যবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পেটানোর অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি সুপারভাইজার বাদল ও হল নিরাপত্তা প্রহরী শাহিনুরকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রবিবার (১৬ এপ্রিল) উপাচার্যের নির্দেশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো: আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি অফিস আদেশে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
অফিস আদেশদ্বয়ে বলা হয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের সিকিউরিটি অ্যান্ড এস্টেট শাখায় নিরাপত্তা সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত জনাব মোঃ বদিউজ্জামান বাদল ও শেখ হাসিনা ছাত্রী হলে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কর্মরত জনাব মোঃ শাহিনুর রহমান কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী জনাব মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন-কে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও গুরুতর জখম করার অভিযোগের ভিত্তিতে যশোরের কোতয়ালি থানাতে মামলা (৬০/৩৮৪) হওয়ায় ও ঘটনার পর হতে জনাব মোঃ বদিউজ্জামান বাদল ও মোঃ শাহিনুর রহমান কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত অদ্যাবধি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সাধারণ আচরণ শৃঙ্খলা ও আপিল সংক্রান্ত বিধি-২ এর ঘ) ও ঙ), বিধি-৩ এর গ), বিধি-৫ এর খ), গ), ঠ) ও ড) অনুযায়ী তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় বিধি-৪ এর খ) ও ঘ) মোতাবেক তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ২১ জুন ‘নিরাপত্তা প্রহরীর’ স্থায়ী শূন্য পদে যোগদান করেন বদিউজ্জামান বাদল।যোগদানের মাত্র আড়াই মাসের মাথায় ৭ সেপ্টেম্বর ২০১০ এ
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। যার ফলে তাকে ‘তিরস্কার’ ও ২ বছর ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করার দণ্ড দেওয়া হয়।এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা পুকুর থেকে মাছ চুরির অভিযোগে ১০ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বরে যশোর কোতয়ালি থানায় মামলা হওয়ায় তিনি চাকরি থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন। ঠিক ছয় মাস পর ১ জুন ২০১৬ তারিখে তাকে চাকরি হাতে স্থায়ীভাবে অপসারণ করা হয়।তবে হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে স্থায়ীভাবে অপসারণ (Removal) অফিস আদেশ বাতিল করে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়।এরপর ২২/০৭/২০২০ তারিখে শৃঙ্খলা ভঙ্গের(অফিস ভাংচুর) দায়ে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এই বাদলকে।দুই বছরের মাথায় (২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২) যশোরের চূড়ামনকাটিতে হত্যা মামলায় আসামী হন এবং কিছুদিন জেলহাজত বাস করেন।এপ্রেক্ষিতে অভিযোগ পাওয়ায়, খবর প্রকাশিত হওয়ায় ও কর্তব্যস্থলে অনুপস্থিত থাকায় আবারো সাময়িক বরখাস্ত হন বদিউজ্জামান বাদল।সর্বশেষ চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মামুনের ওপর হামলা চালিয়ে আবারো সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বাদল ও কর্মচারী শাহিনুর রহমান সাগরসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি খাদ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুনকে গতকাল রাত ৯.৩০ ঘটিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে হাতুড়িপেটায় গুরুতর জখম করেন। জানা যায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের সামনে চারশতক জমি ক্রয় করে ফটোকপির দোকান দিয়ে তার পড়াশোনার খরচ চালায়। কিন্তু সেই জমি দখল নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বাদল বিভিন্ন সময় আড়াই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছে ভুক্তভোগীর কাছে। চাঁদা না দিলে এই জমিতে উঠতে দিবেন না বলে হুমকি দেন বাদল। ভুক্তভোগী মামুন কোনো ব্যবস্থা না করতে পেরে বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করলে বিচারক জমিটিতে ১৪৪ ধারা জারি করে। বিষয়টি বাদল জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে তার লোকজন নিয়ে রাতে দোকান ও জমি দখল করতে আসে। তাদের বাধা দিলে বাদলের নেতৃত্বে তারা হাতুড়ি দিয়ে মামুনকে হত্যার চেষ্টা করে।