বেরোবি প্রতিনিধি: প্রকৃতিতে শীত হলো রিক্ততার প্রতীক। এসময় শীতের রিক্ততা মনকে অবস করে তোলে। যেমন টি করেছিল কবি সুফিয়া কামালের।কিন্তু শীতের রিক্ততা আর অবস মনকে চাঙা করে দেওয়ার জন্য শীতের শিরশির হাওয়ায় আগমন ঘটে ব্যাটমিন্টনের। উচ্চ স্বরে আউট! ব্যাট টাচ! পয়েন্টস অনেকের কাছে এগুলো পরিচিত নাম। প্রকৃতিতে আস্তে আস্তে বইতে শুরু করেছে শীতের হাওয়া। আর শীত মানেই ব্যাডমিন্টনের কোট কাটা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি । শীতের আগমনী বার্তা বোঝার অন্যতম একটি চিত্র এই খেলাটি। শীত আসলেই শহর কিংবা গ্রামে প্রতিটি অলিতে গলিতে ব্যাডমিন্টন খেলার ধুম পড়ে। সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি খেলায় অংশ নেন তরুণরা। তালিকা থেকে বাদ পড়েন না বিভিন্ন বয়সের মেয়েরাও। তারাও শীতের পরশ বুলানো কুয়াশায় মত্ত থাকেন ব্যাডমিন্টন খেলায়।
গ্রামের কথা ভিন্ন। সেখানে অনেক খালি জায়গা রয়েছে। অনায়াসে বড় করে খেলার আয়োজন করা যায় গ্রামে। কিন্তু শহরের চিত্র অনেকটা ভিন্ন। মাঠ থাকলেও খেলার মত অবস্থা নেই। তাই বলে কি খেলা বন্ধ থাকবে। রাস্তার অলি গলিতে শুরু হয়ে যায় ব্যাডমিন্টনের মাঠ সাজানোর প্রস্তুতি। লাইট, নেট, কক, স্ট্যান্ড। টানা খেলতে খেলতে শরীর ঘেঁমে অস্থির। তবুও মানুষ উপভোগ করে খেলাটি। বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেট ও ফুটবল খেলতে অভ্যস্ত থাকলেও ব্যাডমিন্টন নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনা কোনো অংশেই কম নয়। বরং শীতকাল আসলেই এই খেলাটি সব খেলাকে ছাপিয়ে যায়।
শীতের আমেজ কে ঘিরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) চলছে ব্যাটমিন্টন খেলার ধুম।চলছে রাতভর খেলার উৎসব। বিভিন্ন স্থানেই কাটা হয়েছে ব্যাডমিন্টনের কোর্ট। বিশেষত প্রশাসনিক ভবনের পার্শে, শহীদ হলের সামনে, স্বাধীনতা স্মারক মাঠে একাধিক খেলার জন্য কোর্ট তৈরি করেছে শিক্ষার্থীরা। এক পক্ষে দুই জন করে মোট চারজনের অংশগ্রহণে মেতে উঠছে এই খেলায়। ব্যাডমিন্টন কোর্টকে ঘিরেও আড্ডা জমছে দর্শকদের। ক্লাস, পরিক্ষার দৌরঝাপ শেষ করে কেউবা খেলে আবার কেউবা দর্শকসারীতে বসে বন্ধুরা থাকে কবে একটা রাউন্ড শেষ হবে এবং বন্ধুদের ব্যাটটা দৌড়ে আগে গিয়ে নেবে।এ থেকে বাদ পড়ে না মেয়েরাও।তারাও ছেলেদের সাথে সমান তালে খেলাটিকে বিভিন্ন ভাবে জমিয়ে তুলেছে।
এ বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মারুফ হাসান রিফাত তার অনুভূতি ব্যাক্ত করতে গিয়ে বলেন,সেমিস্টার ফাইনাল শেষ হলো। সারাদিনের অবসাদ শেষে বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে যখন ব্যাডমিন্টন খেলি, এটা আমাদের অবসাদ দূর করে যেন মনের ঔষুধ হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া সেল ফোনের জগৎ থেকে বের হয়ে এসে, সবার সাথে কথা বলা দেখা হওয়া এটিও আমাদের মননের বিকাশকে ত্বরান্বিত করে।
ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সাফওয়ান মাহির রিফাত বলেন, শারীরিক ও মানষিক স্বাস্থ্য বিকাশের জন্য খেলাধুলা অপরিহার্য নিয়ামক। তারই ধারাবাহিকতায় বেরোবি ক্যাম্পাসে ব্যাডমিন্টন খেলার আয়োজনপ্রশংসার দাবিদার।আমরা ক্যাম্পাস এ ব্যাডমিন্টন খেলার মাধ্যমে একদিকে যেমন কায়িক শ্রম করতে পারি, তেমনি অন্যদিকে এটি সিনিয়র জুনিয়র সম্পর্ক মজবুত করার একটা সেরা প্লাটফর্মও বটে। সারাদিনের ক্লাস শেষে যখন খেলতে আসি, মানষিকভাবে খুব শান্তি পাই তখন। একদিকে শারীরিক ব্যায়াম, অন্যদিকে মানষিক প্রশান্তি। সবমিলায়ে অসাধারণ অনূভুতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক ড.আল হেলাল বলেন,ক্যাম্পাস এ যে কোনো ধরনের খেলাকে আমি পজিটিভ ভাবে দেখি। ব্যাটমিন্টন তার ব্যতিক্রম নয়। তবে সকল শিক্ষার্থী নিরাপত্তা নিশ্চিত করে খেলবে এই প্রত্যাশা থাকবে। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটুক এই প্রত্যাশা থাকবে।
এম কে পুলক আহমেদ/