পাসওয়ার্ড না থাকায় বহুল আ’লোচিত ই-কমা’র্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সার্ভা’র খুলতে পারেননি আ’দালতের গঠিত শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের পর্ষদ। তবে নতুন বোর্ড গঠনের এক সপ্তাহের মধ্যে সার্ভা’র চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বলা হয়েছে, শিগগিরই চালু হবে সার্ভা’র। অনলাইনে পণ্য অর্ডার করতে পারবেন গ্রাহক। পাশাপাশি এসক্রোতে আ’ট’কে থাকা টাকা আগামী ১ নভেম্বর থেকে রিফান্ড হবে।
প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন পুনরায় দায়িত্ব নেওয়ার পর পরবর্তী কার্যক্রম নিয়ে এসব পদক্ষেপের কথা জানানো হয়েছে।
সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে একটি পোস্ট দেওয়ার পর ইভ্যালির সংশ্লিষ্ট একজন এ তথ্য সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের পর্ষদ অনেক চেষ্টা করেও পার্সওয়াড না থাকায় ইভ্যালির সার্ভা’র খুলতে পারেনি। জে’লে থাকা প্রতিষ্ঠানের সাবেক সিইও মোহাম্ম’দ রাসেলের কাছে পার্সওয়াড চাইলে ভুলে গেছেন বলে জানান। ফলে কোনোভাবেই সার্ভা’রটি খুলতে পারেনি মানিকের পর্ষদ। এ কারণে গ্রাহকদের পাওনা এবং সম্পদের তথ্যও পুরোপুরি পায়নি অডিট ফার্ম।
ইভ্যালির পরবর্তী পদক্ষেপগুলো মধ্যে রয়েছে
আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সার্ভা’র চালু হবে।
আগামী ১ নভেম্বরের মধ্যেই জুন ২০২১ থেকে যে টাকাগুলো এসক্রোতে আছে সেগুলো রিফান্ড হওয়া শুরু হবে।
এর মধ্যে এসএসএল কর্মাসের ব্যাংক ডিপোজিট টাকাগুলো ১-৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিফান্ড হবে।
মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বিকাশ, রকেটসহ সব মোবাইল ব্যাংকিংয়ের টাকাগুলো ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই রিফান্ড হবে। তবে নগদ গেটওয়ের রিফান্ড পেতে একটু সময় লাগবে, সেটি ১৫ নভেম্বর থেকে আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগবে।
যাদের অর্ডার ৩০ জানুয়ারি ২০২১ এর আগে তাদের টাকা রিফান্ড হতে সময় লাগবে এখন থেকে আরো ১২ মাস।
আর যাদের অর্ডার ৩০ জানুয়ারি ২০২১ থেকে ৬ জুন ২০২১ তাদের টাকা রিফান্ড হতে সময় লাগবে এখন থেকে আরো ১৮ মাস।
যাদের ইভ্যালি থেকে দেওয়া রিফান্ডের চেক আছে এবং যেহেতু চেকের সময় ৬ মাস পেরিয়ে গেছে তাদের চেক-কে বলা হয় স্টেল বা বাসি চেক। কোনো চেক যখন উল্লেখিত তারিখের ৬ মাস বা ১৮০ দিন পরে ব্যাংকে উপস্থাপন করা হয় তখন তাকে স্টেল চেক বলে। এ ধরনের চেকের বিপরীতে ব্যাংক কখনো টাকা দেয় না। আর তাই ইভ্যালি কর্তৃপক্ষ সেই চেকগুলো আবার ফেরত নেবে।
পোস্টে জানানো হয়েছে, সর্বোচ্চ ১৮ মাসের মধ্যেই সব দেনা পরিশোধ করবে ইভ্যালি। তাই আস্থা রাখু’ন ইভ্যালির প্রতি। আর নিয়মিত অর্ডার করার প্রস্তুতি নিন। কেননা এখন টাকা কোথাও যাওয়ার কোনো কোনো স্কোপ নেই।
প্রথম তাদের বিজনেস মডেল হবে COD (Cash On Delivery), অর্থাৎ পণ্য হাতে পেয়ে মূল্য পরিশোধ এবং PnP (Pick And Pay), মানে পণ্য পিকাপ পয়েন্ট থেকে সংগ্রহ করে মূল্য পরিশোধ। এই দুটো সিস্টেম চলতেই থাকবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করে ইভ্যালি। শুরুর পর থেকেই গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে দেওয়া হয় একের পর এক আকর্ষণীয় অফার। ইভ্যালির এমন অবিশ্বা’স্য অফার নিয়ে শুরুতে ব্যাপক সমালোচনা হয়। সমালোচনা থাকলেও গ্রাহকরা সেই অবিশ্বা’স্য অফারে ঝুঁকে পড়ে। তড়িৎ গতিতে বাড়তে থাকে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়।
বাইক, ফ্রিজ, ফার্নিচারসহ যাবতীয় সব পণ্যে মূল্য ছাড়ের ছড়াছড়ি চলে ইভ্যালিতে। গ্রাহকরাও এমন মূল্য ছাড়ে হু’মড়ি খেয়ে পড়ে। শুরুতে রম’রমা ব্যবসা করে ইভ্যালি।
আগে টাকা পরে পণ্য ডেলিভা’রি দিলেও শুরুতে গ্রাহকদের কোনো অ’ভিযোগ ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে যখন পণ্য ডেলিভা’রির সময় দীর্ঘ হতে থাকে এরপরই গ্রাহকদের কাছ থেকে আসতে থাকে একের পর এক অ’ভিযোগ। অ’ভিযোগের মাত্রা দিনের পর দিন বাড়তেই থাকে।
গ্রাহকদের এমন অ’ভিযোগের প্রেক্ষিতে ইভ্যালির ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে অনুসন্ধানে নামে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ইভ্যালির বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিলে কোম্পানির গোঁজামিলের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এরপরই মন্ত্রণালয় ইভ্যালির বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করে।
মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যেও ইভ্যালি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল। এক পর্যায়ে আ’দালত পর্যন্ত গড়ায় ইভ্যালির গ্রাহকদের অ’ভিযোগ। প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অ’ভিযোগ এনে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আরিফ বাকের নামের এক গ্রাহক গুলশান থা’নায় ইভ্যালির মো. রাসেল ও তার স্ত্রী’ শামীমা নাসরিনের বি’রুদ্ধে মা’মলা করেন। পরদিন বিকেলে রাজধানীর মোহাম্ম’দপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে তাদের গ্রে’ফতার করে র্যা’ব।
গত ২১ এপ্রিল চেক প্রতারণার ৯ মা’মলায় ই-কমা’র্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মক’র্তা (সিইও) মো. রাসেলকে জামিন দেন আ’দালত। ওই দিন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আ’দালত থেকে জামিন পান তিনি। তবে তার বি’রুদ্ধে আরও মা’মলা থাকায় কারামুক্ত হতে পারেননি রাসেল। শামীমা নাসরিন বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।