যদি প্রশ্ন করা হয়, পৃথিবীর এমন কোনো মানুষ আছে কি যার ভালোবাসা আপনার জন্য স্বার্থহীন, উদ্দেশ্যহীন? একটু ভেবে বলুনতো কে হতে পারে। আপনার প্রিয় বন্ধু-বান্ধবী, কোনো প্রিয় শিক্ষক, কোনো ভাই, বোন, আপনার বস, সহকর্মী নাকি আপনার সঙ্গিনী?
এটা খুব সহজে অনুমেয় যে, ৯০ শতাংশ মানুষের উত্তর এই অপশন গুলোর মধ্যে নেই। সবাই খুব বেশি না ভেবেই যে মানুষটির কথা বলবেন তিনি হলেন আমাদের সকলের “মা”। অন্য সকল সম্পর্ক শেষ অবদি কোনো না কোনো স্বার্থের সাথে সংযুক্ত কিন্তু “মা” এমন একটি সম্পর্ক যা স্বার্থহীন, উদ্দেশ্যহীন।
ইউনেস্কোর একটি জরিপে বলা হচ্ছে “বিশ্বের সবচেয়ে মধুর শব্দ হলো ‘মা’।
‘মা’ এমন একটি শব্দ যে শব্দের মাঝেই অন্যরকম এক মায়া অনুভূত হয়। আমাদের জন্য মায়ের যে আত্মত্যাগ তা পৃথিবীর এমন কোনো কিছুর সাথে তুলনা করা যায়না যা আমদের কোনো কিছু অর্জনে সাহায্য করে।যে অসহনীয় কষ্ট নিয়ে তিনি আমাদের পৃথিবীর আলো দেখার সুযোগটুকু করে দেন তার প্রাপ্তিটুকু কখনই তার পাওয়া হয়না বরং তার দাবিদারও তিনি নন।
তিনি নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ানোর মানসিকতা রাখেন, যিনি নিজের সৌখিনতাকে ত্যাগ করে আমাদের কথাই ভাবেন।সন্তানের জন্য আল্লাহ তায়া’লার দরবারে চোখের ফোটাটুকু ফেলে কেইবা পারে তার মতো চাইতে আর যখন তার চাওয়াটুকু পূরণ হয় যখন আমি আপনি জীবনে কোনো ছোটো থেকে ছোটো কিছু অর্জন করি মনে হয় সে অর্জন যেন তার নিজের। তার আনন্দ আমাদের ছোট ছোট প্রাপ্তি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। একজন মা তার সন্তানকে যেভাবে স্নেহ-মায়া মমতা আর ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখে পৃথিবীর অন্য কারো সে সক্ষমতা নেই। ছোটোবেলায় যখন খুব বেশি দুষ্টুমি করতাম মা তখন অনেক শাসন করতো। মনে মনে খুব রাগ হতো ভাবতাম হয়তো মা আমাকে ভালোবাসেনা। কখনো যদি ভুলটা আমার নাও থাকতো তার পরেও তিনি আমাকেই শাসন করতেন। তিনি খুব বেশি পড়াশোনা না জানলেও আমাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার ব্যাপারে কিঞ্চিৎ অবহেলা করিনি। আর তার বিচার বুদ্ধি আর কার্যদক্ষতা আমার উপর যে এক শুভ প্রতিফলন ঘটেছে তা আজ ২১ বছর বয়সে এসে খুব সহজেই উপলব্ধি করতে পারি। তার মমতা মাখা শাসন আমার চরিত্র মেধা মননকে করেছে সমৃদ্ধ।
তাই বিলি, ভালোবাসা যদি ফুলের মতো মিষ্টি হয়, তবে আমার মা সেই ভালোবাসার মিষ্টি ফুল। ‘মা’ এমন একটি সম্পর্ক যা নিয়ে লিখে শেষ করা যাবেনা। মায়ের ভালোবাসার সম্পর্ক অন্য কোনো সম্পর্কের সাথে তুলনা হয়না এই ভালোবাসাটুকুই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছায়া হয়ে থাকবে।
আল কুরআনে বলা হয়েছে আমি মানুষকে তাদের পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি।
একটি হাদিস বর্ণিত আছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! কে আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি হকদার? তিনি বলেন ‘তোমার মা।’ সে বলল, তারপর কে? তিনি বলেন, ‘তোমার মা।’ সে আবারও বলল, তারপর কে? তিনি বলেন, ‘তোমার মা।’ সে পুনরায় বলল, এরপর কে? তিনি বলেন, ‘তোমার বাবা।
শুধু ইসলাম ধর্মই নয় পৃথিবীর সকল ধর্ম শেখায় মায়ের প্রতি সন্তানকে শ্রদ্ধাশীল হতে। আমাদের ব্যাক্তিজীবনে মায়ের অবদান অপরিসীম। তাই, পৃথিবীর সকল মায়ের জন্য শুভকামনা। ভালো থাকুক সকল মা। তাই, ‘মা’ দিবসেই শুধু নয় মায়ের প্রতি ভালোবাসা অটুট থাকুক সবসময়।