বাঙলা কলেজ প্রতিনিধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়(ঢাবি) অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজকে একটি সমন্বিত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
বুধবার (২০ নভেম্বর) ঢাকা কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এর পর থেকেই কলেজগুলোয় নানা সমস্যা ও সংকট রয়েছে। এ জন্য আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর বলেছিলাম সাত কলেজকে আলাদা করে স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে এবং স্বতন্ত্র পরিচয়ের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি করতে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘কীভাবে স্বতন্ত্র পরিচয় দেওয়া যায়, সে জন্য একটি কমিটি করেছিলাম। এ কমিটি কলেজগুলো নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কাজ শেষের দিকে। এবার আমরা একটা বিশেষজ্ঞ কমিটি করতে যাচ্ছি। এ কমিটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ তৈরি করে সেখানে কলেজগুলোকে আরও কীভাবে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া যায়, তাদের সুযোগ-সুবিধা, অবকাঠামো কীভাবে বাড়ানো যায় এবং সেগুলোয় সমন্বিতভাবে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া যায় তা নিয়ে সুপারিশ করবে। আর স্বতন্ত্র পরিচয়ের নাম সবার সঙ্গে আলোচনা করেই দেওয়া হবে।’
শিক্ষা উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘মনে রেখো, যে নামই দাও না কেন, আসল কথা হলো শিক্ষার মানোন্নয়ন করা। শিক্ষার বৈষম্য দূর করা। কী নাম দেবে সেই স্বতন্ত্র সত্তার, সেটা তোমরাই ঠিক করবে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সবচেয়ে বড় যেই কমিটি গঠন করা হবে, তাদের কাজ তোমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পারবে এবং এর জন্য বসে থেকে লাভ হবে না। কারণ, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সংক্ষিপ্ত। কাজেই কমিটি কবে রিপোর্ট দেবে, সেটা নিয়ে তোমরা মাথা ঘামাবে না। আমরা এখন থেকেই নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে পর্যায়ক্রমে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেগুলো এখন থেকেই শুরু করে দেব। যাতে তোমাদের জন্য সবচেয়ে সম্মানজনক একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’
বর্তমান অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমানে যারা অনার্স বা মাস্টার্সে আছে, সেটা যেন কোনোভাবেই বিঘ্নিত না হয়। বরং যে অসুবিধাগুলো আছে, তা এখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করব। তবে অনুরোধ করব, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় যে অসুবিধা আছে, সেগুলো দূর করতে আরও সচেতন হওয়ার। আমরা যাই করি না কেন, পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের তা বৈধতা দিতে হবে। আমরা আশা করি, সেই বৈধতা দেওয়া হবে। অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য যত দূর পারে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। ’
রাস্তা অবরোধ করা নিয়ে তিনি বলেন, ‘তোমাদের কাছে একটাই অনুরোধ, নতুন সময় এসে অনেক অস্থিরতা গিয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমরা সম্পূর্ণ অবিভাবকহীন অবস্থায় পেয়েছি, কর্তৃপক্ষও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের স্বল্পকালীন সময়ে একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে রেখে যেতে চাই, যাতে ভবিষ্যৎ সরকারের কাছে এটা নিদর্শন হিসেবে থাকে। তোমাদের কোনো অভিযোগ থাকলে আমাদের কাছে জানিও। তবে আর রাস্তা অবরোধ নয়, বিশৃঙ্খলা নয়, আমরা শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু পরিবেশ চাই। যেখানে ছাত্র শিক্ষকদের মধ্যে সুসম্পর্ক ফিরে আসবে।’
আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক সংগ্রাম করে রাস্তায় নেমে যারা আহত হয়েছেন, বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে তাদের দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া করছি এবং যারা নিহত হয়েছে, তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। এখন থেকে আমরা আবার আগের শিক্ষার পরিবেশে ফিরে যেতে চাই।’
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। কিন্তু এই কলেজগুলোর উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য প্রত্যাশিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে শুরু থেকেই এখন পর্যন্ত পরীক্ষা ও ফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়াসহ নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত কলেজগুলো। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা তাদের জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। সর্বশেষ গত ৬ নভেম্বর শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।