শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি শুরুর আগেই বড় ধরনের অনিয়মে জড়িয়েছে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদিত পদের বাইরে অতিরিক্ত ১০৯ জনকে নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অস্থায়ীভাবে দেওয়া এসব নিয়োগে উপাচার্যের আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু ক্ষমতাসীন দলের একাধিক সাংসদের স্বজনেরা রয়েছেন। এমনকি উচ্চশিক্ষার অনিয়ম বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্বে থাকা ইউজিসির কর্মকর্তাদের সুপারিশেও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষদে বেআইনিভাবে আটজনকে ডিন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে ইউজিসির তদন্তেই। ইউজিসির তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছে, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ীভাবে (অ্যাডহক) যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মেয়াদ আর না বাড়ানো, অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পাওয়ার পরও নীতিমালা লঙ্ঘন করে যাঁদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তা বাতিল করা এবং পদোন্নতির পর পাওয়া অতিরিক্ত বেতন-ভাতার অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দেওয়া।
এবারই প্রথম ইউজিসি তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়নি। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছে ইউজিসি। এ চিঠিতে অনিয়ম বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী বা অস্থায়ী পদে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে ইউজিসির প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা সদস্যকে এবং কর্মকর্তা–কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডে ইউজিসির সচিবকে পর্যবেক্ষক হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কমিটির সদস্য ও ইউজিসির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফেরদৌস জামান।
২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রতিষ্ঠিত হয় স্নাতকোত্তর চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এটি দেশের চতুর্থ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৮ সালের নভেম্বরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়টির নিজস্ব ক্যাম্পাস হয়নি। সিলেট শহরের চৌহাট্টা এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য শহরের পাশে দক্ষিণ সুরমা এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠার পর গত বছরের নভেম্বরে ইউজিসি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ইউজিসি ১৭ জানুয়ারি উপাচার্যকে চিঠি দিয়ে বলেছে অস্থায়ীভাবে আর কোনো নিয়োগ না দেওয়া। আর যেসব পদে ইতিমধ্যে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের চাকরির মেয়াদ আর না বাড়িয়ে ইউজিসির অনুমোদিত পদের বিপরীতে উন্মুক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, কলেজ পরিদর্শক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরিচালক (অর্থ ও হিসাব বিভাগ), পরিচালকসহ (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) গুরুত্বপূর্ণ পদে উন্মুক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দিতে বলে ইউজিসি। এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে অস্থায়ী, খণ্ডকালীন, অতিরিক্ত দায়িত্ব বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ গ্রহণযোগ্য নয়।