The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
মঙ্গলবার, ১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

শিক্ষকের ভুলে তিন মাস ভুল কোর্সে পড়ল শিক্ষার্থীরা!

কুবি প্রতিনিধি: প্রায় তিন মাস ধরে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদেরকে ভুল কোর্স পড়ানোর অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এমনকি সেই ভুল কোর্সের অধীনে শিক্ষার্থীদের মিডটার্ম পরীক্ষাও নিয়েছিলেন তিনি।

তিন মাস ভুল কোর্স পড়ানোর পর ২৯ জানুয়ারী বিষয়টি বুঝতে পেরে আবার নতুন কোর্স শুরু করেছেন। কোর্স শেষ না হওয়ায় চূড়ান্ত পরীক্ষার পূর্ব নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষায় বসতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। আবার কোর্সটিও তড়িঘড়ি করে শেষ করার চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক। নতুন কোর্স শুরু করে দুইদিনে তিনটি টপিক পড়ানোর পর ২ ফেব্রুয়ারী মিডটার্ম নেন তিনি। এরফলে শিক্ষার্থীরা মৌলিক জ্ঞান অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন। একইসঙ্গে এসব বিষয় তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে বলেও জানিয়েছেন তারা। এর আগে ১ নভেম্বর ভুল কোর্স পড়ানো শুরু করেন তিনি।

অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম সাইদুল আল আমিন। তিনি ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। বিভাগটির স্নাতকোত্তর ২০২২-২৩ সেশনের ‘‌এইচআরএম-৫২৪: ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন’ কোর্স পড়ানোর কথা ছিল সাইদুল আল আমিনের। এর বিপরীতে তিনি তিন মাস ধরে শিক্ষার্থীদের ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট পড়াচ্ছিলেন। গত বছরের ১ নভেম্বর এ সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করেন তিনি। এরমধ্যে ১৮ নভেম্বর ওই কোর্সের একটি মিডটার্ম পরীক্ষাও নিয়েছিলেন।

শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষা আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে চূড়ান্ত পরীক্ষার ১৫ দিন আগে গত ২৯ জানুয়ারী সাইদুল আল আমিন শিক্ষার্থীদের জানান যে, তিনি অসাবধানতাবশত ভুল কোর্স পড়িয়েছিলেন। সেদিনই তিনি নতুন করে নির্ধারিত কোর্স ‘‌ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন’ এর ক্লাস নেয়া শুরু করেন। একইসঙ্গে ভুল কোর্সে নেয়া মিডটার্ম পরীক্ষাটিও বাতিল করেন। ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি দুইদিন ক্লাস নিয়েই তিনি ২ ফেব্রুয়ারি নতুন কোর্সের একটি মিডটার্ম পরীক্ষা নেন তিনি। এমন অ্যাকাডেমিক চাপে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে। এমনকি পূর্ব নির্ধারিত সময় ১৩ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত পরীক্ষাও শুরু হচ্ছে না তাদের।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, কোর্স শেষ না হওয়ায় বিভাগ থেকে মৌখিকভাবে পরীক্ষা শুরু হওয়ার তারিখ পেছানো হয়েছে। যদিও ইতিমধ্যে ওই ব্যাচের বাকি কোর্সগুলোর ক্লাস ও চূড়ান্ত পরীক্ষা পূর্ববর্তী অন্যান্য কার্যক্রম প্রায় ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে গেছে। শুধুমাত্র সাইদুল আল আমিনের নেওয়া কোর্স শেষ নাওয়ায় পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘‌শিক্ষকের এমন উদাসীন আচরণে আমরা বিস্মিত। ওনি এখন টানা ক্লাস নিয়ে কোর্স শেষ করার চেষ্টা করছেন। এটা আমাদের জন্য অনেক চাপ সৃষ্টি করছে। বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও অন্যান্য শিক্ষকদেরকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তবে বিভাগের ‘‌মানহানি’ হওয়ার আশঙ্কায় তারা কেউ এ বিষয়ে কর্ণপাত করছেন না। দিনশেষে যা ক্ষতি হওয়ার শিক্ষার্থীদেরই হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, এ বিষয়ে জবাবদিহী করার মতোও কেউ নেই।’

বিষয়টি ভুল হয়েছে দাবি করে শিক্ষক সাইদুল আল আমিন বলেন, প্রতি দুই বছর পরপর আমাদের সিলেবাস পরিবর্তন হয়। এই কারণে প্রথম দিকে এমন সামান্য ভুলটা হয়েছে। এখানে একান্ত আমার একক ভুলে এমন হয়েছে। ডিপার্টমেন্টেরও হতে পারে৷। তবে এর দায় একান্ত আমারই নিতে হবে।

এতে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক প্রেশারে পড়তে হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তাদের কয়েকটা ক্লাস একটু কষ্ট করতে হয়েছে। তাদের তেমন কোনো প্রেশারে পড়তে হয়নি, হবেও না। যেই ক্ষতিটা হয়েছে, তা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

এ বিষয়ে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. শেখ মকসেদুর রহমানের কাছে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আমি সাক্ষাৎকার দিতে রাজি নই। তোমরা সব সময় আজেবাজে প্রশ্ন নিয়ে আস কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ে এত উন্নয়ন হচ্ছে এগুলো চোখে দেখো না তোমরা? ভুল কোর্স পড়িয়েছে তো কী হয়েছে তাতে? মানুষ ভুল করতেই পারে। তোমার সাথে আমি কোনো কথা বলতে রাজি নই।

ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন ও একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আহসান উল্লাহ বলেন, বিষয়টি জানার পরে আমার কাছে অনেক খারাপ লেগেছে। এই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ওবিই (অবজেক্টিভ বেইসড এডুকেশন) অন্তর্ভুক্ত ছিল (তিন সেমিস্টারের)। আমি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে তাদের মাস্টার্স দুই সেমিস্টারে নিয়ে এসেছি, যাতে তাঁরা অতিদ্রুত একাডেমিক কার্যক্রম শেষ করে চাকুরীতে যোগদান করতে পারে। এখন আমি জানি না তাঁদের কী হবে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকই বলতে পারবেন তিনি এই ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নিবেন।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘‌আমি এটা আপনার থেকে জেনেছি। আপনি আমাকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানান। এরপর আমি গোপনে একটি তদন্ত করব, শিক্ষকদেরকে ডেকে কথা বলব। এরপর অভিযোগের সত্যতা মিললে ব্যবস্থা নিব।’

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.