শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা এবং পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসময় শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে হামলাকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
রোববার (১৬ জানুয়ারি) হামলার ঘটনার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আন্দোলনরত শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। আজ রাত ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে মিছিলটি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্ট জাবি শাখার আহ্বায়ক শোভন রহমান বলেন, এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলতেন, ‘শিক্ষার্থীদের গায়ে গুলি করার আগে আমাদের গায়ে করতে হবে।’ অথচ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ও পুলিশ ডেকে এনে নিরীহ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করাচ্ছেন। এটা আমাদের জন্য অত্যান্ত দুঃখজনক।
এদিকে এ ঘটনায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন সংসদ। বিক্ষোভ মিছিলটি জিয়া মোড় এলাকা থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে সমবেত হয়ে। এরপর সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন সংসদের নেতৃবৃন্দ বলেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছিল। সে আন্দোলনে গতকাল (শনিবার) ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন শিক্ষার্থীদের উপর যে হামলা চালিয়েছিল সেখানে সরাসরি শাবির প্রক্টর জড়িত ছিল। আজকে সেই হামলার প্রতিবাদে আজ পুনরায় আন্দোলন করার সময় ভিসির মদদে পুলিশ নিয়ে এসে ছাত্রীদের উপর হামলা করা হয়। এর চেয়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনা আর হতে পারে না। যাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা তারাই ক্যাম্পাসে পুলিশ নিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালাচ্ছে। অনতিবিলম্বে এই হামলার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
এর আগে রোববার বিকাল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্র জোটের নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভ মিছিল শেষে সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করেন তারা। এসময় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দেব ভট্টাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীরা হলের বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার বিষয়ে তাদের হল প্রভোস্টকে বলেছিল। কিন্তু তাদের দাবি কেউ মাথায় নেয়নি। বাধ্য হয়ে ছাত্রীরা যখন আন্দোলন নামে তখন ছাত্রলীগ সেখানে হামলা চালায়। তখন প্রক্টরিয়াল বডির লোকজন ছিল। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বলেন ছাত্রলীগ নাকি সেখানে হামলা করে নাই। শিক্ষার্থীরা নাকি নিজেরাই আহত হয়েছে। ছাত্রলীগ এই হামলার দায় স্বীকার করলেও প্রক্টর সেটা ঘুরিয়ে অন্যদিকে নিচ্ছেন। ।
এছাড়া আন্দোলনরত শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বর পুলিশি হামলায় দোষীদের শাস্তি ও ক্যাম্পাস অভ্যন্তরে পুলিশ ঢুকিয়ে টিয়ারশেল-রাবার বুলেট-সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার নির্দেশনা দেওয়ায় মত জঘণ্য অপরাধ করায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ভিসির পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
সংবাদ বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সুজয় শুভ ও সদস্য সচিব আলিসা মুনতাজ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জায়গায় যৌক্তিক দাবীতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বর পুলিশী হামলা আমাদের আতঙ্কিত করেছে। আমরা মনে করি এহেন কর্মকান্ডের পরে শাবিপ্রবি ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এর আর একদিনও বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করার নৈতিক অধিকার নেই।
উল্লেখ্য, শাবিপ্রবির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হল প্রভোস্ট বডির সকল সদস্যের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য সব বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ হামলার প্রতিবাদে আন্দোলন নামলে শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এ ঘটনারই প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।