The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

সমস্যায় জর্জরিত বাকৃবির হেলথ কেয়ার সেন্টার

বাকৃবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ে (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রতিষ্ঠিত হেলথ কেয়ার সেন্টার নানা সমস্যায় জর্জরিত রয়েছে। সময়মতো ডাক্তার না থাকা, ঔষধ না থাকা, ডাক্তারদের দূর্ব্যবহারসহ নানা অভিযোগ তুলেছে বিশ^বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত সোমবার একবেলা হেলথ কেয়ার সেন্টার বন্ধ রাখে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ^বিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ারে সার্বক্ষণিক ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও সবসময় ডাক্তার পাওয়া যায় না। সাধারণ ঔষধ গুলোও সবসময় পাওয়া যায় না। মানসম্পন্ন ঔষধ নাই বললেই চলে যা আছে সবই নিম্নমানের। সাম্প্রতিক ভাইরাল জ¦¡রের প্রকোপে পড়া অনেক শিক্ষার্থীই অভিযোগ করেছেন যে জ¦রের পরিমাণ (তাপমাত্রা) না মেপেই তাদের ঔষধ দেওয়া হয়। জরুরি প্রয়োজনে তাৎক্ষনিক অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় না। বারবারই চালক সংকটের কথা শুনতে হয়। সাপ্তাহিকভাবে বিশেষজ্ঞ একজন ডাক্তার বসার কথা থাকলেও এখনও পর্যন্ত এরকম কোনো সেবা পাওয়া যায়নি। বাইরের তথা আশেপাশের এলাকার মানুষদের চিকিৎসা দেওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিক চিকিৎসা পান না।

সার্বক্ষণিক ডাক্তার না থাকার বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের চীফ মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. সাঈদুর রহমান বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে জরুরী ভিত্তিক কল আসলে তখন তাদের বাসায় গিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়। ওই সময় কোন শিক্ষার্থী হেলথ কেয়ারে আসলে তখন ডাক্তারের সংকট হয়। এ সময় যদি অতিরিক্ত একজন ডাক্তারকে হেলথ কেয়ারে রাখতে পারলে শিক্ষার্থীদের এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হতো।

পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় সকল ঔষধের সংগ্রহ আছে। মাঝে বাজেট সংকটের কারণে দুই-একটি ঔষধ সরবরাহ কমানো হয়েছিল। তবে বর্তমানে প্রয়োজনের সফল ঔষধ সংগ্রহে রাখা হয়েছে। হেলথ কেয়ারের অধীনে ৫৩ প্রকারের ট্যাবলেট, ১১ প্রকারের ক্যাপসুল, ১২ প্রকারের ইঞ্জেকশন এবং ২২ প্রকারের ড্রপ ও ক্রিম সংগ্রহে রাখা হয়। এসব ঔষধ মানসম্মত। তবে বাজেট বাড়ালে আমরা শিক্ষার্থীদের আরও বেশি ঔষধ বিতরণ করতে পারবো।

অনেক সময় ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে মানবিকতার খাতিরে বা জরুরি ভিত্তিতে ফার্মাসিস্টকে ঔষধ দিতে হয়। তখন তিনি ডাক্তারের সাক্ষর ছাড়াই শুধুমাত্র রেজিস্ট্রেশন নাম্বার লিখে ঔষধ দিয়ে থাকেন। পরবর্তীতে ডাক্তার আসলে সবগুলো কাগজ একসাথে সাইন করিয়ে নেওয়া হয়। এখানে অনেকেই ভুল বুঝে থাকেন, যে একজন ব্যক্তিকে আনেকগুলো রশিদের ভিত্তিতে ঔষধ দেওয়া হচ্ছে।

ডা. মো. সাঈদুর বলেন, হেলথকেয়ারের অধীনে থাকা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণ করে বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবহণ শাখা। এখানে মেডিকেল অফিসারের কোন হস্তক্ষেপ নেই। অনেক সময় পরিবহণ শাখায় চালকের সংকটের কারণে জরুরি ভিত্তিতে সেবা দেওয়া মাঝে মধ্য সম্ভব হয়ে ওঠে না। আবার বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা বিনা প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্সের দাবি করে। এ সময় আমাদের করার কিছু থাকে না। এমন কি তারা ডাক্তারের বৈধ অনুমতিও নেন না।

