সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষর্থীদের কাছে এক আবেগের নাম। সমাবর্তন মানে এক সাথে মিলিত হওয়া, বিদায়ী বেদনার মুহূর্ত, শিক্ষাজীবনের অর্জনের স্বীকৃতি প্রাপ্তির দিন। সমাবর্তনের আরেক নাম উল্লাস আর উদযাপন। সমাবর্তনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী হয় যার ফলে সবার এই বাঁধভাঙ্গা আনন্দ। কিন্তু এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
প্রতিষ্ঠার ২৮ বছরে মাত্র একটি সমাবর্তন আয়োজন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পর প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে এ সমাবর্তন হয়। এরপর ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও ২য় সমাবর্তন হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, পাবলিক এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত সমাবর্তন হয়। শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী প্রতিবছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন করা উচিত। কিন্তু দুঃখের বিষয়ে প্রতি বছরতো দূরে থাক পাঁচ বছরেও একবার আয়োজিত হয় না।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফেনী সরকারি কলেজ থেকে সদ্য মাস্টার্স পাস করা শিক্ষার্থী আব্বাস উদ্দিন মোহন বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত তার মধ্যে একটি হচ্ছে সমাবর্তন। যেখানে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবেই স্বীকৃত, সেখানে একটা সমাবর্তনের জন্যে সেখানকার ছাত্রছাত্রীদের রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মতই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও এখন তাল মিলিয়ে উচ্চশিক্ষা, কর্মজীবন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে, তবে কেনো সমাবর্তনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বে। তাই অতিসত্তর সমাবর্তন আয়োজন করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ২০১৮ সালে মাস্টার্স শেষ করা আরেক শিক্ষার্থী আফরিন সুলতানা জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যেই পরিমাণ শিক্ষার্থী প্রতিবছর সমাবর্তন করলেও সবাই সমাবর্তন পাবে না। আর সেখানে আমাদের ৪-৫ বছর পরেও সমাবর্তন হয় না। তাই শিক্ষা জীবন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেয়াও সম্ভব হয় না। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। দ্রুত সমাবর্তন আয়োজন করার দাবি জানাই।
এদিকে ২য় সমাবর্তন আয়োজনে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, চাইলেইতো আর সমাবর্তন করা যায় না। সমাবর্তন করতে হলে রাষ্ট্রপতির অনুমতি নিতে হয়। এটা নিয়ে আমি আচার্যের সাথে কথা বলেছি। তিনি প্রাথমিকভাবে সম্মতি দিয়েছেন। এ বছরতো আর করা হবে না। আগামী বছর সমাবর্তন অথবা শিক্ষা সম্মেলন যে কোন একটা প্রোগ্রাম করার পরিকল্পনা আমাদের আছে।
উপাচার্য আরও বলেন, আমরা চাচ্ছি না আচার্য অনলাইনে জুমের মাধ্যমে উপস্থিত থেকে সমাবর্তন করুক। তিনি যখন স্বশরীরে উপস্থিত থাকার সিডিউল দেবেন তখন করবো। এজন্য একটু দেরি হচ্ছে। করোনা না আসলে একটা সমাবর্তন এত দিনে হয়ে যেতো। শিক্ষার্থীরা আমাকে সমাবর্তনের করা জন্য দাবি জানিয়েছেন। আমরাও চাই সমাবর্তন আয়োজন করতে
অন্যদিকে, প্রথম সমাবর্তনে শিক্ষার্থীরা যেমন খুশি হয়েছিলো তেমনি নানা অব্যবস্থাপনা আর ভোগান্তিরও শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সমাবর্তনের সবচেয়ে আকাঙ্খিত পর্ব হচ্ছে আচার্যের হাত থেকে সনদ গ্রহন করা। কিন্তু অনেক ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সমাবর্তনের আয়োজন করা হলেও সে বার সার্টিফিকেট ছাড়াই ঘরে ফিরতে হয়েছে গ্র্যাজুয়েটদের।
এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম সমাবর্তনে অংশ নেয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, সমাবর্তনে অংশগ্রহণে তিন হাজার টাকা এন্ট্রি ফি নেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গাউন ফেরত নিতে ভুল না করলেও সার্টিফিকেট ছাড়াই বাসায় ফিরেছেন সবাই।
এ বিষয়ে সমাবর্তন প্রত্যাশী শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেন, প্রথমত চাই দ্রুত সমাবর্তন করা হোক। দ্বীতিয়ত প্রথম সমাবর্তনে যে সমস্যাগুলো হয়েছে সেগুলো যেন না হয় এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিশেষ করে আচার্যের হাত থেকে সনদ গ্রহন করা। সার্টিফিকেট ছাড়াই যেন বাসায় ফিরতে না হয়।