বাঙলা কলেজ প্রতিনিধিঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ সংস্কার কমিটি প্রত্যাখ্যান করে সাত কলেজকে নিয়ে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের দাবিতে দ্রুত কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ লক্ষ্যে তিন দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা। আজ শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
একইসঙ্গে তারা বলছেন, সাত কলেজের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সংকট নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত ১৩ সদস্যের কমিটি ঘিরে শিক্ষার্থীদের কোনো প্রত্যাশা নেই। কমিটিতে কোন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। আগামী মঙ্গলবারের (২৯ অক্টোবর) মধ্যে সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের লক্ষ্যে কমিশন গঠন করা না হলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের টিমের অন্যতম প্রতিনিধি সাবরিনা সুলতানা শিক্ষার্থীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এসময় ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিসহ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা সাত কলেজ সংস্কার কমিটিকে প্রাথমিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে এ কমিটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে কিছুই উল্লেখ নেই। কার্যপরিধিতে সংস্কারের কথা থাকলেও আমরা মূলত সংস্কার চাচ্ছি না। আমরা এখন সাত কলেজের সমন্বয়ে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবির আন্দোলন করছি। আমাদের দাবির সাথে প্রাসঙ্গিক না হওয়ার ১৩ সদস্যের কমিটিকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।’
দাবি আদায়ে পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘অনতিবিলম্বে সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন গঠন করতে হবে। সেই কমিশনে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যুক্ত করতে হবে। আগামী তিনদিন সাত কলেজের সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে। ’
কর্মসূচি হিসেবে শিক্ষার্থীরা গ্রাফিতি অঙ্কন, গণসংযোগ কর্মসূচি এবং আগামী মঙ্গলবার দুপুর তিনটায় ঢাকা কলেজে শিক্ষার্থী সমাবেশ ঘোষণা করেন।
এর আগে, গত সোমবার(২১ অক্টোবর) সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর টিম প্রাথমিকভাবে তিনটি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে। দাবিগুলো হচ্ছে —
১. সাত কলেজ নিয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করার অভিপ্রায়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
২. সংস্কার কমিশন অনধিক ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সাত কলেজের শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সাত কলেজের সমন্বয়ে শুধু মাত্র একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার রূপরেখা প্রণয়ন করবেন।
৩. সংস্কার কমিশন বর্তমান কাঠামো সচল রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন। যাতে করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সেশন জটিলতার কোনো ধরনের পরিবেশ তৈরি না হয়।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা থেকে ৭ কলেজের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনে ১৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনকল্পে এই কমিটি কাজ করবে। কমিটিতে কলেজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি ও সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপসচিবকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
আর বাকি সদস্যরা হলেন— বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের (উপাচার্য) প্রতিনিধি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের প্রতিনিধি, যুগ্মসচিব (বিশ্ববিদ্যালয় অধিশাখা-২), ঢাকা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ।
এই কমিটিকে চারটি কাজ করার জন্য চিঠিতে বলা হয়েছে। সেগুলো হলো –
১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা চিহ্নিতকরণ।
২. চিহ্নিত সমস্যা নিরসনকল্পে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন।
৩. কমিটি আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করবেন।
৪. কমিটি কাজের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবেন।