর নামে জোর করে ফসলি জমি লিখে নিয়েছেন বেনজির আহমেদ। আর এতে সহায়তা করেছেন তৈয়ব আলী নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। জমি লিখে না দিলে নির্যাতনের শিকারও হতে হয়েছে অনেককে। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে সম্পত্তি ক্রোকের খবরে স্বস্তি ফিরলেও কাটেনি জমির মালিকদের আতঙ্ক।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জমির মালিকদের অভিযোগ, রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের সাতপাড় ডুমুরিয়া মৌজা, নটাখোলা ও বড়খোলা এলাকার ফসলি জমি জোরপূর্বক কিনে নেন বেনজীর আহম্মেদ।
রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের আড়য়াকান্দি গ্রামের ভাষারাম সেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘২৪ একর ৮৩ শতাংশ ফসলি জমি আমাদের বংশীয় লোকদের। এই জমি সবটুকুই কিনে নেন সাবেক পুলিশ প্রধান। বিঘা প্রতি সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়েছেন। প্রায় দুই বছর আগে ভয়ভীতি দেখিয়ে এই জমি নেন বেনজীর আহম্মেদ ও তার পরিবার। প্রথমে চারদিক থেকে জমি কিনে নেন তিনি, মাঝখানে আমাদের জমি থাকায় সেটা লিখে দিতে বাধ্য করেন।’
সাতপাড় ডুমুরিয়া গ্রামের স্বরস্বতী রায় নামে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা জমি দিতে চাইনি। ভয় দেখিতে জমি লিখে নেন বেনজীর আহম্মেদ। এই জমিতে ফসল হতো, লিখে নেয়ায় আমাদের চাষাবাদ করার আর কোনও সুযোগ নেই। এই ফসলি জমিটুকু অনেক কষ্টে ধরে রাখছিলাম, কিন্তু সেটার আর শেষ রক্ষা হলো না।’
বড়খোলা গ্রামের বাসিন্দা রসময় বিশ্বাস গণমাধ্যমকে জানান, সাবেক পুলিশ প্রধান আমাদের কাছ থেকে ৩২ শতাংশ জমি নিয়েছেন। তার পরিবারের সদস্যদের নামে কবলা দিয়েছে।
কদমবাড়ির সুকবেদ বালার ছেলে অমল বালা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের হুমকি-ধামকি দিয়েছেন বেনজীর আহম্মেদ। তার লোক দিয়ে বলেছেন, জমি লিখে না দিলে বিমানে করে বাড়িতে নামতে হবে। চারপাশ আটকে দেবেন। এমন অত্যাচারে অনেকেই জমি লিখে দিয়েছেন।’
মাদারীপুর আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, জোরপূর্বক কারও সম্পত্তি লিখে নেয়া ফৌজদারি অপরাধ। ভুক্তভোগীরা চাইলে মামলা করতে পারেন। আর সাবেক পুলিশ প্রধানের পরিবারের নামে এতো সম্পত্তি কেনা নজিরবিহীন। এই ঘটনায় দলিল গ্রহীতাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক। এছাড়া প্রান্তিক কৃষকদের জমি তাদের ফিরিয়ে দেয়া হোক।’
মাদারীপুরের সামাজিক আন্দোলন ‘বিশ্লেষণ’ এর নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাবেক আইজিপির বাড়ি গোপালগঞ্জে। কিন্তু মাদারীপুরে বিপুল পরিমাণে সম্পত্তি কেনা জেলাবাসীকে অবাক করেছে। জমির মূল্য দিলেও কাউকে ভয় দেখিয়ে ফসলি জমি লিখে নেয়া চরম অন্যায় কাজ। এর বিচার হওয়া উচিৎ।’