রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়েছে। শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাবি প্রশাসন ও ১৭ টি হলের সমন্বয়ে সিনেট ভবনের সামনে থেকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শুরু হয় র্যালি।
এরপর র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাশ দিয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ হয়ে সিরাজী ভবন ও প্যারিস রোড হয়ে সিনেট ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
বিশ্ব শিক্ষক দিবসের কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ১১ টায় শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনে বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আলোচনা ও শিক্ষক সম্মাননা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের মাধ্যমে শুরু হয় শিক্ষক দিবসের আলোচনা সভা ও শিক্ষক সম্মাননার অনুষ্ঠান।
এ বছর বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য, ‘শিক্ষকের কন্ঠস্বর : শিক্ষায় একটি নতুন সামাজিক অঙ্গীকার।’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ৩ জন শিক্ষককে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে যে তিনজন শিক্ষককে সম্মাননা প্রদান করা হয় তারা হলেন রাবি অর্থনীতি বিভাগের সাবেক প্রফেসর ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সাবেক উপার্চায প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম, রাবি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক প্রফেসর ড. দাশ বাসদেব কুমার, ও প্রফেসর ড. মো.একে.এম আজহারুল ইসলাম বীর প্রতীক।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড.রফিকুল ইসলাম বলেন,”আজকে যে গুণী শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে তাদেরকে সম্মান প্রদানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় নিজের সম্মান বৃদ্ধি করেছে। আশা রাখছি বিশ্ববিদ্যালয় এই ধরনের আয়োজন বারবার আয়োজন করবে। শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় বিদ্যালয় থেকে। গ্ৰিক দার্শনিক এরিস্টটল বলেছিলেন শিশুদের শিক্ষায় শিক্ষকদের অবদান তার অভিভাবকদের থেকেও বেশি। শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে অভিভাবকদের থেকেও বেশি অবদান রাখে তার শিক্ষকরা।
তিনি আরো বলেন, শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকদের কঠোর পরিশ্রম ও জ্ঞান উৎসর্গ করার স্বীকৃতি হলো বিশ্ব শিক্ষক দিবস। একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি অলঙ্কারিত করার দায়িত্ব আমাদের। মনে রাখতে হবে শিক্ষা শুধুমাত্র জ্ঞান প্রণয়নের জন্য নয়। শিক্ষকরা যে অনুপ্রেরণা ও রোল মডেল তৈরি করেন তা শিক্ষার্থীদের জীবনকে আলোকিত করবে।”
উপার্চায প্রফেসর ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, “শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড বা শিক্ষক জাতি তৈরি করেন, এই কথাটাই কিছুটা কমতি আছে বলে আমি মনে করি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন আমরা কি এমন কোন রাষ্ট্রে দেখতে পারবো যেখানে সকল শিক্ষক ভালো এবং সকল ছাত্ররা খারাপ আবার সকল ছাত্ররা ভালো শিক্ষকরা ভালো নয়, তারমানে শিক্ষকতা পেশাটা আদানপ্রদান এর ব্যাপার। ভালো শিক্ষক যেমন ভাল ছাত্র তৈরি করে ভালো ছাত্র তেমন ভালো শিক্ষক তৈরি করে।
তিনি আরো বলেন, আমরা বর্তমানে ইতিহাসের একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি আমাদের সামনে সম্ভাবনা ও আশাবাদী হওয়ার সুযোগ আছে। আমাদের কর্মকাণ্ডই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোন প্রকার দলীয় আঞ্চলিকতা ও আত্মীয়তা দেখা হবে না, কেবল গুন ছাড়া। আগস্ট ও জুলাই মাসে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা বহু শৃঙ্খলা ভেঙে দিয়েছে ওই শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যাবে না আমরা সেই চেষ্টাই করবো। জুলাই আগস্ট এ শহীদদের রক্তকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। সুতরাং আমারা ব্যর্থ হতে পারি না।
এছাড়া ও বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এ দুটি পর্যায়ে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। স্নাতক পর্যায়ের রচনার বিষয় – আমার দেখা সেরা শিক্ষক। স্নাতক পর্যায়ে তিনজন প্রতিযোগিকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। তারা হলেন স্নাতক- আমার দেখা সেরা শিক্ষক,প্রথম মো. শামিমুল আলম- সমাজকর্ম বিভাগ, দ্বিতীয় রাফায়েত আহমেদ- নাট্যকলা বিভাগ,ফাহিমা খাতুন- উদ্ভীদ বিদ্যা বিভাগ। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বিষয় ছিল আমার শিক্ষককে আমি যেভাবে দেখতে চাই। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ও তিনজনকে পুরস্কৃত করা হয়। তারা হলেন,প্রথম মো. বায়েজিদ- আরবি বিভাগ,দ্বিতীয় মো. মিনহাজুল আবেদীন- শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট তৃতীয় মো. হাবিবুর রহমান- রসায়ন বিভাগ।
উল্লেখ্য, শিক্ষকদের সম্মানে ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রতি বছর অক্টোবরের ৫ তারিখে বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি উদযাপন করে আসছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।