বিশ্বব্যাপী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাতের নূন্যতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থাৎ প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষক থাকতে হবে। তবে এই মানদণ্ড বজায় রাখতে ব্যর্থ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২২টি বিভাগ ও একটি ইনস্টিটিউট। প্রতি ২৫ শিক্ষার্থীর বিপরীতে এখানে রয়েছেন একজন শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রকাশিত ৪৭তম বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৩৬টি বিভাগ এবং দুইটি ইনস্টিটিউটে পরিচালিত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এগুলোর মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে সবচেয়ে পিছিয়ে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ। এরপরের অবস্থানে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগ।
ইউজিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জবিতে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ছাত্র ৬৩৪ ও ছাত্রী ৪৩৩ জন। এই বিভাগে মোট শিক্ষার্থী রয়েছেন এক হাজার ৬৭ জন। বিপরীতে পাঠদানে নিয়োজিত মাত্র ২৪ জন শিক্ষক। সে হিসাবে বিভাগটিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ১:৪৪। অর্থাৎ প্রতি ৪৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য বিভাগটিতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন। যা বিশ্বব্যাপী প্রচলিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাতের মানদণ্ডের ধারে-কাছেও নেই।
ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরের অবস্থানে রয়েছে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগ। এই বিভাগে এক হাজার ১০৭ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ২৭ জন। বিভাগটিতে ৪১ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন মাত্র একজন শিক্ষক। এছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে পিছিয়ে থাকার দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে যৌথভাবে আইন ও ফিন্যান্স বিভাগ। এই দুই বিভাগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গড় অনুপাত ১:৩৯, অর্থাৎ প্রতি ৩৯ শিক্ষার্থীর বিপরীতে এই দুই বিভাগে শিক্ষক রয়েছেন একজন।
এছাড়া যেসব বিভাগে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে আন্তর্জাতিক মান নেই সেগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ইসলামিক স্টাডিজ, দর্শন, মার্কেটিং, পরিসংখ্যান, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, সমাজবিজ্ঞান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, লোক প্রশাসন, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন, ভূগোল ও পরিবেশ এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগ। এছাড়া শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে আন্তর্জাতিক মান নেই।
তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ। এই বিভাগে ২১১ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন ২০ জন শিক্ষক, অর্থাৎ প্রতি ১১ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষক রয়েছেন।
ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, জবিতে মোট ১৭ হাজার ৩৮ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ৬৯৫ জন। অর্থাৎ প্রতি ২৫ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে এখানে একজন করে শিক্ষক আছেন।
এর মধ্যে আবার বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে একটা অংশ দীর্ঘ সময় ছুটিতে থাকেন। এতে করে সেশন জট, ক্লাস না হওয়াসহ ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হয়। যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে মানসম্পন্ন পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ব্যাহত হয় শিক্ষা কার্যক্রম।
জবির ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, যদিও আমাদের মতো অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতে আন্তর্জাতিক মান বজায় নেই। তবু শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে আমাদের অবশ্যই শিক্ষক বাড়ানো উচিত। শিক্ষক সংকটের জন্য যদি শিক্ষার্থী ভর্তির পরিমাণ কমানো হয়, তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সুযোগ পেয়ে বসবে। সেটাও করা যাবে না।
জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অবশ্যই আমাদের শিক্ষার আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত কমানোর কোনো বিকল্প নেই। আমরা এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের আবাসনগত অনেক সংকীর্ণতা রয়েছে। আমি শিক্ষক বাড়ানোর পরিবর্তে শিক্ষার্থী কমানোর দিকে মতামত ব্যক্ত করেছি। তবে এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। খুব দ্রুত এর সমাধান করা সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, ইউজিসিতে আমাদের অনেক শিক্ষকের নিয়োগ আটকে আছে। আমরা ইউজিসির সঙ্গে কথা বলে আপাতত এসব নিয়োগ ছাড় দিতে বলছি। তাহলে অনেকটা অনুপাত কমবে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিতে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা কমানো হবে, না কি শিক্ষক নিয়োগ বাড়ানো হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জগন্নাথ তার নির্দিষ্ট আঙ্গিকে চলবে। আমাদের সিন্ডিকেট আছে, একাডেমিক কাউন্সিল আছে, এ বিষয়ে আমার একার সিদ্ধান্ত দেওয়ার কিছু নেই। আমরা সবাই মিটিং করেই সিদ্ধান্ত নেবো। যাতে আমাদের শিক্ষার আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত হয়।