মা দিবস ঘিরে পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনা
মামুন আবদুল্লাহ, পিসিআইইউঃ
মা ডাকটি মিষ্টি অতি
মন ভরে যায় স্বাদে,
তুমি বিনে একলা মাগো
মনটা ভিষণ কাঁদে।
মা শব্দ ছোট্র যে খুব
যার তুলনা নাই,
তোমার হাসি দেখলে মাগো
প্রাণ জুড়িয়ে যায়।
মা শব্দটি ছোট হলেও এর গভীরতা, বিশালতার কোন জুড়ি নেই। মায়ের বিকল্প মা পৃথিবীতে ছাড়া আর কিছু নেই। প্রত্যেক সন্তানের কাছে মায়ের স্থান সব কিছুর উর্ধ্বে। মায়ের প্রতি সন্তানের ভালবাসা একদিনের নয় প্রতিদিনের।
মায়ের প্রতি সন্তানের ভালবাসা, অনুভূতি প্রকাশ সহ বছরে একটা দিন স্বরণীয় করে রাখতে প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস হিসেবে পালন করে বিশ্ববাসী। তবে কয়েকটি দেশে ভিন্নতা রয়েছে।
আধুনিক যুগে মা দিবসের উৎপত্তি যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সেখানে প্রতি বছরের মে মাসের ২য় রোববার পালিত হয় এটি।
এই চিন্তাটা প্রথম আসে ফিলাডেলফিয়ার আনা জারভিসের মাথা থেকে। তিনি ১৯০৭ সালে ১২ই মে তার মাকে নিয়ে এক ছোট্ট স্মরণসভার আয়োজন করেন। আনা জারভিসের মা নারীদের একসঙ্গে করে বন্ধুত্ব ও স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতেন। মায়েদের সন্তান মানুষ করাটা যে অনেক পরিশ্রমের কাজ সেটা সবাইকে জানাতে চেয়েছিলেন তিনি।
ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্র্যাফটনে আনা জারভিসের মা, আনা রিভস জারভিস মায়েদের একটা ‘ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন যার লক্ষ্য ছিল শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে আনা।
কারণ মিজ জারভিস নিজেও তার নয়টি সন্তান হারিয়েছিলেন। তিনি মারা যান ১৯০৫ সালের ৯ই মে। আর তার স্মরণসভার জন্য আনা জারভিস ১২ই মে বেছে নেন কারণ ওটাই ছিল তার মা মারা যাবার কাছাকাছি একটা রোববার। তার মা যে চার্চে যেতেন সেখানে তার মার উদ্দেশ্য একটি ছোট্ট অনুষ্ঠান করেন।
এরপরের পাঁচ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সবকয়টি রাজ্যে মা দিবস পালনের চল শুরু হয়। আর ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এ দিনটাকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন।
এরপর থেকে প্রতি বছরের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বেশিরভাগ জায়গায় মা দিবস পালন হয়ে আসছে।
আজ ১২ মে রোজ রবিবার মা দিবস নিয়ে নিজেদের ভাবনা, অনুভূতি জানিয়েছে পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছাত্রীরা।
ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ (ফিন্যান্স) বিভাগের ছাত্র শিপন নাথ জানান তার অনুভূতি-
ছোটবেলায় নায়ক মান্নার “আম্মাজান” সিনেমায় প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চু স্যারের “আম্মাজান” গানটি শুনে এতটাই আবেগাপ্লুত হয়েছিলাম যে, মাকে তখন থেকে আম্মাজান ডাকতাম। মা আমার চাকুরিজীবী। সারাদিন অফিস করে এসে আবার সংসার সামলানো – বেশ কঠিন ব্যাপার। খাবার টেবিলে বড় মাছ বা মাংসের টুকরো তাঁকে কখনো নিতে দেখিনি। শত ব্যস্ততার মাঝেও, মা কখনো আর্শীবাদ করতে ভুলে যাননি। আমার খারাপ সময় কিংবা অসুস্থতার সময় যে মানুষটি বটবৃক্ষের ন্যায় অবিচল ছায়ার মতো আগলে রেখেছেন, পাশে থেকেছেন – তিনি আমার মা। আমার আম্মাজান।
গর্ভধারীনি মাকে নিয়ে অনুভূতিহীন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুস্কর। এই মানুষটিকে ভালোবাসার জন্য কোনো দিবসের প্রয়োজন হয় না। আমরা আমাদের মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য হয়তো অনেক অজুহাত খুঁজি। কিন্তু মা, সব সময় আগলে রাখেন তাঁর স্নেহ ও ভালোবাসায়।
সময় কেটে যাচ্ছে। বড় হচ্ছি। কিন্তু, যতই বড় হই না কেন! পৃথিবীর সবার কাছে বয়সে, আচরণে, অভিজ্ঞতায় বড় হলেও মায়ের কাছে কখনই বড় হতে পারি না। মাঝে মাঝে ভাবি, বোঝানোর দরকার-ই বা কি! সবার কাছে তো বড় হয়ে আছি, আম্মাজানের কাছে না হয় আগের আমি-ই থাকি, আদরের শিপু হয়ে।
সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্রী আকিয়া জাহান বলেন, জীবনের সেরা বন্ধু মা। তিনি সন্তানের সব জানেন, সব বুঝেন।
সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলেও প্রচণ্ড খারাপ সময়টাতেও মা ছায়া হয়ে পাশে থাকেন। যত্ন, স্নেহ, মায়া, মমতা, ভালোবাসা দিয়ে আজীবন আঁকড়ে ধরে রাখেন।
সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক ছাত্রী ঐশী বনিক জানান, ‘মা’ নামক এই শব্দটির সঠিক ব্যাখ্যা আসলে কোনভাবেই দেয়া সম্ভব না কারণ মায়েদের নিয়ে যত বলবো ততই কম হবে। মা আছে বলেই আমাদের জীবনটা এত পরিপূর্ণ, এত গোছানো। সন্তানের জন্য মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আত্মত্যাগ সন্তানরাও সারাজীবন মূল্যায়ন করুক। পৃথিবীর সমস্ত মায়েরা সুস্থ ও সুন্দর থাকুক।
সাংবাদিকতা বিভাগের নূর নাহার আক্তার শিরিনের মতে,
মা একটি শব্দ মাত্র যার ভিতরে লুকিয়ে আছে কোমল , মমতা ও ত্যাগের কিছু অক্ষর ।দুখিনী মায়ের মুখে দিকে তাকালে নিজের বিষাদযাপন ব্যর্থতার কথা স্বীকারও করতে পারি না । তবুও যখন জীবন যুদ্ধে হারাতে থাকতাম মা বলে আমাকে এগুলো বলো নি কেন? আহারে তখন মনটা জুড়িয়ে যায় ।এই অনুভূতি প্রকাশের বাইরে এটি শুধু মায়ের দ্বারা সম্ভব।মা ছোট একটি দুই অক্ষরের শব্দ যার পরিধি বিশাল
একই বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র আশরাফ রিশাত জানান তার স্মৃতি বিজড়িত শৈশবের কথা, কয়েক বছর আগে বাবাকে হারিয়েছি। সেই থেকে মাই সব। সন্তানের শেষ ঠিকানা মা। জন্মলগ্ন থেকে যতদিন বেঁচে থাকেন সন্তানের ছায়া হয়ে থাকেন। দুনিয়ার কাছে সন্তান বড় হলেও মায়ের কাছে সেই ছোট্ট রয়ে যায়। যত্ন, স্নেহ, মায়া, মমতা, ভালোবাসা দিয়ে আজীবন আঁকড়ে ধরে রাখেন।