The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪

রাবি ক্যাম্পাস থেকে বিলুপ্তির পথে বিরল প্রজাতির জলমুরগি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, রাবি: গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে মুরগীর সাথে পরিচিত আমরা সবাই কিন্তু জলমুরগির কথা বললে অনেকের হয়ত ভ্রু কুঁচকে যাবে। কপালে দেখা মিলবে চিন্তার ছাপ। তবে হ্যাঁ, এই জলমুরগি নামেই বাংলাদেশে অনিন্দ্য সুন্দর একটি পাখি রয়েছে। অবশ্য পাখিটি আমাদের দেশে অত্যন্ত দুর্লভ প্রজাতির পাখিগুলোর মধ্যে একটি। এই বিরল পাখিটি যত্রতত্রভাবে সব জায়গায় দেখা মেলে না। তবে পাখিদের অঘোষিত অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা ভূমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রায়ই দেখা মিলতো এই পাখিটির।

তবে পর্যাপ্ত খাবার ও আবাসিকতার অভাবে রাবি ক্যাম্পাস থেকে দুর্লভ এই পাখিটি বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাখিপ্রেমি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিরল প্রজাতির এই পাখিটি আগেকার মত এখন আর ক্যাম্পাসে সহসা দেখা না মেলার কথা বলছেন তারা।

তারা বলছেন,আগের মতো এখন আর ক্যাম্পাসে জলমুরগি দেখা যায় না। এই ধরনের ওয়াটার বার্ডগুলা একসময় রহমতুন্নেসা হলের পেছনে সহসা দেখা মিলতো। সেখানে ২/৩ টা জলাশয় ছিলো। তবে বর্তমান সেখানে শেখ হাসিনা হল নির্মিত হওয়ায় জলাধারগুলো পূরণ করে ফেলা হয়েছে। ফলে জলমুরগি ক্রমশ হারিয়ে ফেলেছে তাদের আবাস ও প্রজননস্থল। তাই এদের সংখ্যাও দ্রুতগতিতে হ্রাস পেয়েছে।

জানা যায়, নান্দনিক সৌন্দর্যের অধিকারী এই পাখিটি লম্বায় ৩০-৩৮ সেন্টিমিটার। ঠোঁটের গোড়া প্রবাল লাল, অগ্রভাগ হলদেটে। মাথা, চিবুক, ডানা ও বুক কালচে-মেটে, তাতে থাকে ধূসরের আভা। ডানায় কিছু সাদা দাগ রয়েছে। লেজের তলা সাদা। ব্যাঙাচি, ছোট মাছ, ঘাস বীজ, কীট পতঙ্গ ইত্যাদি এদের খাবার। প্রজনন সময় মে থেকে আগস্ট। ডিম পাড়ে ৪-৭টি। ডিম ফুটে ১৮-২২ দিনে। পাখিটির ইংরেজি নাম Common Moorhen বা Moorhen । বৈজ্ঞানিক নাম Gallinula chloropus।

প্রজনন মৌসুমে চঞ্চুর রং হয় কমলা-লাল; আগাটা থাকে হলুদ। পা ও আঙুল ধূসরাভ-সবুজ হয়ে যায়। প্রজনন মৌসুম বাদে অন্য সময় চঞ্চু ফ্যাকাশে হলুদ। চোখের রং লাল। পা, পায়ের পাতা ও আঙুল অনুজ্জ্বল। স্ত্রী-পুরুষের চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির প্রায় পুরো দেহ বাদামি এবং বুক ও বগলে ধূসর আভা থাকে। পেট সাদাটে। চঞ্চু অনুজ্জ্বল সবুজ। সদ্য ফোটা ছানাগুলো কালচে হয়ে থাকে।

