The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪

মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্ব দিচ্ছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

তুষার, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ঃ মানসিক স্বাস্থ্য সংকটে ভোগা শিক্ষার্থীদের সেবা দিতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে চালু করা হয়েছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। শুরুর দিকে এই কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংকোচ কাটিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই সেবা নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

সুন্দর-স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য দৈহিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের বিকল্প নেই। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শারীরিক সুস্থতার বিষয়ে যথেষ্ট জনসচেতনতা থাকলেও মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়ে অনেকেই ততটা সচেতন নয়। বেশিরভাগ মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ বোধও করেন না। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরাও তার ব্যতিক্রম নয়। অথচ শিক্ষাজীবন নিয়ে হতাশা, ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার নিয়ে নানা ধরনের মানসিক সংকটে থাকা শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ দপ্তরের আওতায় ‘মানসিক স্বাস্থ্য সেবা’ বিভাগের পরিসংখ্যানও তাই বলছে। পরিসংখ্যান অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী মানসিক সংকটে ভুগছেন। যাদের বেশিরভাগেরেই একাডেমিক রেজাল্ট খারাপ, পারিবারিক কলহ, প্রেমঘটিত বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত।

শিক্ষার্থীরা জানান, মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের আন্তরিকতা, সেবাদান পদ্ধতি এবং বিনামূল্যে সেবার কারণেই তারা দ্বিধা কাটিয়ে সেবা নিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীদের মধ্যে যারা মানসিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তারা এই সেবার মাধ্যমে সংকট কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন।

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্য সেবার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এই কেন্দ্র থেকে এককভাবে চিকিৎসাসেবা পেয়েছেন ২১১ জন শিক্ষার্থী। এ ছাড়াও দলগত কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে অনেককেই সেবা দেওয়া হয়েছে। সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী সেবা নেওয়ার পর মানসিক স্বাস্থ্য সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন।

মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সাইকোলজিস্ট আদিবা আক্তার বলেন, এখন পর্যন্ত তাদের কাছে শিক্ষার্থীরা যে সমস্যাগুলোর জন্য এসেছেন তার মধ্যে হতাশা, পারিবারিক কলহ, পরিবেশের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা, ধর্মীয় সমস্যা, অতিরিক্ত চিন্তা, ক্যারিয়ার, যৌন হয়রানি, মুড সুইং, আত্মবিশ্বাসের অভাব, মৌলিক চাহিদার অপূর্ণতা, মানসিক চাপ, প্যানিক ডিজঅর্ডার, ফোবিয়া ডিজঅর্ডার, প্রেমঘটিত সমস্যা, শারীরিক সমস্যা, হতাশা, পর্যাপ্ত ঘুমের ঘাটতি, আর্থিক অসচ্ছলতা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার উল্লেখযোগ্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলেন, শিক্ষার্থীদের সমস্যা শোনার পর তাদের রোগের ধরন অনুসারে কাউন্সিলিং করে থাকি। প্রতিটি ব্যক্তিগত সেশনে সর্বনিম্ন ৪৫ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়। প্রয়োজন হলে গ্রুপ সেশন নেওয়া হয়।

মানসিক চিকিৎসাসেবা নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, বাইরে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। শিক্ষার্থীদের সবার আর্থিক অবস্থা এক নয়। অনেকে বিষয়টি ততটা গুরুত্বের সঙ্গেও নেয় না। ফলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে যেতে অনীহা তৈরি হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়। পাশাপাশি চিকিৎসকরাও অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সমস্যার কথা শোনেন এবং চিকিৎসা দেন। এ কারণেই মানসিক সমস্যাতেও সেবা নিতে আগ্রহ বাড়ছে শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের প্রধান অধ্যাপক ড. তপন কুমার বলেন, ‌‘আমরা শুরুর দিকে যখন এই সেবা দেওয়া শুরু করি অনেকের মধ্যে অনীহা ছিল। তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা বলতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করতো না। কিন্তু এখন এ সেবা নেওয়ার চাহিদা বহুলাংশে বেড়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য বিচাগে জনশক্তি বাড়াতে না পারায় বর্তমান চাপ বাড়ছে।’ শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে আরও বরাদ্দ প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.