মন্ত্রীর ঘোষণার পরেও রবীন্দ্র কাছারিতে ঢুকতে পয়সা গুনতে হচ্ছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের
রাকিব মাহমুদ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে কবিগুরুর নামেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। এই শাহজাদপুরেই অবস্থিত বিশ্বকবির স্মৃতি বিজড়িত রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি।মূলত রবীন্দ্রনাথের এই কাছারি বাড়ি ও শাহজাদপুরের সাথে রবীন্দ্রনাথের যে নিবিড় সম্পর্ক সেটাকে কেন্দ্র করেই এই শাহজাদপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রবীন্দ্র কাছারি বাড়িতে বিনামূল্যে প্রবেশের ঘোষণা দেওয়ার পরও তা মানা হচ্ছে না।
শাহজাদপুরে অবস্থিত এই কাছারি বাড়িটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিকে বহন করে আসছে যুগ যুগ ধরে । উনিশ শতক থেকে আজ অব্দি অক্ষত রয়েছে কবির ব্যবহৃত স্মৃতিচিহ্ন। ২০১৭ সালে শিক্ষা, গবেষণা ও সাংস্কৃতিক চর্চা এবং কবির স্মৃতিকে অম্লান করতে তাঁর নামের আদলেই প্রতিষ্ঠা করা হয় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের রবীন্দ্র গবেষণা ও সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য বিনামূল্যে কাছারি বাড়ি ব্যবহারের ঘোষণা দিলেও কোনো সুফল পায়নি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। কর্তৃপক্ষের দীর্ঘসূত্রতা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছে শিক্ষার্থীরা।
গত বছরের ২২ নভেম্বর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এম.পি. বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিতেই শান্তিনিকেতনের আদলে বিশাল ক্যাম্পাস হবে যেখানে শিক্ষার্থীরা মুক্তবুদ্ধি ও সংস্কৃতির চর্চা করবে।”
তিনি আরো বলেন, “আজ থেকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে কাছারি বাড়িটি শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।”
মন্ত্রীর এমন ঘোষণার ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ মেলেনি কবির নামের আদলে গড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। নির্ধারিত প্রবেশমূল্য দেওয়ার মাধ্যমে মিলছে রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি ব্যবহারের সুযোগ। একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৮ম বর্ষেও বিনামূল্যে প্রবেশের অনুমতি পায়নি তারা।
ক্যাম্পাসবিহীন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীদের রবীন্দ্র চর্চা, রবীন্দ্র দর্শনলাভ, রবীন্দ্র সৃষ্টিকর্ম পরিচর্যা, রবীন্দ্রনাথের জীবনী সম্পর্কে জ্ঞানার্জন, দলগত পাঠ্যক্রম ও অবসর সময় কাটানোর জন্য কাছারি বাড়ি অনন্য সহায়ক হলেও শিক্ষার্থীরা এসকল বিষয় থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত বলে জানান রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোঃ এরশাদুজ্জামান আশেক। তিনি আরো বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের চাওয়া রবীন্দ্র কাছারি বাড়িতে উন্মুক্ত জ্ঞানচর্চার। দ্রুত সে সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য জোড় দাবি জানাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার বলেন, কাছারি বাড়িটি আমার কাছে পরম পূজনীয় একটি স্থান। কাছারি বাড়ির কথা উঠলেই রবি ঠাকুরের সান্নিধ্য পাওয়ার ইচ্ছে ব্যকুল করে। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আগ্রহের শেষ কোথায়? সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রে যার বিচরণ; তাঁর স্মৃতিধন্য কাছারি বাড়ি গবেষণার অন্যতম ক্ষেত্র, জ্ঞানার্জনের পাঠশালা। অথচ তারঁ নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়েও অবাধে বিচরণ করার কোনো সুযোগ মেলেনা। ভারতের শান্তিনিকেতনের মতো রবীন্দ্র কাছারি বাড়িটিও বাংলাদেশের শান্তিনিকেতন হয়ে উঠলেই সার্থকতা পাবে। এতে শিক্ষার্থীরা অবাধে, নিরাপদে বিচরণ এবং মুক্তজ্ঞানচর্চার মাধ্যমে জ্ঞানার্জন করবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শাহ্ আজম বলেন, “কাছারি বাড়ির বিষয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এটি প্রক্রিয়াধীন আছে। শুধু বিনামূল্যে প্রবেশই নয়, এর সাথে কাছাড়ি বাড়িতে রবীন্দ্র গবেষণা, সাংস্কৃতিক চর্চা ও পরিবেশন, বকুলতলা সংরক্ষণসহ বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ও কাছারি বাড়ির আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। কাছারি বাড়ি পঠনপাঠন, গবেষণা, সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার বলে মনে করেন উপাচার্য। তিনি আরো বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় যদি অনুকূল মনোভাব পোষন করেন তবে সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ধরা ও কবির স্মৃতিকে চির অম্লান করার পুত দায়িত্বপালন সহজ হবে। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সার্থক হবে।
এ নিয়ে রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির দায়িত্বে থাকা কাস্টোডিয়ান মোঃ আবু সাইদ ইনাম তানভিরুল বলেন, এটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়। আমরা মৌখিক বা লিখিত কোন নির্দেশনা পাইনি। নির্দেশনা পেলেই তা বাস্তবায়ন শুরু করবো।
এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (প্রত্ন ও জাদু) নাফরিজা শ্যামা বলেন, ”বিষয়টি আমি জানতাম না। মন্ত্রী দপ্তরে যোগাযোগ করব। সেখান থেকে লিখিত বা মৌখিক পেলে কাছারি বাড়ি কর্তৃপক্ষকে জানাব।”