The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে আনন্দে শিক্ষার্থীরা

স্কুলের মাঠে মনের আনন্দে বল নিয়ে খেলছে একদল ছাত্রী। দোতলায় আরেক দল শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করছে। তারা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। অনেক দিন পর স্কুল খোলায় তারা বেশ আনন্দিত। এ দৃশ্য আজ মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টায় রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের। শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে সেখানে কথা হয় শিক্ষার্থী সৈয়দা তাসফিয়া তাবাসসুমের সঙ্গে। সে বলে, অনেক দিন পর শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পেরে তার খুবই ভালো লাগছে।

করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে দ্বিতীয় ধাপে এক মাস বন্ধের পর আজ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সশরীর ক্লাস শুরু হয়েছে। প্রথম দফায় আজ খুলেছে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। আগামী ২ মার্চে খুলবে প্রাথমিক বিদ্যালয়।

করোনার কারণে ঘরবন্দী জীবন শেষে শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পারায় আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী সৈয়দা তাসফিয়া তাবাসসুমের মতো অন্য শিক্ষার্থীরাও খুশি। একাধিক বিদ্যালয়ে ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যালয়গুলোতে খুব একটা ভিড় নেই। এর কারণ, সব শ্রেণিতে প্রতিদিন সশরীর ক্লাস হচ্ছে না।

এখন শুধু এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী ও নতুন করে দশম শ্রেণিতে ওঠা শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাস হবে। অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে দুদিন এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে এক দিন করে সশরীর ক্লাস হবে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে যে শিক্ষার্থীরা করোনার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে, তারাই কেবল শ্রেণিকক্ষে যেতে পারছে। এ ছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া যে শিক্ষার্থীদের বয়স এখনো ১২ বছরের কিছু কম, তারা আপাতত অনলাইনে ক্লাস করবে।

মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এর প্রতিফলন দেখা গেল। দোতলার ২০৭ নম্বর কক্ষে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছিলেন শিক্ষক জোহরা শারমিন। তিনি জানালেন, অষ্টম শ্রেণিতে দুদিন সশরীর ক্লাস হবে। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে অনলাইনে ক্লাস হবে।

পাশের ২০৬ নম্বর কক্ষে তখন দেখা গেল, একজন শিক্ষক ল্যাপটপের মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। মো. হালিম শেখ নামের ওই শিক্ষক জানালেন, তিনি ষষ্ঠ শ্রেণির গণিত ক্লাস নিচ্ছেন। কারণ, এদিন ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সশরীর ক্লাস নেই।
পরে পাঠদান নিয়ে কথা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আ. ছালাম খানের সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সশরীর ক্লাসের বাইরের দিনগুলোতে অনলাইনে ক্লাস নেবেন তাঁরা। যে শিক্ষকেরা অনলাইনে ক্লাস নেবেন, তাঁদের বিদ্যালয়ে এসে ক্লাস নিতে হবে। কারণ, অনলাইনে ক্লাসের জন্যই তাঁরা বিদ্যালয়ে প্রযুক্তিগত সুবিধা বাড়িয়েছেন।

ছালাম খান জানান, তাঁদের সব শাখা মিলিয়ে মোট শিক্ষার্থী ২৭ হাজারের মতো। এর মধ্যে প্রায় সবাই দ্বিতীয় ডোজও নিয়েছে। ৫০ জনের মতো এখনো দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া বাকি। এ ছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণির যে শিক্ষার্থীদের বয়স ১২ বছর হয়নি, তারা আপাতত অনলাইনেই ক্লাস করবে।

মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, নিচতলার একাধিক শ্রেণিকক্ষে ক্লাস হচ্ছে। একটি শ্রেণিকক্ষ থেকে দশম শ্রেণির (এসএসসি পরীক্ষার্থী) ক্লাস শেষ করে বের হওয়ার সময় কথা হয় শিক্ষক মো. আরিফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, জীববিজ্ঞান বিষয়ের ক্লাস নিয়েছেন তিনি। এ ক্লাসের প্রায় সবাই করোনার টিকা নিয়েছে। বন্ধের সময়ও তাঁরা অনলাইনে ক্লাস নিয়েছেন।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা শেষ করে কথা হয় শিক্ষার্থী নাহিদ হোসেনের সঙ্গে। সে জানায়, স্কুলে ফিরতে পেরে তার খুব ভালো লাগছে। কারণ, স্কুলে ক্লাস হলে পড়াশোনা বেশি হয়। বাসায় ততটা পড়াশোনা হয় না। এর মধ্যে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় আরও ভালো লাগছে।

বিদ্যালয়টিতে প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী আছে প্রায় তিন হাজার। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ হাফিজুল ইসলাম বলেন, এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর টিকা নেওয়া শেষ হয়েছে। ১২ বছর না হওয়ায় মাধ্যমিকে সব মিলিয়ে ৬০ জনের মতো শিক্ষার্থী টিকা নিতে পারেনি। তাঁরা মনে করছেন, ২ মার্চ যখন প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা সশরীর ক্লাসে ফিরবে, তখন ১২ বছর না হওয়া মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরাও শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পারবে।

দেশে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত (১২ বছরের বেশি বয়সী) মোট শিক্ষার্থী প্রায় ১ কোটি ২৮ লাখ। মাউশির এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (ইএমআইএস) এক কর্মকর্তা গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, প্রথম ডোজ টিকা নেওয়া হয়ে গেছে প্রায় সবার। আর দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছে ৫০ লাখের মতো শিক্ষার্থী।

করোনার সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছিল সরকার। দীর্ঘ ১৮ মাস পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছিল। কিন্তু নতুন করে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ২১ জানুয়ারি থেকে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার, গতকাল সোমবার যা শেষ হয়েছে।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.