রাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু-বিষু-বিহু ২০২৪ উপলক্ষে আগামী ২৩ ও ২৪ এপ্রিল রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুই দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া, ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কনসার্ট এর আয়োজন করা হয়েছে।
দুই দিনব্যাপী বৈসাবি অনুষ্ঠানসূচির প্রথম দিনে (২৩ এপ্রিল) সকাল ৯.৩০ ঘটিকায় র্যালীর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হবে। তারপর ১০ ঘটিকা হতে বলি, রশি,সুকইসহ অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হবে। একইদিনে বিকেল ৩ ঘটিকায় ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হবে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনের সূচিতে রয়েছে সকাল ১০ ঘটিকায় পানি খেলা ও স্টল প্রদর্শনী। বিকেল ৩ ঘটিকায় আলোচনা সভা ও পুরষ্কার বিতরনী। সবশেষে সন্ধ্যা ৬ ঘটিকায় শুরু হবে আকর্ষনীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কনসার্ট।
দুই দিনব্যাপী আয়োজিত বৈসাবির এই অনুষ্ঠানে উদ্ভোধক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাবিপ্রবি উপচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার (এমপি)।
উল্লেখ্য, বৈসাবি হচ্ছে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার প্রধান তিন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী সমাজের বর্ষবরণ উৎসব। এটি তাদের প্রধান সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোর একটি। এই উৎসবটি ত্রিপুরাদের কাছে বৈসু, মারমাদের কাছে সাংগ্রাই এবং চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের কাছে বিজু নামে পরিচিত। বৈসাবি নামকরণও হয়েছে এই তিনটি উৎসবের প্রথম অক্ষরগুলো নিয়ে।
ত্রিপুরা সম্প্রদায় বৈসু উৎসবের মাধ্যমে পুরনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানায়।উৎসবের প্রথম দিন ত্রিপুরা ছেলেমেয়েরা ফুল দিয়ে ঘর সাজায়। কাপড়চোপড় ধুয়ে পরিষ্কার করে। ঝুড়িতে ধান নিয়ে তারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে মোরগ-মুরগিকে ছিটিয়ে দেয়। ত্রিপুরা নবদম্পতি ও যুবক-যুবতিরা নদী থেকে কলসি ভরে পানি এনে গুরুজনদের গোসল করানোর মাধ্যমে আশীর্বাদ গ্রহণ করে। বৈসু শুরুর দিন থেকে গরয়া বা খেরেবাই নৃত্য করে থাকে।
মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন তিন দিন ধরে সাংগ্রাই উৎসব পালন করে। বছরের শেষ দুই দিনের প্রথম দিন তারা পালন করে ‘ফারাং রিলং পোয়ে’ অর্থাৎ বুদ্ধের স্নান উৎসব। এদিন মারমা সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ সবাই মিলে বুদ্ধমূর্তিগুলোকে নদীর ঘাটে নিয়ে যায়। তার পরের দিনগুলোতে শুরু হয় মারমা সম্প্রদায়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান ‘রিলং পোয়ে’ অর্থাৎ জলকেলি উৎসব। এই উৎসবে আদিবাসীদের সবাই সবার দিকে পানি ছুড়ে উল্লাসে মেতে ওঠে, যেন গত বছরের সব দুঃখ, পাপ ধুয়ে যায়।
চৈত্রের শেষ দুই দিন এবং পহেলা বৈশাখ, এই তিন দিন পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ আদিবাসী সম্প্রদায় চাকমারা মহাসমারোহে বিজু উৎসব পালন করে। উৎসবের প্রথম দিন তারা বুদ্ধমূর্তিকে স্নান করায়। রাতে সারি সারি আলো জ্বালিয়ে সব গ্রামকে উৎসবের আলোতে উদ্ভাসিত করে রাখা হয়। চৈত্রের শেষ দিনকে মূল বিজু হিসেবে পালন করা হয়। এটাই তাদের মূল উৎসব। গজ্যাপজ্যা অনুষ্ঠিত হয় নববর্ষের প্রথম দিন। এদিন চাকমা শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীরা বড়দের স্নান করিয়ে দিয়ে আশীর্বাদ প্রার্থনা করে। সন্ধ্যায় তারা বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে ধর্ম অনুশীলনে রত হয়, ভিক্ষু সংঘের ধর্মোপদেশ শোনে এবং বিশেষভাবে প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করে।