জলমুরগির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক, বাংলাদেশের প্রখ্যাত পাখি গবেষক বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিনুজ্জামান মো. সালেহ রেজার বলেন, সারাদেশের হাওর, বিল, পুকুর, বাদা ও জলজ উদ্ভিদসমৃদ্ধ জলাশয়ে জলমুরগি বিচরণ করে। সচরাচর জোড়ায় বা ছোট দলে থাকে। ওরা ভালো সাঁতারু, পানিতে ডুবে থাকতেও ওস্তাদ। সাঁতার কেটে বা ভাসমান জলজ উদ্ভিদের ওপর হেঁটে হেঁটে ফল, বীজ, কীটপতঙ্গ, শামুক-গুগলি, ব্যাঙ, ছোট মাছ ইত্যাদি খায়।

এই গবেষক বলেন, সাঁতার কাটা ও হাঁটার সময় মাথাটা চমৎকারভাবে আগে-পিছে দোলায়। ডাহুকের মতো সারাক্ষণই ছোট্ট লেজটি নাড়াতে থাকে। থেমে থেমে অনেকটা ব্যাঙের মতো ‘ক্রুক-ক্রুক-ক্রুক-‘ শব্দে ডাকে। তবে প্রজননকালে মুরগির মতো ‘ক্যাহ, কুয়াহ, কাহ-কাহ-কাহ…’ বা ‘কিরক-কিরক-কুরাহ …’ শব্দে ডাকে।

বিরল প্রজাতির এই পাখিটি ক্যাম্পাস থেকে বিলুপ্তির শঙ্কা প্রকাশ করে এই গবেষক বলেন, কিছুদিন আগেও রাবি ক্যাম্পাস ঈর্ষণীয় জীববৈচিত্র্যের অধিকারী ছিল। নির্দিষ্ট বনভূমি ছাড়াও ক্যাম্পাসে ছিল ছোট-বড় ঝোপঝাড়। কিন্তু গত কয়েক দশকে উন্নয়নের নামে জলাশয়সহ বনভূমিগুলো বিলীন করে দেওয়া হয়েছে। ফলে জলমুরগিসহ বিরল প্রজাতির পাখিগুলো রাবি ক্যাম্পাস থেকে বিলুপ্তির হুমকিতে আছে।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.

  1. প্রচ্ছদ
  2. ক্যাম্পাস
  3. রাবি ক্যাম্পাস থেকে বিলুপ্তির পথে বিরল প্রজাতির জলমুরগি

রাবি ক্যাম্পাস থেকে বিলুপ্তির পথে বিরল প্রজাতির জলমুরগি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, রাবি: গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে মুরগীর সাথে পরিচিত আমরা সবাই কিন্তু জলমুরগির কথা বললে অনেকের হয়ত ভ্রু কুঁচকে যাবে। কপালে দেখা মিলবে চিন্তার ছাপ। তবে হ্যাঁ, এই জলমুরগি নামেই বাংলাদেশে অনিন্দ্য সুন্দর একটি পাখি রয়েছে। অবশ্য পাখিটি আমাদের দেশে অত্যন্ত দুর্লভ প্রজাতির পাখিগুলোর মধ্যে একটি। এই বিরল পাখিটি যত্রতত্রভাবে সব জায়গায় দেখা মেলে না। তবে পাখিদের অঘোষিত অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা ভূমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রায়ই দেখা মিলতো এই পাখিটির।

তবে পর্যাপ্ত খাবার ও আবাসিকতার অভাবে রাবি ক্যাম্পাস থেকে দুর্লভ এই পাখিটি বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাখিপ্রেমি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিরল প্রজাতির এই পাখিটি আগেকার মত এখন আর ক্যাম্পাসে সহসা দেখা না মেলার কথা বলছেন তারা।

তারা বলছেন,আগের মতো এখন আর ক্যাম্পাসে জলমুরগি দেখা যায় না। এই ধরনের ওয়াটার বার্ডগুলা একসময় রহমতুন্নেসা হলের পেছনে সহসা দেখা মিলতো। সেখানে ২/৩ টা জলাশয় ছিলো। তবে বর্তমান সেখানে শেখ হাসিনা হল নির্মিত হওয়ায় জলাধারগুলো পূরণ করে ফেলা হয়েছে। ফলে জলমুরগি ক্রমশ হারিয়ে ফেলেছে তাদের আবাস ও প্রজননস্থল। তাই এদের সংখ্যাও দ্রুতগতিতে হ্রাস পেয়েছে।

