বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ বিভিন্ন প্রজাতির বাহারি রঙের দেশি বিদেশি রঙিন মাছের চাষাবাদে বার্ষিক সাড়ে ৪লক্ষ টাকা আয় করছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাগর সরকার। শখের বশে করোনা কালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অবসর সময় কাটানোর জন্য তিন হাজার টাকায় শুরু করলেও মাত্র তিন বছরেই তরুণ এ উদ্যোক্তা পেয়েছেন ব্যাপক সাফল্য।
শুরুতে কোনো প্রশিক্ষন ছাড়াই ইউটিউব দেখে নিজেই কিছু করার প্রচেষ্টা থেকে তিনি এই মাছচাষ শুরু করেন। ছোট পরিসরে মাত্র ৩ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে কিছু অটো ব্রিডিং রঙ্গিন মাছ বাড়ির আঙ্গিনায় গর্ত করে পলিথিনের মধ্যে ২০২০ সালে শুরু করে এর পরে ২০২১ সাল থেকে বানিজ্যিক ভাবে চাষ শুরু করে এবং সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে ১৮ কাঠার একটি পুকুরে মাছ উৎপাদন শুরু করেন।
সেখান থেকে উত্তরোত্তর সাফল্যের কারনে সে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে পুরুষ্কার প্রাপ্ত হয়। স্বল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে তিনটি বড় পুকুরে ১৮ টি চৌবাচ্চাতে দেড় লক্ষ্যের মতো ১৮ থেকে ২০ প্রজাতির মাছ আছে। যা থেকে তার বর্তমান মাসিক আয় হয় ৪৫ হতে ৫০ হাজার।
পুরো নাম মোঃ সাগর সরকার। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সরকারতারী গ্রামের বাসিন্দা । লেখাপড়া শেষ করছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিস বিভাগ থেকে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর লক্ষ্য থাকে লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করার কথা সেখানে তিনি চাকরির পিছনে না ছুটে করোনা কালীন সময়ে অবসর সময় কাটানোর জন্য ইউটিউব দেখে সৌখিন রঙিন মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হন ।
২০১৮ সাল থেকে শখের বশে করলেও ২০২২ সালে বানিজ্যিক ভাবে রঙিন মাছ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে খামারে মলি, গাপ্পি, প্লাটি, সর্টেল, জেব্রা, গোরামী, কৈ কার্ফ, কমেট, গোল্ড ফিস, এন্জেল, বেটা ফাইটা, সিল্কি কই, এন্জেল, প্লাটিসহ ১৮ থেকে ২০ প্রজাতির মাছ আছে। যা দেশের বিভিন্ন জেলাতে বিক্রি হচ্ছে।
তরুণ এ উদ্যোক্তা বলেন, করোনা কালিন সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। বাসায় বসে থেকে সময় কাটতেছে না, এই সময় টা কাটানোর জন্য এবং নিজে কিছু করার প্রচেষ্টা থেকে ইউটিউবের ভিডিও থেকে ধারণা নিয়ে শুরু করি সৌখিন রঙিন মাছ চাষ। পরবর্তীতে ২০২১ সালে রঙিন মাছ বিক্রির জন্য নিকটস্ত বাজারের একটা দোকানে যোগাযোগ করি। প্রথম দিনেই ১৫০ মাছ নিলো দেখলাম ভালো টাকা আসলো এর পরে মাছ বিক্রি করে নতুন মাছ নিয়ে আসা শুরু করি। বাজারে ঐ সময় এতো চাহিদা যে আমার উৎপাদিত মাছ দিয়ে পূরন করতে পারছিলাম না এবং পাশাপাশি এক নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করি।
আর এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যখন একটি ৪৫ শতক বাংলা মাছের পুকুরে রঙিন মাছ চাষ করতে চাইলে প্রথমে পরিবারের লোকজন কোন ভাবে রাজি হতে চায় না। তাদের ইচ্ছা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে একটি সরকারি চাকরি করা কিন্তু ঔ সময় আমি সিদ্ধান্ত নেই যে আমি উদ্যোক্তা হয়ে উঠবো। এর পরে সাহস করে ২০ হাজার টাকা এক আপুর থেকে ধার নেই। সেই টাকায় কিছু কৈ কার্ফ ও কমেট মাছ নিয়ে এসে কোন প্রশিক্ষণ ছাড়া ইউটিউব দেখে মাছের রেনু করতে আমি সফল হই এর পরে বাসায় অনেক বুঝানোর পরে ৪৫ শতক পুকুরে মাছ চাষ শুরু করি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর ২০০ কোটি টাকার রঙিন মাছ আমদানি হয়ে থাকে জাপান ও থাইল্যান্ড থেকে। আমার ভবিষ্যতে চিন্তা প্রশিক্ষণ দিয়ে কিছু তরুণ উদ্যোক্তা গড়ে তোলা এবং এই রঙিন মাছ দেশের চাহিদা পূরণ করে বাহিরের দেশ গুলোতে রপ্তানি করা। এতে করে একদিকে যেমন আমদানি বন্ধ হবে অন্য দিকে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে পাশাপাশি বেকারত্ব ঘুচে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।