রাবি প্রতিনিধি: সবার জীবনে থাকে একটি স্বপ্ন। পরিশ্রমের মাধ্যমেই তা প্রতিফলিত হয়। স্বপ্ন বাস্তবরূপে ধরা দেয় তখন আনন্দের সীমা থাকে না। আর বিশ্ববিদ্যালয় সেই স্বপ্নগুলোকে বাস্তবরূপ দেবার সবচেয়ে বড় জায়গা। এ সিঁড়িতে পা দিতেই আনন্দ উচ্ছ্বাস বয়ে আনে হৃদয়ে। নতুন করে শুরু হয় পথচলা। নবীন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত আজ মতিহারের সবুজ গালিচা। মাঘের তীব্র শীতের সকালে ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম ক্লাসটি করতে এসেছিলেন একদল প্রাণোচ্ছল নবীন।
মঙ্গলবার (১লা নভেম্বর) সকালে একযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সব বিভাগে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের অরিয়েন্টশন ক্লাস। এদিন উৎসবের আমেজে প্রত্যেক বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আলাদাভাবে রজনীগন্ধা, গোলাপ দিয়ে বরন নেয় নিজ নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের। এ সময় শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতিমূলক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলতে নবীনদের প্রতি নির্দেশনা দেন।
মাঘের প্রথমার্ধের এই দিনে বেলা বাড়তে বাড়তে কুয়াশার চাদর ভেদ করে আধো ভেজা সূর্যটাও হেসে দিয়েছিল। সেই হাসির ছোঁয়া লেগেছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চার হাজার স্বপ্নচারীর উদীপ্ত প্রাণেও। সেই নবীন প্রাণের উদ্দীপনা ছুঁয়ে গেছে ৭৫৩ একর সবুজ মতিহার চত্বরে। নবীনদের পদ চারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে প্রশস্ত প্যারিস রোড, জোহা চত্বর, শহীদ মিনার, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বর, চারুকলা, টুকিটাকি চত্বর, আমতলা, শেখ রাসেল চত্বর, শহীদ মিনার, কেন্দ্রিয় ক্যাফেটেরিয়া, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বদ্ধভূমিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ভবন।
আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে নতুন ক্যাম্পাসে নতুন জীবনের শুরুর দিনে কথা হয় আইন বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী ফারহান সুহেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার প্রত্যাশা ছিল, অনেক সুন্দর একটা ক্যাম্পাস হবে, অনেক বড় একটা ক্যাম্পাস হবে। ক্যাম্পাস এসে দেখলাম, যেমন ভেবেছিলাম তেমনই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টা। অনেক সাজানো আর সুন্দর ক্যাম্পাস। এমন একটা ক্যাম্পাস পেয়ে আমি সত্যি উচ্ছ্বসিত আর গর্বিত।
উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী আশিকুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনের অনুভূতি অন্য রকম। ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। যেমনটি ভেবেছিলাম তার চেয়ে অনেক আনন্দের। আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বাকি দিনগুলোও এভাবে সহপাঠী, বড় ভাই-বোনদের সঙ্গে আনন্দে কাটবে।
খুলনা বিভাগ থেকে পড়তে আসা সাবরিনা সুলতানা বলেন, অনেক স্বপ্ন আছে। সেসব পূরণ করতে এই ক্যাম্পাসে পা রেখেছি। সেসব স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে আর বড় প্লাটফরম হয় না। আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি রাবির শিক্ষার্থী হতে পেরে।
সারা দেশ থেকে আসা এই নবীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন বিভাগের বড় ভাই-বোনেরা। পরিচিত হচ্ছেন নবীন সহপাঠীদের সঙ্গেও। এ যেন দেশের বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিদের এক মিলনমেলা। নবীনদের আগমনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীরাও উচ্ছ্বসিত। ক্যাম্পাসের চত্বরে চত্বরে নবীনদের নিয়ে আড্ডা-গানে মেতে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। অনেক নবীনের সঙ্গে আবার তাদের অভিভাবকদেরও দেখা গেছে। নবীনদের স্বপ্ন পূরণের পথের এই সহায়কেরাও এসেছেন সন্তানদের সঙ্গে। ক্যাম্পাসে পুরোটা দিন অতিবাহিত হয়েছে এমনই এক আনন্দঘন পরিবেশে।
র্যাগিংমুক্ত, সৌহার্দ ও সম্প্রীতি পরিবেশে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.আসাবুল হক। তিনি বলেন, নবীন শিক্ষার্থীদের স্মৃতির পাতায় অন্যন্য স্থান করে নেবে আজকের এই দিনটি। তাদের পাশে সবসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা সকল সমস্যা কাটিয়ে উচ্ছ্বাসে দিন কাটবে এই নবীনদের।