নূন আনতে পান্তা ফুরায়, টানাটানির সংসার। পরিবারের খরচ জোটাতেই যেখানে হিমশিম খাচ্ছেন বাবা-মা। সেখানে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ বহন করা পরিবারের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য। তবে, অভাব ও শত কষ্টের মধ্যে থেকেও দমে যাননি আসমা আক্তার মিতা। বাউল শিল্পী মোতার হোসেনের কন্যা মিতা এখন ম্যাজিষ্ট্রেট। আসমা আক্তার মিতা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মেয়ে।
৪০ তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন মিতা। অভাবী বাউল শিল্পী বাবা মোতাহার হোসেন লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করতে না পারলেও থেমে যাননি মিতা প্রচেষ্টা। টিউশুনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছেন। অবশেষে ধরা দিয়েছে সফলতা। সেই গরীব পরিবারে বইছে আনন্দের বণ্যা। অভিন্দন জানাতে আসছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
আসমা আক্তার মিতা বাউলশিল্পী মোতাহার হোসেন মন্ডলের মেয়ে। তিন মেয়ে ও এক ছেলে তার। বড় ছেলে ফয়সাল হোসেন রিকো একজন মটরশ্রমিক (বাসের স্টাটার)। বড় মেয়ে রেশমা আক্তার লতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করেছেন। মেঝো মেয়ে আসমা আক্তার মিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে এখন সুপারিশপ্রাপ্ত। ছোট মেয়ে শামীমা আক্তার নিপা দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছেন।
আসমা আক্তার মিতা ২০১০ সালে কেকেইপি সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। কলারোয়া কাজীর হাট কলেজ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত হয়ে ২০১২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃবিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৩.৫৯ পেয়ে অনার্স ও একই বিষয়ে জিপিএ ৩.৬০ পেয়ে মাস্টার্স উত্তীর্ণ হয়। বর্তমানে ৪০ তম বিসিএস প্রশাসন বিভাগে মেধাক্রমে ৬০ পেয়ে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন।
মিতার বাবা বাউল শিল্পী মোতাহার হোসেন বলেন, আমি আধ্যাত্মিক জগতের সাধনা করি গান লিখি, গবেষণা করি। দুনিয়ার অর্থ সম্পদের প্রতি কখনো আমার লোভ ছিল না এখনো নেই। আমার বাবাও ছিলেন আধ্যাত্মিক সাধক। অভাবের মধ্যেই মেয়ে পড়াশোনা করেছে। এখন ম্যাজিষ্ট্রেট হয়েছে এটা আল্লাহ্’র দান। আমি যেভাবে সারাজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি ঠিক তেমনিভাবে যেন আমার মেয়ে মিতাও তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে সেজন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করছি।
আসমা আক্তার মিতা জানান, আমি সব সময় চাইতাম বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটাবো। একটা সরকারি চাকরি পাওয়ার স্বপ্ন ছিল। ভালো পোশাক ভালো খাওয়া দাওয়া এসব অতটা আশা করিনি কোনদিন। আমার কষ্টের টাকা দিয়ে (টিউশনি করে) বই কিনেছি। দিনে ১৫-১৬ ঘন্টা লেখাপড়া করেছি। আজ সাফল্যের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছি। দায়িত্ব পালনকালে সব সময় আমি সঠিক কাজটি করবো।