ট্রেনের ভেতরে দমবন্ধ অবস্থা। গরমে অস্থির হয়ে কেউ গায়ের জামা খুলে ফেলেছেন। আবার কেউ হাতপাখা আর বই নাড়ছেন। প্রতিটি দরজার সামনে জটলা। ওই ট্রেনের সামনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীরা শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ করেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাঁদের গায়ে হাত তোলা হয়েছে। টিকিট থাকা সত্ত্বেও তাঁদের ঘাড়ধাক্কা দিয়ে ট্রেন থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এখন এ ঘটনার বিচার করতে হবে। সবাইকে এক ট্রেনে নিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় তাঁরা রেললাইন ছাড়বেন না। এর মধ্যে বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ারও দাবি করেন তাঁরা।
এভাবে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা বেজে যায়। ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের দাবি মেনেই কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত কোচ লাগানোর চেষ্টা করছে। এটা রাজশাহী ও ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী আন্তনগর পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের ঘটনা। বিকেল চারটায় ওই ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল।
উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য রাজশাহী রেলস্টেশনে র্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার ট্রেনের সামনে শুয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে তাঁদের সব অভিযোগ শোনেন এবং ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। তিনি তাঁদের বলেন, সবাইকে এক ট্রেনে নেওয়া সম্ভব নয়, রাতের ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হবে। তখন শিক্ষার্থীরা তাঁর কাছে লিখিত চান। তিনি একটি কাগজে তাঁর লিখিত বক্তব্য দেন। তখন প্রায় দেড় ঘণ্টা বিলম্ব হয়ে যায়। শুয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা উঠে পড়েন। সবাইকে রেললাইন থেকে সরে আসতে বলেন।
এরই মধ্যে একজন এসে বললেন, ‘রাতের ট্রেনেই যদি যাব তাহলে এতক্ষণ গলা ফাটাইলাম কেন। কেন আমাদের ঘাড়ধাক্কা দেওয়া হলো, কেন ট্রেন থেকে বের করে দেওয়া হলো। কেন গালাগাল করা হলো। এর বিচার চাই।’ এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে শতাধিক শিক্ষার্থী ‘বিচার চাই, বিচার চাই’ বলে আবারও স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। আবারও অচলাবস্থা শুরু হয়ে যায়।
নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকেন। সবচেয়ে উত্তেজিত এক শিক্ষার্থী তখন বলেন, তাঁদের সঙ্গে পাকিস্তানিদের মতো আচরণ করা হয়েছে। তাঁদের অনেকের টিকিট থাকা সত্ত্বেও ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। এর বিচার করতে হবে। কেন তাঁদের গায়ে হাত তোলা হবে। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সবাই আবারও ‘বিচার চাই, বিচার চাই’ স্লোগান দিতে থাকেন।
এ সময় শিক্ষার্থীদের ভেতর থেকে একটি পাথর ছুড়ে মারা হয়। পাথরটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল যমুনার ক্যামেরাপারসন আবদুল জাবিদের মাথায় লাগে। এতে তিনি আহত হন। তখন একটি মেয়ে ভিড়ের মধ্য থেকে বলতে থাকেন, তাঁদের সুষ্ঠু আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে প্রশাসনের লোকেরাই এটা করেছে। একজন শিক্ষার্থী বলেন, তাঁদের আরও দাবি আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বিভাগীয় শহরে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁদের সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে ওই ট্রেনের সঙ্গে আরেকটি কোচ লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়। তখন হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়, শুধু ইঞ্জিন যাবে নতুন কোচ আনতে। রেললাইন থেকে সবাইকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করা হয়। বিকেল ৫টা ৫৩ মিনিটে শিক্ষার্থীরা সরে দাঁড়ালে ইঞ্জিন নতুন কোচ আনতে যায়।
পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কারও টিকিট নেই। বসার কিংবা দাঁড়ানোর কোনো টিকিটই নেই। তাঁরা এখন বলছেন, তাঁদের না নিয়ে ট্রেন যেতে পারবে না। ভেতরে যতটা সম্ভব নেওয়া হয়েছে। তাঁরা এখন ট্রেনের ছাদে উঠতে চান। উঠতে দেওয়া হয়নি। তাঁদের রাতের ট্রেনে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তখন তাঁরা বলা শুরু করেন, রাতের ট্রেন আগাম ছাড়তে হবে। কিন্তু এটা তো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আছেন। অতিরিক্ত কোচ লাগিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।