সাপ্তাহিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে আলোচনা করেছি। তারা আসলে পুরো সপ্তাহেই ব্যস্ত থাকেন। কাজেই হেলকেয়ারে কাজ করতে হলে তাদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে ছুটির দিনে কাজ করতে অনেকেই নারাজ। এ বিষয়ে আরেকটি বড় বাধা হলো আর্থিক বরাদ্ধ।

তিনি বলেন, বর্তমানে হেলথ কেয়ারের অধীনে ইসিজি, আল্ট্রাসেনোগ্রাফি, এক্সরে ও বিভিন্ন প্যাথলোজি টেস্ট চালু রয়েছে। প্যাথলজি টেস্ট এর মধ্যে রয়েছে টিসি, ডিসি, এইচবি, ইএসআর, বøাড গøুকোজ, বিলিরুবিন, ক্রিয়েটিনিন, কোলেস্টেরল, লিপিড প্রোফাইল, এইচবিএএলসি, এএসও টাইটার, আরএ টেস্ট, সিআরপি, ভিডিআরএল, এইচ বিএস এজি, ওয়াইডাল, ট্রিপল এন্টিজেন, বøাড গ্রুপ, প্রেগনেন্সি, আইসিটি ডেঙ্গু টেস্ট। তবে এসব টেস্ট পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে।

ডা. পার্থ সেনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি সব সময় আমার অধীনস্থ ডাক্তারদেরকে কাউন্সিলিং করার জন্য পরামর্শ দেই। এছাড়াও আমি তাদেরকে শিক্ষার্থীদের সাথে সহানুভূতিশীল ও নমনীয় আচরণের জন্যই বলে থাকি। আমি আশা করি পরবর্তীতে তিনি তার আচরণ সংশোধন করবেন এবং শিক্ষার্থীদেরকে সবসময় ভালো চিকিৎসা দেবেন।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হেলথ কেয়ার সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যই। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক শিক্ষার্থী কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। তবে আশেপাশের এলাকা থেকে অসুস্থ কেউ আসলে মানবিকতার খাতিরে আমাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের না করার কোন সুযোগ থাকে না। হেলকেয়ারের সার্বিক বিষয় সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরবর্তীতে তারা এ সকল বিষয়ের জন্য নিয়ম নীতি নির্ধারণ করবেন।

এ সময় তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, আমাদের আরো জনবল দরকার। শুধু ডাক্তারসংখ্যা বাড়ানোই যথেষ্ট নয়। ডাক্তারের সকল কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য নার্স, ডাক্তারের সহকারীর প্রয়োজন হয়। এছাড়া আমরা বছরে ৩৬৩ দিন ডিউটি করি। সেক্ষেত্রে আমাদের জন্য আলাদা কোন ভাতার ব্যবস্থা নাই। কোন বিশেষ সুযোগ-সুবিধাই আমরা পাই না। এদিকে একজন ডাক্তার বা কর্মচারী যদি অসুস্থ্য হয়ে পড়েন তবে তার বিপরীতে আলাদা করে কোন জনবল নেই। ২০১৯ সালের ডাক্তার নিয়োগ সার্কুলার হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো ডাক্তার নিয়োগ হয়নি। এই বিষয়গুলো দ্রæত সমাধান করা গেলে আরেকটু উন্নত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে কৃষি অনুষদের সহ-সভাপতি মো তারিক জামান জয় বলেন, আমরা সোমবার এক বেলার জন্য হেলথ কেয়ার বন্ধ করে রাখি। আমাদের দাবি ছিল তিনটি অ্যাম্বুলেন্স চালু করা, পর্যাপ্ত পরিমাণ ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া এবং শিক্ষার্থীদের সাথে ডাক্তারের অসৌজন্যমূলক আচরণের বিচার করা। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়টি উপাচার্য তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করেন।

এ বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, হেলথ কেয়ারের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আমি অবগত আছি। একে একে সকল বিষয়ে সমাধান করার চেষ্টা করছি। এর মধ্যে এম্বুলেন্সের বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। ডাক্তার ও ডাক্তারের সাহায্যকারীদের নিয়োগের বিষয়টি একটু সময় সাপেক্ষ। আমরা ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী বাজেটের তুলনায় অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে প্রস্তুত।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.