মায়ের কোলে চড়েই স্কুল থেকে ডিগ্রি কলেজে পড়ছেন তানিয়া
তানিয়া সমাজের আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো স্বাভাবিক নয় তানিয়ার জীবন। জন্মগতভাবেই শারীরিক প্রতিবন্ধী তিনি। প্রতিবন্ধী হয়েও স্বপ্ন দেখেন আকাশ ছোঁয়ার। নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে না পারলেও থেমে যায়নি তানিয়ার জীবনযুদ্ধ। উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে এখন তানিয়া পড়ছেন ডিগ্রি প্রথম বর্ষে। তার ইচ্ছা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে যোগ্যতা অনুযায়ী ছোট একটা চাকরি করে নিজের অসচ্ছল পরিবারের হাল ধরা।
তানিয়ার বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার কলিয়া গ্রাামে। তার বাবা নুরু মিয়া পেশায় একজন দিনমজুর। মা হেনা বেগম গৃহিণী। তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে তানিয়া এখন উজানি ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। জন্মগতভাবে তানিয়া শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহই এতদুর আসতে সাহস জুগিয়েছে। মা হেনা বেগম তাকে কোলে নিয়ে প্রাইমারি থেকে কলেজ অব্দি ছুটে চলেছেন।
তানিয়া বলেন, আমি জীবন যুদ্ধে হার মানতে চাই না বলেই পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। মাধ্যমিক পাস করার পর থেকেই চাকরির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু প্রতিবন্ধী বলে কেউ চাকরি দিতে চায় না । প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন- পড়ালেখা শেষ হওয়ার পর আমাকে যদি তিনি একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেন, তাহলে আমাকে পরিবার ও সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে হবে না।
তানিয়ার মা হেনা বেগম বলেন, আমার অন্য স্বাভাবিক সন্তানদের মতোই আমি তাকে বড় করছি। সে পড়ালেখা করতে চেয়েছে। আমি নিজের কোলে বহন করে স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ পর্যন্ত নিয়ে গেছি। আমি অনেক কষ্ট করে আমার মেয়েকে মানুষ করতেছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই আবেদন- তিনি যেন আমার মেয়েকে তার যোগ্যতা অনুযায়ী একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেন।
উজানি ডিগ্রি কলেজের দপ্তরি আশরাফুজ্জামান বলেন, তানিয়া খুবই ভালো এবং মেধাবী মেয়ে। তার ইচ্ছা আর দশজন স্বাভাবিক মানুষের মতো। আমাদের কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে দেখেছি ওর মায়ের কোলে করে কলেজে এসেছে। শারীরিক প্রতিবন্ধি হয়েও ওর পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ আমাকে মুগ্ধ করে।
তানিয়ার কয়েকজন প্রতিবেশী বলেন, তানিয়াকে আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখেছি পড়ালেখার প্রতি তার আগ্রহ খুবই । সহপাঠীদের সঙ্গে মিশে চলতেও পারে। ওর পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভালো না। তারপরও অনেক কষ্ট করে তারা তানিয়ার পড়ালেখা শিখিয়েছেন। আমরা এলাকাবাসীও যতটা পেরেছি সাহায্য করছি। তাদের আবেদন মেয়েটি যেন জীবন যুদ্ধে হেরে না যায়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওর যোগ্যতা অনুযায়ী একটা কর্ম চাই।
উজানি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, তানিয়া শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও মানসিকভাবে খুবই শক্তিশালী। তার এই পথচলা আমাদের কলেজের সকল কর্মকর্তাকে মুগ্ধ করে। ওর সাহসিকতা দেখে সমাজের আরও প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েরা শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হবে। আমরা তাকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছি। আগামীতেও আমাদের পক্ষ থেকে এ সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, তানিয়া একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। মেয়েটি পড়ালেখাও খুব ভালো। তার এই চেষ্টাকে এগিয়ে নিতে আমাদের পক্ষ থেকে একটা প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেওয়া হচ্ছে। পড়ালেখা শেষ হলে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তার কর্মসংস্থানের সাধ্যমতো চেষ্টা করবো।