ডা. পল তেওয়াকি জোরাম প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র নাউরুর দাঁতের ডাক্তার। দেশটির ১৩ হাজার জনগণের দাঁতের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত আছেন তিনি। ডা. পলের একজন সহযোগীও আছেন। তার মানে, দেশটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবার দাঁতের চিকিৎসার জন্য ডেন্টিস্ট এই দুজন!
তবে নাউরুর এই দুই দাঁতের ডাক্তারের সঙ্গে কাজ করেন একজন সিনিয়র ডেন্টাল সার্জন, যিনি আবার নাউরুর নাগরিক নন। পাশের দ্বীপরাষ্ট্র ফিজির ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিন থেকে ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) করেছেন ডাক্তার পল।
নাউরুর প্রায় সব বাসিন্দাই ডা. পলকে চেনেন। চিকিৎসার জন্য ডেন্টাল ক্লিনিকে প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন রোগী আসেন। এই দেশের নাগরিকদের মধ্যে দাঁতের যত্ন ও চিকিৎসা নেওয়ার প্রতি আগ্রহ আগের থেকে বেড়েছে।
সীমাবদ্ধতার কারণে মূলত রুট ক্যানেল, ফিলিং ও দাঁত ফেলার কাজই হয় বেশি। কোনো আধুনিক যন্ত্র নেই বলে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে রুট ক্যানেল করা হয়। ক্রাউন, ডেনচার, অর্থোডোনটিকস, ইমপ্ল্যান্ট, মুখের অস্ত্রোপচারসহ অন্য চিকিৎসা হয় না। দাঁতের এক্স–রে করার একমাত্র মেশিনটি নষ্ট। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী আনতে সময় লেগে যায় কয়েক মাস।
নাউরুর জেলখানায় কিছু বাংলাদেশি বন্দী রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন প্রায় ১০ বছরের মানবেতর বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পেতে নিজের ঠোঁট সেলাই করে প্ল্যাকার্ড নিয়ে গত বছর প্রতিবাদ করেন। নাউরুর জেলখানার প্রায় সবাই অবৈধ পথে আসা অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসনপ্রত্যাশী। অবৈধভাবে নৌপথে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পথে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ইরান, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশের নাগরিকদের সমুদ্র থেকে গ্রেপ্তার করে অস্ট্রেলিয়ার সীমান্ত ও উপকূল রক্ষী। তাদেরকেই নাউরুসহ প্রশান্ত মহাসাগরের অন্যান্য দ্বীপরাষ্ট্রের জেলখানায় বন্দী করে রাখা হয়।
বিশ্বের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র নাউরু মূল্যবান ফসফেট সম্পদে সমৃদ্ধ ছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান, জাপান, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের এই ফসফেটে নজর পড়ে। ১৯৬৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর পশ্চিমা বিশ্বের কাছে ফসফেট বিক্রি করতে থাকে নাউরু। সরকারের হাতে আসতে থাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ। ১৯৭৫ সালে সাত হাজার জনগণের দেশ নাউরুর সরকারি ব্যাংকে জমা হয় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার! তখন নাউরুর জনগণের মাথাপিছু আয় এত বেশি ছিল যে তাদের সামনে একমাত্র ধনী রাষ্ট্র ছিল কুয়েত। অপচয়, অতিবিলাসিতা, অদূরদর্শিতা আর দুর্নীতির কারণে একসময়ের অন্যতম ধনী রাষ্ট্রটির এখন করুণ দশা। অস্ট্রেলিয়ার পরামর্শে পরিচালিত হয় দেশটির অর্থনীতি, নিরাপত্তা, উচ্চশিক্ষা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশটির শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা ও পড়াশোনার জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকার বৃত্তি প্রদান করে।