বন্ধুরা যখন এসএসসির ফল পেয়ে আনন্দ করছে সিয়াম শিকদার তখন মাঠে আমন ধান কেটে আঁটি বাঁধার কাজে ব্যস্ত। পরে কাজ শেষে বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পারেন এসএসসি পরীক্ষায় তিনি জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
প্রাইভেট পড়া দূরের কথা, অভাবের সংসারে মাঝে মধ্যে ঠিকমতো খাবারও জোটেনি সিয়ামের। একটা ভালো পোশাকও ছিল না তার। সহপাঠীরা যখন যানবাহনে চেপে স্কুলে গেছে, তখন সিয়ামকে দুই কিলোমিটার হাঁটতে হয়েছে। এতো কষ্টের মধ্যেও কখনো পিছ পা হননি তিনি। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন কঠোর পরিশ্রমী এই শিক্ষার্থী।
সিয়াম শিকদার মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের জাঙ্গালিয়া গ্রামের হেমায়েত শিকদারের ছেলে। তিনি সদর উপজেলার সরকারি আর.এস.কে.এইচ ইনস্টিটিউশন মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। এদিকে ছেলের ভালো ফলে হতদরিদ্র মা-বাবা খুশি হলেও চিন্তা বেড়েছে তাদের। সন্তানকে আগামীতে কীভাবে লেখাপড়া করাবেন সেই চিন্তায় ঘেরে ধরেছে তাদের। জাঙ্গালিয়া গ্রামে একখণ্ড জমির ওপর টিনের ঘর। এই ঘরেই সিয়াম পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন।
সিয়ামের বাবা হেমায়েত শিকদার বলেন, ‘ভিটেটুকু ছাড়া চাষযোগ্য তেমন কোনো জমি নেই। সারা বছর রাজমিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে কামলা খেটে সংসার চালাতে হয়। সব সময় কাজও থাকে না। সবাই বলছে, ছেলে ভালো ফল করেছে। এখন কলেজে ভর্তি করতে হবে। কিন্তু কীভাবে কলেজে পড়ানোর খরচ পাবো সেটা বুঝতে পারছি না।’
এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে সবার বড় সিয়াম। বোন তাসলিমা স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।সিয়ামের মা হুমাইরা বেগম বলেন, ‘ছাওয়ালডা ল্যাহাপড়াও করছে, আবার অর বাপের সঙ্গে কামও করছে। যেটুক সময় পাইছে, সেই সময়টুক পড়ছে। হুনছি ও ভালো পাস করছে।’
প্রতিবেশী সাখাওয়াত শিকদার বলেন, ‘অভাব আর নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে সিয়াম ভালো ফল করেছে। একটু সহযোগিতা পেলে ছেলেটা অনেক বড় হতে পারবে। দারিদ্রতা যেন তার উচ্চ শিক্ষার পথে বাঁধা না হয় এ জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি আমি।’
সিয়ামের স্কুলের শিক্ষক কাবুল মিয়া বলেন, ‘নিজের ইচ্ছা শক্তির জোরেই সিয়াম এই পর্যন্ত আসতে পেরেছে। ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় সিয়াম তার দৃষ্টান্ত। সিয়াম যাতে পড়ালেখা চালিয়ে নিতে পারে এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ.কে.এম নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘সিয়াম অত্যন্ত মেধাবী। কিন্তু সামনে তার পড়াশোনা কীভাবে চলবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তার পরিবার। উচ্চশিক্ষার জন্য সহায়তা পেলে সিয়াম ভবিষ্যতে আরো ভালো ফল করতে পারবে বলে আমি আশা করছি।’