The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

‘সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে সেটা সরকারই বলবে’

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নের্তৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। বিভিন্ন ব্যস্ততায় প্রায় দুই মাস হতে চললো তার সরকারের। এর মধ্যে দেশে ঘটে যাওয়া সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি ভয়েস অব আমেরিকাকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। আনিস আহমেদের নেওয়া সাক্ষাৎকারটি সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত হয়েছে।

সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো:

সাক্ষাৎকারে সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ড. ইউনূস জানান, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশের ভূমিকা নেওয়ার কথা থাকলেও সার্বিক পরিস্থিতিতে তারা মনোবল হারিয়ে ফেলেছে। সম্প্রতি ছাত্র-জনতা হত্যা করায় ‘কটু কথার’ ভয়ে পুলিশ সাধারণ মানুষ থেকে কিছুটা দূরে থাকতে চাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘পুলিশের সবাইতো আর অন্যায় করেনি। যারা অন্যায় করেছে তাদের চিহ্নিত করব, তাদের শাস্তি হবে। বাকিরা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু এটি একটি লম্বা প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ‘সীমিত সময়ের জন্য’ সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব মর্যাদার কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সারা দেশে ৬০ দিনের জন্য এই ক্ষমতা পান তারা। পরবর্তীতে ৩০ সেপ্টেম্বর এই প্রজ্ঞাপনে সংশোধন এনে ‘সশস্ত্র বাহিনী’ করা হয়। অর্থাৎ, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নৌ-বাহিনী ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদেরও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়।

সশস্ত্র বাহিনীকে যে সময়ের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যেই পুলিশ ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা প্রকাশ করেন ড. ইউনূস।

গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব এবং সরকার পরিচালনায় তরুণদের ভূমিকা বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘তরুণদের হাতেই ক্ষমতা যাওয়া উচিত। এখানে বুড়োদের কোনো কাজ নেই। তারা শুধু ভুল করে গেছে এ পর্যন্ত।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘তাদের (তরুণদের) নেতৃত্বে একটি বড় কাণ্ড হয়ে গেল। কাজেই তাদের অবিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। আমি বরাবরই বলে আসছি, তরুণদেরই দেশ চালানো উচিৎ। তারাই তাদের ভবিষ্যৎ রচনা করবে। শুধু বাংলাদেশ না, সারা বিশ্বেই তরুণদের হাতে দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া ভালো।’

সরকারের মেয়াদ ও নির্বাচনের সম্ভব্য সময় বিষয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্য তুরে ধরে ড. ইউনূসের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এটা কি ধরে নেওয়া যায় যে এই সরকারের মেয়াদ ১৮ মাস?

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘এটা সরকারের মতামত না। সরকার কখন মেয়াদ ঠিক করবে সেটা সরকারকে বলতে হবে। আমাদের মুখ থেকে যখন শুনবেন, তখন সেটাই হবে তারিখ। উপদেষ্টা পরিষদে আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করেছি, কিন্তু এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি।’

প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নেও এই সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান। পালিয়ে ভারত চলে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, ‘এটা আইনগত বিষয়। তিনি যেখানেই থাকুন, নিশ্চয়ই আমরা তাকে ফেরত চাইব আইনি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য।’

গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা ও পুলিশ নিহত ও আহতের ঘটনায় সরকারের ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, ‘যে যেখানে অপরাধ করেছে, সে তার শাস্তি পাবে। একটার বিচার হবে, আরেকটার হবে না—এটার বিরুদ্ধেই তো গণঅভ্যুত্থান হলো। কাজেই অপরাধ করলেই তার শাস্তি পেতে হবে।’

পাহাড়ে সাম্প্রতিক অস্থিরতা নিয়ে বর্তমান সরকার বিশেষভাবে চিন্তিত কি না জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা সব জায়গায় শান্তি চাই। কোনো কোনো জায়গায় হয়তো অপারগ হয়েছি। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে আমরা ইচ্ছা করে এটা করছি না। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়েছিল, সেটা ঠিকও হয়ে গেছে। এমন ঘটনা ঘটলে সরকারের দায়িত্ব তা সমাধান করা। মানুষের মধ্যে সৌহার্দ নিয়ে আসা।’

রোহিঙ্গাদের শরণার্থী মর্যাদা দেওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, ‘তাদেরকে শরণার্থী মর্যাদা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো দিয়েছে এবং ইউএনএইচসি সেখানে কাজ করছে।’

নতুন করে রোহিঙ্গা আসতে চাইলে বাংলাদেশ তাদের গ্রহণ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা একটা আন্তর্জাতিক সমস্যা। আন্তর্জাতিক আইন আছে। সেই অনুযায়ী সবাই মিলে এটা দেখা হবে। যখন কারো জীবন শঙ্কা দেখা দেয় তখন সে অন্য দেশে আশ্রয় চায়। তারা আসতে চাইছে আর আমরা দরজা বন্ধ করে দেবো, সেটা হবে না। এটা আইন বিরুদ্ধ কাজ।’

জাতিসংঘের অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বৈঠকগুলোতে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগের সরকার সব ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। সেখান থেকে পুণর্জাগরণ করতে হবে। এর জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা কমিশন গঠন করছি। ছয়টি করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি সংবিধান নিয়ে। আরও কমিশন আসছে।’

পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে সরকারের পরিকল্পনা জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, ‘এত বছরের একটা সমস্যা এত অল্প সময়ের একটি সরকার সমাধান করে ফেলবে, এটা আশা করা ঠিক হবে না। বহু বছরের চেষ্টায় শান্তি চুক্তি হয়েছে। সেটাও মানছে না। আবার নতুন করে শান্তি চুক্তি করতে হবে কি না, সেটা দেখতে হবে। আমাদের সরকার সেটা পেরে উঠবে না। পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকার এসে এটা করবে।’

সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আইনি ব্যাপার। আমরা এখন কাজ করছি কী প্রয়োজন সেটা নিয়ে। আইনসঙ্গতভাবে কীভাবে সেটা হবে তা পরবর্তীতে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।’

স্বাধীনতার বিরোধীতাকারীরা এখন দেশের রাজনীতিতে সামনের দিকে চলে আসছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের সংবিধান বলে, প্রত্যেকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। সেই অধিকার আমার নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধানের বিধান থেকে আমি বের হয়ে আসতে পারি না। তারা যদি অপরাধ করে তাহলে শাস্তি পাবে। কিন্তু রাগ করে তাকে দুশমন ভাবতে পারি না, তার অধিকার কেড়ে নিতে পারে না। এটা কোনো রাষ্ট্র করতে পারে না, করলে সেটা অচল রাষ্ট্র হবে।’

বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য সংস্কারের পর নির্বাচন দেওয়া এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।

সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে সারাদেশ একমত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কী বিষয়ে বা কীভাবে হবে, সেটা নিয়ে বিতর্ক হবে। কমিশন একটা রূপরেখা দেবে, সেটা নিয়ে সারা দেশে বিতর্ক করার সুযোগ তৈরি করা হবে, যেন রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ করে এবং সবাই মিলে ঠিক করে যে এই সংশোধন এখনই করবে নাকি পরবর্তীতে। যে সংবিধান আমাদের আছে, এটা দিয়ে দেশ চলবে না। চললে আবারও একই ঘটনার সৃষ্টি হবে।’

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.