জবি প্রতিনিধি: শুভ্রতা ছড়াচ্ছে কেরানীগঞ্জের সারি ঘাটের সারি সারি সাদা কাশফুল, যতদুর চোখ যায় শুধু সাদা আর সাদা। পাখির চোখে দেখলে মনে হবে মাটিতে লুটে পড়েছে সাদা মেঘের ভেলা। বিকেলের নীল আকাশে সাদা মেঘ আর সারি ঘাটের সাদা কাশফুল যেনো এখানে মিলে মিশে একাকার।
ব্যস্ত নগরী ঢাকার সব চেয়ে কাছের উপজেলা কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের সারিঘট সারা বছর ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত থাকলেও এখানে বর্ষা আর শরতে ভিন্ন মাত্র যোগ করে প্রকৃতি। বর্ষাকালে স্বচ্ছ থৈথৈ পানিতে সারি সারি নৌকা আর শরতে সাদা কাশফুলের দোলা যে কারো মন ছুয়ে যাবে। সারি ঘাট প্রথম দেখায় যে কাউকে প্রেমে ফেলবে, ঢাকার ভেতর এতো কাশফুল হয়তো দেখেওনি কেউ আগে। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে কাশফুলের সাদার শুভ্রতায় যে কারো মন হারিয়ে যাবে অজানায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে যে, আইনতা এলাকার রাস্তার পাশে কৃত্রিম লেক, লেকের শোভা বাড়াচ্ছে নানা রঙের অর্ধশতাধিক ছোট নৌকা, আর লেকের উপর ঝুলন্ত সেতু আপনাকে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু না দেখার কষ্ট ভুলিয়ে দিবে। তবে লেকের সৌন্দর্য আপনাকে ততটা মুহিত করবেনা যতটা করবে সাদা কাশফুল।
সারি ঘাটে পৌঁছা মাত্রই বাতাসে উড়ে আসা কাশফুলের পাপড়ি আপনাকে স্বাগত জানাবে, আর ফুলের সাদা আবাহ আপনাকে এতোটাই আকর্ষণ করবে যে গাড়ি থেকে নেমে কাশবনে প্রবেশের ২ মিনিটের ঘুরা পথ অনেক লম্বা মনে হবে!
শরৎকালে কাশ ফুলকে কেন্দ্র করে সারি ঘাটে বসে গ্রাম্য মেলা। কাশফুল, মেলায় বসা অস্থায়ী নাগর দোলা আর বাহারি সাজে সজ্জিত সুন্দরী রমণীর হাত ধরে চলা যুবকের মুক্ত বাকে সারি ঘাট হয়ে উঠে এক আনন্দপুরী। তাই শহুরের যান্ত্রিকতার ভিড়ে একটু প্রাকৃতির ছোঁয়া ও সবুজঘেরা পরিবেশের পাশাপাশি নৌকাভ্রমণে প্রতিদিন এখানে আসছেন শত শত মনুষ। তবে চিন্তারও শেষ নেই ঘুরতে আসা পর্যটকদের, তাদের চিন্তা সেদিন আর হয়তো বেশী দূরে নয় যেদিন হারিয়ে যাবে সারি ঘাটের সারি সারি সাদা ফুল। সারি ঘাটের স্বচ্ছ পানিতে মাছের পরিবর্তে ভেসে বেড়াবে ময়লার স্তুপ।
যাত্রাবাড়ী থেকে ঘুরতে আসা মিম জানায়, মা বোন আর বান্ধবী মিলে সারি ঘাটের কাশফুল দেখতে এসেছেন। সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার সুবাদে এব্যাপারে তাদের জানা শুনা ছিলো, তবে তাদের মা আসতে চাচ্ছিলেন না এখানে। তবে এখানে আসার পর সে মা’ই যেনো সব চেয়ে বেশি খুশি।
পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে সজল এসেছেন সদ্য বিয়ে করা স্ত্রীকে নিয়ে। তিনি জানান, সারি ঘাটের সুনাম সুনেছি অনেক। তবে এখানে এসে দেখি সারি ঘাট কল্পনার চেয়ে সুন্দর।
নারায়ণগঞ্জ থেকে মৌসুমি এসেছেন ফটোগ্রাফার নিয়ে ফটোসেশন করতে। কাশবনে নানা ভঙ্গিতে নিচ্ছিলেন ছবি। তাকে সারি ঘাট নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, জায়গাটির কথা বহু শুনেছি, টিভিতে, সোশাল মিডিয়ায় দেখেছি। তবে এখন এসে দেখি এটা আরও সুন্দর।
স্থানীয় যুবক সায়মন চৌধুরী জানান, রাজধানীর আশেপাশে অনেক কাশবন আছে তবে এতো বড় কাশবন কোথাও নেই। তাছাড়া এই এলাকাটি শহরের খুব কাছে এবং নিরাপদ হওয়ায় লোক সমাগম বেশি হয়।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফয়সল বিন করিম বলেন, দ্রুত নগরায়নের ফলে দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার চিরায়ত রুপ। কেরানীগঞ্জেও দিনদিন বাড়ছে মানুষ, কমছে আবাদি অনাবাদি জমি, তাই যেখানেই মানুষ প্রাকৃতিক পরিবাশ পাচ্ছে তাতেই ঝাপিয়ে পড়ছে। তাছাড়া এলাকাটি শহরের কাছে এবং নিরাপদ জোন হওয়ায় দিনদিন লোকসমাগম বাড়ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে এলাকাটিতে বাড়তি নজরদারির কথাও জানান এ কর্মকর্তা।
সাকিবুল ইসলাম/