বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শেখ পরিবার ভদ্রতা-শিষ্টাচারের কালচার শেখেনি, তাদের মধ্যে আছে শুধু দৃষ্টতা, ঔদ্ধত্য আর নিজেদের অহঙ্কার। এসব করতে গিয়ে তখনই তাদের পতন হয়েছে অত্যন্ত ভয়াবহভাবে। আমরা কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতেই বলেছি— তার পতন হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। উনি (শেখ হাসিনা) কানে লাগাননি, গ্রাহ্য করেননি। জনগণ ধেয়ে এসে তার সাধের গণভবনের দিকে যাবে কল্পনাই করতে পারেননি। এটা তিনি কল্পনা করতে পারেননি বলেই আজকে তার ময়ূরের সিংহাসন মাটিতে লুটে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহিদ সৈকত চন্দ্র দে এবং শহিদ পারভেজের পরিবারের প্রতি তারেক রহমানের নির্দেশে সমবেদনা ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় সুদূর আটলান্টিকের পাড় থেকে মাঝে মাঝে দু-একটা বাণী ছাড়েন। এর আগে কত কথাই তো তিনি বলেছেন। আমি শুধু এখন এই কথাটাই বলব— শেখ হাসিনা আপনার তো সন্তান দুজন— একটা ছেলে, একটা মেয়ে। আপনি কিন্তু তাদের ভদ্রতা-শিষ্টাচারের কালচার শেখাননি। এই সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তুই বলে সম্বোধন করেছেন তার কয়েকটি বক্তৃতায়। আমরা কিন্তু এত বর্বরোচিত আচরণের পরও কখনো শেখ হাসিনাকে তুই বলে সম্বোধন করিনি। আপনি বলেই সম্বোধন করেছি সবসময়।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এই যে জুলাই বিপ্লব এই বিপ্লবে নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে শেখ হাসিনা। স্কুল-কলেজের কত মাছুম বাচ্চার জীবন কেড়ে নিলেন। তার পরও তার কোনো বিকার নেই, তার প্রতিহিংসা কিন্তু এখনো রয়েছে— দুই তিন দিন আগে বগুড়ার শিশুশিক্ষার্থী রাতুল মারা গেল ৪৫ দিন ধুঁকতে ধুঁকতে। শেখ হাসিনার বর্বর হিংসা, রক্ত ঝরানোর হিংসা তার প্রতিফলন এখনো কিন্তু আমরা দেখছি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা কতই না কথা বলেছেন। তারা বলেছিলেন— শেখ হাসিনা না থাকলে বীভৎসতা বাংলাদেশে দেখা যাবে। ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন— শেখ হাসিনা না থাকলে একদিনে ১ লাখ লোক মারা যাবে। আরেকদিন বলেছিলেন— ১০ লাখ লোক মারা যাবে। ৫ আগস্ট তার পতন হয়ে গেল শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেন কই কিছুই তো হলো না। একজন আওয়ামী লীগের ওপরও তো হামলা করা হয়নি। এই কথাগুলো বলে তারা শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রেখেছিল। কারণ শেখ হাসিনা টিকে থাকলে টেলিভিশনের মালিক হওয়া যায়, রেডিওর মালিক হওয়া যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিক হওয়া যায় এবং জনগণের টাকা বিদেশে পাচার করা যায়।
সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, একটা পর্যায়ে গিয়ে তারা জনগণের পক্ষে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা যতটুকু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছি, এটা ছাত্র-জনতার আন্দোলন তাদের আত্মত্যাগের কারণে, তাদের জীবন উৎসর্গের কারণে এবং এর সাথে সেনাবাহিনীর যে সমর্থন ছিল এটা অনেকটাই কাজে লেগেছে।
তিনি বলেন, দেশটা একেবারেই পারিবারিক সম্পত্তি বানিয়েছিল শেখ হাসিনা। সে, তার বাবা, তার পরিবারের লোকজনদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা যেত না। তার ঘনিষ্ঠ লোকজনরা লুটপাট করলেও তার বিরুদ্ধে কথা বলা যেত না। জ্বালানি নেই কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কার— শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ লোকজনের, তার আত্মীয়স্বজনের। জনগণের পকেট কেটে পকেটমার শেখ হাসিনা হাজার হাজার কোটি টাকা, লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এই কারণেই তিনি আন্দোলনের কথা শুনলেই আন্দোলনকারীদের ওপর বর্বর আক্রমণ চালিয়েছেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, আমরা বিএনপি পরিবারের কৃষিবিদ মিথুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মুস্তাফিজুর রহমান মনির, আরিফুর রহমান তুষার প্রমুখ।