The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বুধবার, ১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪

শহীদের বাবাকে হাসপাতালের মেঝেতে দেখে তাসনিম জারার ক্ষোভ

ডেস্ক রিপোর্ট: চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গিয়ে কোনও বেড না পেয়ে মেঝেতে পড়ে ছিলেন জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে এক শহীদের বাবা। হাসপাতালে গিয়ে শহীদের বাবাকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে ক্ষোভ জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন তিনি।

তাসনিম জারা তার পোস্টে লিখেছেন, ‘শহীদ পরিবারের প্রতি সম্মান শুধু কথায় নয়, কাজে দেখাতে হবে। গতকাল একটা নিউজ দেখলাম, আবু সাঈদের বাবাকে হেলিকপ্টারে আনা হলো ঢাকা সিএমএইচে। অনেকেই এই খবরে সান্ত্বনা খুঁজে পেয়েছেন- শহীদের পরিবার রাষ্ট্রের কাছ থেকে তাদের প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছে। কিন্তু একই দিনে আরেকটি অভিজ্ঞতা আমাকে বাস্তবতার আরেকটি রূঢ় চেহারা দেখাল।

তিনি লিখেছেন, ‘দুপুর ১২টায় একজন শহীদের বোন ফোন দিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানালেন, তার বাবা গুরুতর অসুস্থ। ডাক্তার আইসিইউতে ভর্তি করতে বলেছেন, কিন্তু কেউ সাহায্য করছে না। অসহায়ভাবে দুই বোন হাসপাতালের এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছেন। আমি উনাকে জানাই যে দ্রুত আসছি। গিয়ে দেখি, উনার বাবা মেঝেতে শুয়ে আছেন। হাসপাতালের সহকারী ডিরেক্টরকে খুঁজে কথা বলার পর অবশেষে একটা সিট ম্যানেজ হয়। কিন্তু দেরিতে চিকিৎসা পাওয়ায় তার কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নটা থেকেই যায়।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করে তিনি লেখেন, কিছুদিন আগেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল শহীদ পরিবার এবং আহতদের ফাস্ট ট্র্যাক সেবা দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে ভিন্ন চিত্র দেখছি। হাসপাতালের নাম বলছি না, কারণ সমস্যাটা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নয়, বরং পুরো সিস্টেমের। শহীদ পরিবারের জন্য ঘোষিত বিশেষ সুবিধা কীভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেটার কোনো মনিটরিং কী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করছে? যদি পরিবারগুলোর অভিযোগ থাকে, সেটা কিভাবে, কোথায় জানাবে? এই সুবিধা নিশ্চিত করতে কী নির্দিষ্ট হেল্পলাইন বা পোর্টাল আছে? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। শুধু ঘোষণা দিয়ে দায় শেষ হলে চলবে না। এটা তো প্রমাণিত হলো যে শহীদের বাবা হাসপাতালের মেঝেতে দিন কাটাচ্ছে।

পোস্টে ডা. তাসনিম জারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সুনির্দিষ্ট ৩টি দাবি তুলে ধরেছেন। সেগুলো হলো-

১. হাসপাতালের প্রবেশপথ এবং প্রধান অংশগুলোতে সাইনবোর্ড বা পোস্টার বসান, যেখানে লেখা থাকবে, আপনি কি জুলাই অভ্যুত্থানে আহত বা শহীদ পরিবারের সদস্য? আমাদের জানান, যেন আমরা আপনাকে দ্রুত সাহায্য করতে পারি। এই পোস্টারে কোথায়, কাকে এবং কীভাবে জানাতে হবে সেই সুনির্দিষ্ট তথ্য যুক্ত করুন, যাতে শহীদ পরিবারের সদস্যদের বিভ্রান্তি না হয়।

২. একটি ২৪/৭ হেল্পলাইন চালু করুন, যেখানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা তাদের সমস্যা জানাতে পারবেন এবং তাৎক্ষণিক সমাধান পাবেন। হেল্পলাইনের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট প্রোটোকল তৈরি করুন। হেল্পলাইন অপারেটরদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করুন, যেন তারা শুধুমাত্র তথ্য সরবরাহ নয়, বরং সমস্যার কার্যকর সমাধান দিতে সক্ষম হন। সেবার মান এবং অপেক্ষার সময় মনিটর করুন। প্রতি সপ্তাহে বা মাসে রিপোর্ট প্রকাশ করুন।

৩. সেবার মান তদারকির জন্য একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করুন। প্রতিটি অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করুন। প্রতিটি অভিযোগের ফলাফল অভিযোগকারীকে লিখিতভাবে জানানোর ব্যবস্থা রাখুন, যেন ভুক্তভোগীরা আশ্বস্ত হতে পারেন যে তাদের কথা শোনা হচ্ছে।

তিনি আরও লিখেছেন, এখানে আকাশ-কুসুম কোনও দাবি করিনি। শুধু আপনাদের পূর্বে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করতে বলছি। আমি যেভাবে প্রস্তাব করেছি এভাবেই করতে হবে, তা না। আপনাদের নিজেদের মতো করেই করুন। তবে যেভাবেই করেন, দ্রুত সমস্যার সমাধান করুন। কথার চেয়ে কাজ দিয়ে শহীদ পরিবারের প্রতি সম্মান দেখান।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.