বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে হবে বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামের আমির শফিকুর রহমান। গত ৬ অক্টোবর ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) এ নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এএফপি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে যান তিনি। এই অভ্যুত্থান ঘিরে হতাহতের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এই ট্রাইব্যুনালেই জামায়াতের কয়েকজন নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। শফিকুর রহমান বলেন, ‘দেশে যখন মানবতাবিরোধী অপরাধ হবে, তখন তা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে কোনও সমস্যা নেই।’
আগস্টের ওই ছাত্র বিপ্লবের পর হাসিনা সরকারের পতন হলে, জামায়াতের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। বর্তমানে দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন শফিকুর রহমান।
এখন মূলধারার রাজনীতিতে ফিরে এসে তিনি বলেছেন, ‘হাসিনা ও তার সহযোগীদের সঙ্গে তার মেয়াদকালে সংঘটিত অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’
রাজধানী ঢাকায় তার দলীয় কার্যালয়ে এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন তত্ত্বে বিশ্বাস করি না যে- আমরা অন্যায়ের শিকার হয়েছি বলে অন্য কেউও অন্যায়ের শিকার হবে।’
৬৫ বছর বয়সী এই নেতা আরও বলেন, ‘কিন্তু মানুষ চায় তাদের বিচার হোক। যদি তারা বিচারের মুখোমুখি না হয়, তবে তারা আরও অপরাধ করবে।’
তবে তিনি বলেন, হাসিনা ও তার সহযোগীরা যাতে ন্যায়বিচার পান তা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, তার সহযোগীরা ন্যায়বিচার পাননি। তবে তিনি বিশ্বাস করেন যে, ট্রাইব্যুনাল সংস্কার করা হলে তা সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে।
‘ট্রাইব্যুনালে যদি কোনও আইনের বৈষম্য থাকে, যদি সংবিধান বা মানবাধিকারের সঙ্গে কোনও বিরোধ থাকে, তবে তা সংশোধন করা যেতে পারে’, বলেও মন্তব্য করেছেন শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘জামায়াত তাদের ফাঁসি দেওয়া নেতাদের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে মরণোত্তর আপিল করবে। প্রমাণ করবে যে, তারা অন্যায়ের শিকার হয়েছিল।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মূলত ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। তবে ট্রাইব্যুনালের প্রক্রিয়াগত ঘাটতির সমালোচনা করেছিল জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো। কারণ ট্রাইব্যুনালকে তখন ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নির্মূল করার হাতিয়ার হিসেবে দেখা হয়েছিল।
হাসিনার আমলে ১০ বছর বন্ধ ছিল জামায়াতের অফিস। এখন দলীয় কর্মীদের ভিড়ে মুখর কার্যালয়।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত অংশ নেবে বলে সাক্ষাৎকারে জানান দলটির আমির। তবে এ নির্বাচন আয়োজনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় সময় দিতে চান তিনি। শফিকুর রহমান বলেন, ‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচন অর্থবহ হবে না।’
বর্তমানে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের কোনও জোট নেই বলে জানান শফিকুর রহমান। তবে তিনি চান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশে ফিরে আসুক। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা মামলা রয়েছে। তাই আমরা বিশ্বাস করি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা হয়েছে।’
সাক্ষাৎকারে জামায়াতের সঙ্গে উগ্রবাদী কোনও সংগঠনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নাকচ করে দেন শফিকুর রহমান। তার দাবি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি জামায়াত দীর্ঘদিন ধরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শেখ হাসিনার পতনের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে তার দল। এমনকি মন্দির ও মাজারের সুরক্ষায় পাহারাও দিয়েছেন জামায়াত কর্মীরা।
শফিকুর রহমান স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘আমরা এ ধরনের কাজকে সমর্থন করি না।’