জানা যায়, নান্দনিক সৌন্দর্যের অধিকারী এই পাখিটি লম্বায় ৩০-৩৮ সেন্টিমিটার। ঠোঁটের গোড়া প্রবাল লাল, অগ্রভাগ হলদেটে। মাথা, চিবুক, ডানা ও বুক কালচে-মেটে, তাতে থাকে ধূসরের আভা। ডানায় কিছু সাদা দাগ রয়েছে। লেজের তলা সাদা। ব্যাঙাচি, ছোট মাছ, ঘাস বীজ, কীট পতঙ্গ ইত্যাদি এদের খাবার। প্রজনন সময় মে থেকে আগস্ট। ডিম পাড়ে ৪-৭টি। ডিম ফুটে ১৮-২২ দিনে। পাখিটির ইংরেজি নাম Common Moorhen বা Moorhen । বৈজ্ঞানিক নাম Gallinula chloropus।

প্রজনন মৌসুমে চঞ্চুর রং হয় কমলা-লাল; আগাটা থাকে হলুদ। পা ও আঙুল ধূসরাভ-সবুজ হয়ে যায়। প্রজনন মৌসুম বাদে অন্য সময় চঞ্চু ফ্যাকাশে হলুদ। চোখের রং লাল। পা, পায়ের পাতা ও আঙুল অনুজ্জ্বল। স্ত্রী-পুরুষের চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির প্রায় পুরো দেহ বাদামি এবং বুক ও বগলে ধূসর আভা থাকে। পেট সাদাটে। চঞ্চু অনুজ্জ্বল সবুজ। সদ্য ফোটা ছানাগুলো কালচে হয়ে থাকে।

জলমুরগির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক, বাংলাদেশের প্রখ্যাত পাখি গবেষক বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিনুজ্জামান মো. সালেহ রেজার বলেন, সারাদেশের হাওর, বিল, পুকুর, বাদা ও জলজ উদ্ভিদসমৃদ্ধ জলাশয়ে জলমুরগি বিচরণ করে। সচরাচর জোড়ায় বা ছোট দলে থাকে। ওরা ভালো সাঁতারু, পানিতে ডুবে থাকতেও ওস্তাদ। সাঁতার কেটে বা ভাসমান জলজ উদ্ভিদের ওপর হেঁটে হেঁটে ফল, বীজ, কীটপতঙ্গ, শামুক-গুগলি, ব্যাঙ, ছোট মাছ ইত্যাদি খায়।

এই গবেষক বলেন, সাঁতার কাটা ও হাঁটার সময় মাথাটা চমৎকারভাবে আগে-পিছে দোলায়। ডাহুকের মতো সারাক্ষণই ছোট্ট লেজটি নাড়াতে থাকে। থেমে থেমে অনেকটা ব্যাঙের মতো 'ক্রুক-ক্রুক-ক্রুক-' শব্দে ডাকে। তবে প্রজননকালে মুরগির মতো 'ক্যাহ, কুয়াহ, কাহ-কাহ-কাহ...' বা 'কিরক-কিরক-কুরাহ ...' শব্দে ডাকে।

বিরল প্রজাতির এই পাখিটি ক্যাম্পাস থেকে বিলুপ্তির শঙ্কা প্রকাশ করে এই গবেষক বলেন, কিছুদিন আগেও রাবি ক্যাম্পাস ঈর্ষণীয় জীববৈচিত্র্যের অধিকারী ছিল। নির্দিষ্ট বনভূমি ছাড়াও ক্যাম্পাসে ছিল ছোট-বড় ঝোপঝাড়। কিন্তু গত কয়েক দশকে উন্নয়নের নামে জলাশয়সহ বনভূমিগুলো বিলীন করে দেওয়া হয়েছে। ফলে জলমুরগিসহ বিরল প্রজাতির পাখিগুলো রাবি ক্যাম্পাস থেকে বিলুপ্তির হুমকিতে আছে।

পাঠকের পছন্দ

মন্তব্য করুন