প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলো সরকার,গত ৫ জুন সেটি অবৈধ ঘোষণা করে পুনরায় কোটা পুনর্বহাল করার আদেশ দেয় হাইকোর্ট। এক রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের এ রায়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা আন্দোলন করেছেন।বিক্ষোভে তারা কোটা পুনর্বহালের তীব্র বিরোধিতা করেন এবং সব ধরনের সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবি জানান।
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল এবং এ থেকে উত্তরণের বিষয়ে কি ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা?
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণ করেছেন মোঃ রাহাদ আলী সরকার —-
কোটাপ্রথা মেধাবীদের সাথে বৈষম্য
বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্য বিলোপ করা, কিন্তু কোটাপ্রথা বাংলাদেশের স্বাধীনতার উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ৫৫ % কোটায় নিয়োগ হয়ে থাকে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, জেলাভিত্তিক কোটা ১০% নারীদের জন্য ১০ % এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫% কোটা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
ফলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী শুধুমাত্র কোটা প্রথার কারণে সরকারি চাকরি পাচ্ছে না;যা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক অশান্তির সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় শিক্ষার্থীরা এবং চাকুরিপ্রত্যাশিরা যে অনেক মানসিক সমস্যায় ভুগছে তার অন্যতম কারন হতে পারে এই কোটা পদ্ধতি।যদি এই কোটা পদ্ধতির সংস্কার না করা হয় অদুর ভবিষ্যতে প্রভাব পড়তে পারে আগামী প্রজন্মের উপর। তাই আমাদের দেশের সরকারি চাকরিতে অতিসত্বর কোটা সংস্কার করা প্রয়োজন এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে দ্রুত এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
মোঃ বোরহান উদ্দিন গালিব, সমুদ্রবিজ্ঞান ও জললেখবিজ্ঞান বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি।
কোটা প্রথা বাতিল যাক
মেধাবীরা মুক্তি পাক
ছোট বেলা থেকে পড়ে আসতাম শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড,,তবে মনে হচ্ছে এটা ভুল ছিলো,,এখন কোটাই জাতির মেরুদণ্ড। স্বাধীনতার অর্জনের জন্য দেশের সূর্যসন্তানরা তাদের প্রাণ দিয়েছে,,তার সাথে এদেশে যেনো কোন বৈষম্য না থাকে সেটিও করেছেন।একটা জাতিকে সুন্দরভাবে সাজাতে মেধাবীদের মূল্য অপরিসীম কিন্তু সরকারি চাকরীতে কোটা প্রথা বহাল করে বিভিন্ন মেধাবীকে তাদের যোগ্য তম স্থান থেকে বাদ দিয়ে তুলনামূলক অযোগ্য দের বসানো হচ্ছে।এতে করে দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম কি পাচ্ছে,আর মেধাবীরাই বা কি পাচ্ছে? বিষয়টি এখন প্রশ্নবিদ্ধ।তাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এবং আগামী প্রজন্মকে একটা সুন্দর দেশ উপহার দিতে এই কোটা প্রথা বাতিলে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে এবং যোগ্যদের তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
এস এম সিমান্ত, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
এ রায় কোটার আসল উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট যদি দেখি একটা গ্রাম থেকে উঠে আসা অস্বচ্ছল পরিবারের মেধাবী সন্তান অনেক সংগ্রাম করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে চাকরির বাজারে পদার্পণ করে।
কিন্তু এই অস্বচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীরা যখন দেখতে পায় যোগ্যরা তাদের অধিকার পাচ্ছে না,মেধা থাকা সত্বেও শুধুমাত্র কোটার জন্য একজন অযোগ্য লোক তার জায়গা নিয়ে নিচ্ছে তখন সে তার অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যায়।
যে স্বপ্ন নিয়ে সে এত দুর এসেছে,শুধুমাত্র এই কোটাব্যবস্থার কারণে তার স্বপ্ন গুলো শেষ হয়ে যায়।
কোটা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিলো সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য, আমিও চাই সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এগিয়ে যাক,আসলেই যারা কোটা পাওয়ার অধিকার রাখে তারা তাদের সে অধিকার টা পাক। যদি সব মিলিয়ে কোটা ১০% পর্যন্ত রাখা হয় তাহলে একদিকে যেমন অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এগিয়ে আসবে অন্যদিকে মেধাবীরা তাদের মেধার সঠিক মূল্যায়ন পাবে বলে আমি মনে করি।
তাই এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এখনি।আশা করি মহামান্য হাইকোর্ট এটি পুনর্বিবেচনা করবেন এবং মেধাবীদের তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিবেন।
মোঃ মেহেদী হাসান, গণিত বিভাগ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।