এ বছর মাধ্যমিকে একজনও পাস করাতে না পারা এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল ও মাদ্রাসা) পাশের সমজাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত করা হবে। ক্ষুদ্র সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে বোর্ড ফাইনাল পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এমন পরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত রোববার চলতি বছরের মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত ফলে দেখা গেছে, সারাদেশে ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীই পাস করেনি। এবার পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ৮৬১টি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সূত্র জানায়, গতকাল সোমবারই শতভাগ ফেল করা ৫১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা সংগ্রহ করেছেন মাধ্যমিক উইংয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিশ্লেষণ করে তারা প্রতিষ্ঠানগুলোর ফল বিপর্যয়ের পেছনে গণিত, ইংরেজি, বিজ্ঞানের মতো কঠিন বিষয়গুলোতে ফেল; প্রতিষ্ঠানের আর্থিক দুরবস্থার কারণে শিক্ষকদের নিয়মিত বেতন না হওয়া, নিয়মিত ক্লাস না নেওয়া, প্রশাসনিক অনিয়ম, বোর্ডের কিছু সিদ্ধান্তের ভুল, করোনা মহামারিসহ শিক্ষার্থীদের দারিদ্র্যসহ নানা কারণ উদ্ঘাটন করেছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা শতভাগ ফেলের কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বিচার-বিশ্লেষণ করছি। প্রকৃত কারণগুলো চিহ্নিত করা গেলে সমাধান করা সহজ হবে।
তিনি জানান, পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণে তারা দেখেছেন, অনেক প্রতিষ্ঠানেই কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক শিক্ষার্থী নেই, অথচ শিক্ষক ঠিকই আছেন। সেখানে অর্থের অপচয় হচ্ছে। এসব কারণে আমরা বিকল্প কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, তা বের করার চেষ্টা করছি। সরকারের কাছে আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ তুলে ধরব।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শতভাগ ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আগে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের এমপিও বন্ধ করা ও নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের সরকারি স্বীকৃতি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিদের চাপে কিছুদিন পরই সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছে। মানবিক কারণ দেখিয়ে তারা মন্ত্রণালয়ে এ সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে ডিও লেটার দেন, এসে তদবির করেন। এসব কারণে কঠোর সিদ্ধান্তেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
একজনও পাস করতে না পারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে– জানতে চাইলে গত রোববার শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরা। বিকল্প পদ্ধতিতে কীভাবে এ সমস্যার সমাধান করা যায়, তা বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যেসব স্কুলে শূন্য পাস, সেখানে শিক্ষার্থী হয়তো একজন, দু’জন বা দশজনের কম। এসব প্রতিষ্ঠান যদি এমপিও নেয় তবে তাদের পাশের স্কুলের সঙ্গে একীভূত করা যায় কিনা, সেটা ভাবা হচ্ছে।