The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪

শব্দ দূষণ মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে গ্রীন ভয়েসের ছাত্র-যুব সমাবেশ ও র‍্যালী

বাঙলা কলেজ প্রতিনিধি: পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রীন ভয়েস এর উদ্যোগে আজ ১৭ অক্টোবর, ২০২৪, বৃহস্পতিবার,সকল ১০:৩০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব এর সামনে ” শব্দ দূষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে” ছাত্র-যুব সমাবেশ ও র‍্যালী অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গ্রীন ভয়েস এর প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবির এর সভাপতিত্বে এবং গ্রীন ভয়েস এর কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক হুমায়ুন কবির সুমন এর সঞ্চালয়নায় ছাত্র-যুব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ,গ্রীন ভয়েস এর শুভানুধ্যায়ী মোঃ আবু সেলিম, গ্রীন ভয়েস এর সহ-সমন্বয়ক আরিফুর রহমান, গ্রীন ভয়েস ঢাকা কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক ইমলাক হোসেন, গ্রীন ভয়েস ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শাখার সংগঠক নাঈম সরকার, গ্রীন ভয়েস তেজগাঁও কলেজ শাখার আহবায়ক মেহেদী হাসান পলাশ,গ্রীন ভয়েস ইডেন কলেজ শাখার সদস্য নুসরাত ইমরোজ তিষা,গ্রীন ভয়েস তিতুমীর কলেজ শাখার সদস্য ফজলে রাব্বী প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে আলমগীর কবির বলেন, প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক পরিবেশের মৌলিক উপাদানগুলো মানুষ কর্তৃক দূষণের শিকার। শব্দ দূষণ,পানি দূষণ, বায়ু দূষণ, মাটি দূষণ যেদিক তাকাই দূষণ আর দূষণ। পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশবাদীদের নানা কর্মসূচি, আন্দোলন প্রতিবাদ, আন্তর্জাতিক নানা চুক্তি, ও বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের সরব উপস্থিতি থাকলেও মানুষ আইন কানুন কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্টে লিপ্ত।

তিনি আরো বলেন,প্রকৃতি ও পরিবেশর ওপর হস্তক্ষেপ নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতো। আসুন আমরা নিজেরাই সচেতন হই, শব্দ দূষণ রোধ করতে, দেশকে বাঁচাই, নিজেরা বাঁচি এবং প্রজন্মকে বাঁচাই।

গ্রীন ভয়েস এর সহ -সমন্বয়ক আরিফুর রহমান বলেন, শব্দদূষণের কারণে শ্রবণশক্তি হ্রাসের পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্য এবং আচার-আচরণ – উভয় ক্ষেত্রেই সমস্যার সৃষ্টি করে। অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত শব্দের কারণে ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাভাবিক কার্যকলাপ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে । শব্দদূষণের কারণে দুশ্চিন্তা, উগ্রতা, উচ্চ রক্তচাপ, টিন্নিটাস, শ্রবণশক্তি হ্রাস, ঘুমের ব্যাঘাতসহ অন্যান্য ক্ষতিকর ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটে।

গ্রীন ভয়েস তিতুমীর কলেজ শাখার আহবায়ক ফজলে রাব্বি বলেন, অবাঞ্ছিত বা অত্যধিক শব্দ মানুষের স্বাস্থ্য, বন্যপ্রাণীর উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। নগরায়নের নতুন মহামারি – শব্দ দূষণ। স্বাভাবিক বা সহনীয় শব্দের মাত্রা ৫৫ থেকে ৬০ ডেসিবেল। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৬০ ডেসিবেলের অধিক শব্দ যদি দীর্ঘসময় ধরে থাকে তাহলে সাময়িক বধিরতা আর ১০০ ডেসিবেলের বেশি হলে স্থায়ী বধিরতা হতে পারে।

গ্রীন ভয়েস তেজগাঁও কলেজ শাখার আহবায়ক মেহেদী হাসান পলাশ বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর অধীনে ২০০৬ সালে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। বিধিমালায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেয়ে আবাসিক এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মানমাত্রা অতিক্রম করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে আবাসিক এলাকায় দিনের বেলায় ৫৫ ডেসিবেল ও রাতের বেলায় ৪৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দ অতিক্রম করতে পারবে না। এ আইনের ১৮ ধারায় বলা আছে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আবাসিক এলাকায় শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্র বাজালে বা আইন অমান্য করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং এক মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এ ছাড়া পরে একই ধরনের অপরাধ করলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৬ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

গ্রীন ভয়েস ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শাখার সংগঠক নাঈম সরকার বলেন, সরকার শব্দ দূষণ রোধে ২০০৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়েছিল, কোন ব্যক্তি শব্দ দূষণের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে কমপক্ষে এক মাস এবং সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদ- এবং ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদ- বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। হাজার হাজার গাড়ি আসা-যাওয়া করছে রাস্তা জুড়ে। কোনো ড্রাইভার নিয়ম মানে না, গতি মানে না, নির্দিষ্ট ট্রেকে গাড়ি চালায় না। সারাক্ষণ সাইড ট্রেক করে, ভুল পথে ওভারটেক করে। আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত গাড়ির প্রত্যেকটি ড্রাইভার। বাসগুলো সবচেয়ে বেশি নিয়ম ভঙ্গ করে। প্রত্যেক চালকই গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রতি মিনিটে মিনিটে নিয়ম ভঙ্গ করলে হর্ন না বাজিয়ে উপায় থাকে না।

গ্রীন ভয়েস ঢাকা কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক ইমলাক হোসাইন বলেন, মানুষের জন্য শব্দের সহনীয় মাত্রা হচ্ছে ৪৫ ডেসিবেল। পারিবারিক বা অফিসের স্বাভাবিক কাজকর্ম ও কথাবার্তা এই সহনীয় মাত্রার মধ্যে থাকে। ৪৫ ডেসিবেলের চেয়ে বেশি মাত্রার শব্দ, শব্দদূষণ হিসেবে বিবেচিত যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আর শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবেল অতিক্রম করলে তা মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একটি ব্যস্ত সড়কে সাধারণত ৭০ কিংবা ৮০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ তৈরি হয়।

গ্রীন ভয়েস ইডেন মহিলা কলেজের সদস্য নুসরাত ইমরোজ তিষা বলেন,শব্দ দূষণে বিপর্যস্ত হচ্ছে নাগরিক জীবন। বিদ্যমান শব্দদূষণ শিশুদের স্বাস্থ্য ও মনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এ দূষণে কানে কম শোনা, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, স্থায়ী মাথাব্যথা, ক্ষুধামন্দা, অবসাদগ্রস্ততা, নিদ্রাহীনতাসহ নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ায় শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত শব্দ বাচ্চাদের মেজাজ খিটখিটে করে তোলে, ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়, পড়াশোনায় অমনোযোগী করে তোলে, তাদের আচরণেও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটায়।

সমাবেশ ও রেলী শেষে প্রায় ১২০ জন শিক্ষার্থী শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, ধানমন্ডি-৩২ ও ধানমন্ডি-২৭ সিগনালে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রচার অভিযান চালায়। তারা চালকদের মাঝে লিফলেট, স্টিকার বিতরণ করেন। উল্লেখ্য পহেলা অক্টোবর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং তৎসংলগ্ন এলাকাতে হর্নমুক্ত রাখতে পরিবেশ অধিদপ্তরের শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক পরিকল্পের সাথে গ্রীন ভয়েস সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.