দেশে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা একটি মেডিকেল কলেজও বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের বেধে দেওয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতের শর্ত পূরণ করতে পারেনি। ফলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের যথাযথ পাঠদান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
জানা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ১০ শিক্ষার্থীর জন্য একজন প্রভাষক এবং ২৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য সহকারী অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক অথবা অধ্যাপক পদমর্যাদার একজন শিক্ষক থাকতে হবে। প্রতি শিক্ষাবর্ষে ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করায় এমন মেডিকেল কলেজে ৭৭ জন শিক্ষক থাকতে হবে। শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা ১০০ হলে শিক্ষক থাকতে হবে ১৫৪ জন। বেসরকারি মেডিকেল কলেজের কোনোটিই বিমএমডিসির এই শর্ত পূরণ করতে পারেনি।
তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৭৩টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫টি মেডিকেল কলেজে কতজন শিক্ষক রয়েছে সেই তথ্য দেয়নি প্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষক সংখ্যার তথ্য দিয়েছে ১৮টি মেডিকেল কলেজ।
তথ্য দেওয়া মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে আদ-দীন উইমেন মেডিকেল কলেজে গত শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে ৮৬ জন আর শিক্ষক রয়েছে ৭৩ জন। ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে ১২৫ জন, শিক্ষক রয়েছেন ১২৩ জন। কুমিল্লার ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ ভর্তি হয়েছে ১১৫, শিক্ষক ১২৩; খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ১০০, শিক্ষক ১; রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ৮৫, শিক্ষক ৬৯; সিলেটের জালালাবাদ রাগিব-রাবেয়ায় শিক্ষার্থী ১২৫, শিক্ষক ১১২, কুমিল্লার সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজে, শিক্ষার্থী ৭৫, শিক্ষক ৫২; চট্টগ্রামের বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ১০০, শিক্ষক ৬০; ফরিদপুর ডায়াবেটিক এসোসিয়েশনে শিক্ষার্থী ৯০, শিক্ষক ৮০; চট্টগ্রামের মেরিন সিটিতে শিক্ষার্থী ৫০, শিক্ষক ৩৭, মানিকগঞ্জের মুন্নু মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী ১১৬, শিক্ষক ৬; কুমিল্লার ময়নামতি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ১০০, শিক্ষক ৭২; সিরাজগঞ্জের খাজা ইউনুস আলী মেডিকেলে শিক্ষার্থী ১০০, শিক্ষক ৭৬; টাঙ্গাইলের কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেলে শিক্ষার্থী ১১৫, শিক্ষক ১০৪; উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৯০। এর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ৭১ জন। ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ৬০, শিক্ষক রয়েছেন ৭০ এবং ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন ১৩০ জন। বিপরীতে শিক্ষক সংখ্যার তথ্য দেওয়া আছে ২ জনের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির বলেন, আমরা বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর কাছে অনেকবার তথ্য চেয়েছি। তবে অধিকাংশ মেডিকেল কলেজ তথ্য দেয়নি। আবার যারা তথ্য দিয়েছে তারা অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়েছে। যে তথ্যগুলো আমরা পেয়েছি সেগুলোই আমরা ওয়েবসাইটে আপলোড করেছি।
তিনি আরও বলেন, ৭৩টি বেসরকারি মেডিকেলের মধ্যে ৬টির অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে। কলেজগুলো শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের প্রতিদ অনুরোধ থাকবে তারা যেন মেডিকেল কলেজগুলো সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে তবেই তাদের সন্তানদের ভর্তি করায়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসানকে ফোন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।