দেশের শিশুদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা শিশুদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে চাই। আমি এ লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাও প্রণয়ন করেছি।
বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে ‘টুঙ্গিপাড়া: হৃদয়ে পিতৃভূমি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২২ উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি এ আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমরা অবশ্যই বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করব। এটা আমাদের অঙ্গীকার।
তিনি তার সরকারের রূপকল্প-২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ তুলে ধরে বলেন, ২১০০ সাল নাগাদ এ বাংলাদেশ কীভাবে গড়ে উঠবে আমি সে বিষয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছি। আমাদের লক্ষ্য হলো শিশুরা নিরাপদে থাকবে এবং সুন্দর জীবন পাবে।’
এ বছর ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের অঙ্গীকার, সব শিশুর সমান অধিকার’- প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে জাতীয় শিশু দিবস।
এর আগে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং এরপর ‘মুজিব বর্ষ’ থিম সং ‘টুঙ্গিপাড়া: হৃদয়ে পিতৃভূমি’ শীর্ষক একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা প্রদর্শিত হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুহাম্মদ ফারুক খান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও শিশু প্রতিনিধি শেখ মুনিয়া ইসলাম।
বঙ্গবন্ধুর নাতি-প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা ও শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা, গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের জেলা শাখার সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর দেশে খুনি, যুদ্ধাপরাধী, আলবদর ও রাজাকারদের (পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর) রাজত্ব থাকলেও বাবার স্বপ্ন পূরণ এবং বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে তিনি দেশে ফিরেন।
তিনি বলেন, শিশুরা আমাদের মতো পরিবারের সদস্যদের হারানোর বেদনা নিয়ে বাঁচবে না বরং তারা একটি সুন্দর এবং উন্নত জীবন পাবে তা নিশ্চিত করার জন্য আমি দেশে ফিরে আসি। জাতির পিতা শিশুদের খুব ভালোবাসতেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে গঠিত তার সরকার ১৭ মার্চকে শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শিশুদের সঙ্গে খেলতে পছন্দ করতেন। ‘যখন তিনি (বঙ্গবন্ধু) শিশুদের সঙ্গে খেলতেন, তখন তাকে শিশুর মতো মনে হতো।’ তিনি আরও বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে শিশুরাও ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পায়নি। এমনকি কারবালার ট্র্যাজেডিতে এমন ঘটনা ঘটেনি। সেখানে শিশু ও নারীদের হত্যা করা হয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু বাংলার মাটিতে আমার বাবাকে বাঙালিদের হাতে প্রাণ হারাতে হয়েছে, যাদের জন্য তিনি জীবন উৎসর্গ করেছেন, বছরের পর বছর কারাভোগ করেছেন এবং তাদের জন্য একটি জাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এটা সবচেয়ে বড় কষ্ট।’
সরকার প্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধু সংবিধানে শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন, শিশু অধিকার আইন প্রণয়ন করেছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে শিশুদের জন্য যত্ন ও সুরক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে ১৯৯৬ সালে তার সরকার ক্ষমতায় এসে শিশুদের কল্যাণে প্রতিটি এলাকায় স্কুল প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মতো সামাজিক হুমকি থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থাসহ শিশুদের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
শেখ হাসিনা তার শাসনামলে শিশুদের জন্য গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও আইন প্রণয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় এসে আমরা শিশুদের কল্যাণে আরও অনেক কিছু করেছি।’
তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো টুঙ্গিপাড়ায় পৃথক পৃথক দিনে ১৮ থেকে ২৬ মার্চ কর্মসূচির আয়োজন করবে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ এবং অন্যান্যদের জন্য পৃথক তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আগামী ২১-২৬ মার্চ সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিতব্য ছয় দিনব্যাপী মুজিববর্ষ লোকমেলার উদ্বোধনও করেন।