ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) স্বীকৃত সংসদ ও সংঘ ছাড়া কোনো ক্লাব অথবা ছাত্রসংগঠন গঠন করা যাবে— এমন অনেক শিক্ষার্থীবিরোধী নিয়মে ঠাসা রয়েছে প্রক্টরিয়াল বডির নীতিমালা। যদিও এই নীতিমালাগুলোর বাস্তবিক কোনো প্রয়োগ দেখা যায় না। তবুও অপব্যবহার হতে পারে এমন শঙ্কা থেকে এর সংশোধন করা দরকার বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।
প্রক্টরিয়াল বডির এই নিয়ম ঠিক কবে করা হয়েছে তা কেউ বলতে না পারলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানলগ্নের সময় এটি প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রক্টরিয়াল বিধির কিছু নিয়ম অগণতান্ত্রিক। কিছু নিয়ম হাস্যকর। এসব নিয়ম যুগোপযোগী করা দরকার।
ঢাবির প্রক্টর অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রক্টরিয়াল বিধিমালার ৫ (ঘ) ধারায় বলা হয়েছে, ক্যাম্পাসে স্বীকৃত সংসদ ও সংঘ ছাড়া কোনো ক্লাব, সমিতি কিংবা ছাত্রসংগঠন গঠন করতে দেওয়া হবে না। প্রক্টরের পূর্বানুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে কোনো পার্টি কিংবা বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড করা যাবে না। ৭ ধারায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন বিভাগ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃত ছাত্র সংসদ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী প্রক্টরের পূর্বানুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের সভা করতে পারবেন না।
৬ নং ধারায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত বা সম্মিলিতভাবে শিক্ষার্থী ধর্মঘট ডাকতে পারবেন না এবং কোনো শিক্ষার্থী অন্য কোনো শিক্ষার্থীকে ক্লাস, গবেষণাগার কিংবা গ্রন্থাগারে যেতে বাধা দিতে পারবেন না। ধর্মঘটের দিনে ক্লাসে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীরা নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি বাতিল হওয়ার জন্য নিজেরাই দায়ী থাকবেন, এমন কথাও বলা আছে প্রক্টরিয়াল বিধিমালায়।
প্রক্টরিয়াল বিধিতে শিক্ষার্থীরা নিয়ম না মানলে দুই ধরনের শাস্তির কথা বলা আছে। একজন শিক্ষার্থীকে প্রক্টর সর্বোচ্চ ২৫ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারেন। আর সহকারী প্রক্টর জরিমানা করতে পারেন ৫ টাকা। তবে যদি প্রক্টর মনে করেন এ জরিমানা যথেষ্ট নয়, সে ক্ষেত্রে ওই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করতে পারবেন তিনি।
এসব বিধিমালার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, সংগঠন করা যাবে না বলে যেটি বলা হয়েছে সেটি আসলে সঠিক না। নীতিমালায় বলা হয়েছে সংগঠন করতে হলে অনুমতি নিতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তবুদ্ধি চর্চার জায়গা। এখানে আন্দোলন হবে, প্রতিবাদ হবে, কিন্তু সব করতে হবে শিক্ষার পরিবেশ সমুন্নত রেখে।
এসব বিধিমালার সংস্কার হওয়া দরকার বলে মনে করেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা। তাদের মতে, ব্রিটিশ আমলে যে নিয়ম ছিল সেটিই প্রক্টরিয়াল বডির বিধিমালায় এখনো বজায় রয়েছে। এই নিয়মগুলোর পরিবর্তন হওয়া দরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, যেসব বিধিমালার কথা বলা হচ্ছে সেগুলোর প্রয়োগ নেই। প্রয়োগ না হলেও এই নিয়মগুলোর অপব্যবহার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই এটি সংশোধন করা দরকার।
ডাকসুর সাবেক এজিএস ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, প্রক্টরিয়াল বিধিমালায় এমন কিছু বিধি রয়েছে যেগুলো খুবই হাস্যকর। এই বিধিগুলো গণতান্ত্রিক ও শিক্ষার্থীবান্ধব করা উচিত।