The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪

শৈশবের সেই হারানো স্মৃতি

শৈশবের সেই হারানো স্মৃতি

মোহাম্মদ হাছানঃ সময়ের বিবর্তনে বন্ধুরা সবাই ব্যস্ত আবার অনেকে হারিয়ে গেছে । তাদের ব্যস্ততায় আর আড্ডা দেওয়া হয় না, আবার কখন একসাথে বসে আড্ডা দিব সেটাও অনিশ্চিত । বন্ধুত্ব হলো চলমান একটি প্রক্রিয়া। জীবনের সব ক্ষেত্রে প্রতিটি মুহূর্তে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয় । তবে আস্থা এবং বিশ্বস্ত বন্ধুত্ব ছিল স্কুলজীবনের বন্ধুরাই। স্কুলজীবনের বন্ধুদের নিয়ে প্রাণখুলে হাসি-ঠাট্টা, স্কুল ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে যাওয়া, গল্প, আড্ডা, খেলাধুলা আর বিভিন্ন তর্ক-বিতর্কসহ দুষ্টুমিতে কেটেছিল আমদের সেই সময়টা। সেই বন্ধুদের প্রতি বিশ্বাস, ভালোবাসা, স্নেহ এসব একসাথে পারস্পরিক আত্মার দৃঢ়তা শক্তিশালী বন্ধনে রূপ নিয়েছিল আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। কিন্তু এ দীর্ঘ সময়ের মাঝে এ বন্ধুত্বে ভাঙা গড়া চলতেই থাকে কেউ সংসার বা কর্মজীবন নিয়ে। সেভাবেই গড়ে উঠেছিল আমাদের বন্ধুত্ব।

স্কুল ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে যাওয়ার একটা গল্প ছিল আমাদের , ২০১৭ সালের দিকে বন্ধুরা মিলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বালুচর প্রজেক্টে ঘুরতে গিয়েছিলাম । বন্ধুদের মাঝে স্মরণীয় ছিল সেই দিনটি, স্কুল পালিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম সব বন্ধুরা। তারা হলো হিমু, বায়জিদ, নাঈম, সাব্বির, রাসেল, সুপ্ত, ফাহিম, কাশেম তবে কিছু সীমাবদ্ধতার জন্য আমাদের সাথে যাওয়া হয়নি আসমা, সায়েমা ও রোকেয়ার। আমাদের ব্যাচ ছিল, নবীনগর শাহওয়ার আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০১৮ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী । তখন আমাদের বয়সটা ছিল আঠার এর এপার-ওপার , সুকান্ত ভট্টাচার্যের সেই আঠারো বছর কবিতার কথা মনে পড়ে গেল , “আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়, পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা, এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়, আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।” ঠিক সেভাবেই সকল বাধা পেরিয়ে স্কুল ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম আমরা। সারাদিন ঘোরাঘুরি করে যখন বাসায় ফিরব, ঠিক সেই মুহূর্তে বন্ধু ফাহিম ছবিটা তুলেছিল।

সেই ঘুরতে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সবাই একত্র হয়ে আড্ডা দেওয়া হয়নি। বন্ধুদের মাঝে কেউ উচ্চশিক্ষার জন্য পারি জমিয়েছে, আবার অনেকেই ব্যস্ত হয়েছে কর্ম জীবনে। তবে নানা ব্যস্ততার মাঝে কিছু বন্ধুর দেখা পাওয়া যায়। প্রযুক্তির বদৌলতে একসাথে বসে আড্ডা দেওয়া না হলেও, ফেসবুক গ্রুপে আড্ডা দেওয়া হয়, ক্ষুদে বার্তায় তো আর আড্ডা জমে না। ফেসবুক গ্রুপে কেউ মতামত দিচ্ছে কেউ শুনছে, এটুকেই সীমাবদ্ধ বন্ধুদের আড্ডা ।

তবে যাইহোক বন্ধু হলো চাঁদের মতো। চাঁদনী রাতে যেখানে যাবেন সঙ্গে চাঁদ যাবেই। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাননা কেন দূর আকাশ থেকে জানিয়ে দিবে চাঁদের অবস্থান, “বন্ধু আমি আছি, থাকবো, অনন্তকাল।” বয়সটা বাড়ার সাথে বুঝতে পারছি ছোটবেলার বন্ধুত্বটা আসলেই সেরকম একটি উপলব্ধির বিষয়। এই উপলব্ধি সবাইকে দেয় সুখের পরশ। তাই সত্যিকার বন্ধুত্ব সম্পর্ক কখনোই বদলায় না, বদলায় সময় আর এ আশাটা মনে রোপন করে রাখাটা হলো আমাদের কর্তব্য। এ বন্ধন অটুট থাকে আজীবন। এ ক্ষণিকের সময়ে অনেক বন্ধু পাওয়া যায়, তাদের অধিকাংশ বন্ধুত্ব থেকে স্বার্থের গুরুত্বটা ভালো বুঝে। কিন্তু স্কুল জীবনের সেই বন্ধুগুলো ছিল আবেগের পরশ, যাদের দেখলে বুঝা যায় কতোটা আকাঙ্ক্ষা ছিল সেই সময়টার জন্য । প্রতিদিন অস্ত আসে, অস্ত চলে যায় কিন্তু বন্ধুরা মিলে আর আড্ডা দেওয়া হয় না । দিনশেষে এটাই প্রত্যাশা, বন্ধু যেখানে থাক ভালো থেকো আজও তোমাদের অপেক্ষায় আরেকবার সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়ার অপেক্ষায় ।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.