সাকিবুল ইসলামঃ পবিত্র রমজানে ইফতার এক বিশেষ আনন্দের মুহূর্ত। সাহ্রী থেকে শুরু করে এ সময় পর্যন্ত যেকোনো ধরনের পানাহার থেকে নিবৃত্ত থাকেন প্রত্যেক ইমানদার মুসলিম। ইফতারের মধ্য দিয়ে ঘটে সেই চক্রের সমাপ্তি। তাই নানা রকমের খাদ্য পসরায় সাজানো হয় ইফতার আয়োজন । পরিবারের সঙ্গে, কখনো কখনো বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সারা হয় বিশেষ এই আহার পর্ব।
প্রতিদিন পড়ন্ত বিকেলে সূর্যটা যখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ে। যখন ক্যাম্পাসের চারপাশে সবুজ গাছপালাগুলোর ছায়ায় মাঠ আচ্ছাদিত হয়ে ওঠে। ঠিক তখনই নিরুত্তাপ রোদ মনে করিয়ে দেয় সন্ধ্যা নামতে আর দেরি নেই। এই তো কয়েক দিন আগেও মাঠে আনাগোনা ছিল ব্যাট আর বল হাতে। রমজান আসতেই সেখানে আজ ভিন্ন চিত্র। সেই সবুজ ঘাসের বুক চিরে শীতল পাটি কিংবা পত্রিকার ছেড়া অংশ বিছিয়ে সবাই বসে ইফতার নিয়ে। সবার সামনে সাজানো আছে বাহারি রকমের ইফতার সামগ্রী। শরবত, ছোলা, পেঁয়াজু, আলুর চপ, ঘুগনি, বেগুনি, কলা, শশা, বরিন্দ্রা, খেজুর, জিলাপিসহ নানা ধরনের ফল আর কত কী! সবার সামনে একই রকম ইফতারি। ভ্রাতৃত্ববোধ, সৌহার্দ এবং সম্প্রীতির এক অপূর্ব নিদর্শন ইফতারের সময়ের এই দৃশ্য। আজানের অপেক্ষায় সবাই। কেউ কেউ শেষ মুহূর্তে শরবত তৈরিতে ব্যস্ত। কেউ দায়িত্ব নেন ছোলা-মুড়ি মাখানোর।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ইফতারের ক্ষণ গণনা করছেন অনেকে। সূর্য পশ্চিম দিগন্তে হেলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ইফতার। সবার মুখে ফুটে ওঠে তৃপ্তির হাসি। ইফতারের এমন আয়োজন সবার মধ্যে সৌহার্দ তৈরি করে। রমজান মাস, সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করার এক অনন্য সুযোগ। ইফতারের সময় খাবার ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও ভালোবাসায় আবদ্ধ হন।
পবিত্র রমজান মাসে একসঙ্গে ইফতার করার এমন দৃশ্য চোখে পড়ে দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। রমজান মাসজুড়ে ইফতার আয়োজন থাকে চোখে পড়ার মতো। তেমনই এক সুন্দর ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি হয় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কৈটোলা-এর এসএসসি ব্যাচ-২০১৮ শিক্ষার্থীদের মাঝে। ইফতারের এই আয়োজনের মাধ্যমে একটি বছর পর সকল বন্ধু মিলে একত্রিত হয়ে একটি সৌহার্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। একে অপরের সাথে অনেক দিন পর দেখা, কোলাকুলি, জমে থাকা নানা কথায় সৃষ্টি করে এক আবেগ ঘন দৃশ্য।
ইফতারের এই আয়োজন নিয়ে দি রাইজিং ক্যাম্পাসের সাংবাদিক ও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিবুল ইসলাম বলেন, আমরা বন্ধুরা প্রায় এখন সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ঈদ ছাড়া আমাদের খুব একটা দেখা হয় না বললেই চলে। প্রতিবছর আমরা এই রমজান মাসের জন্য অপেক্ষা করি একত্রে ইফতার আয়োজন করবো বলে। সত্যি বলতে ইফতারের এই সুন্দর আয়োজন আমাদের বন্ধুদের সম্পর্ক আরো গৃঢ় করে তোলে।
বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডামুখর ইফতারে এক ভিন্ন অনুভূতি খুঁজে পাওয়া যায়। এ যেন ভ্রাতৃত্বের এক বন্ধন। সবার সঙ্গে ইফতার করে কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো স্কুল জীবনে চলে গিয়েছি। এরকম সুন্দর দৃশ্য কালের সাক্ষী হয়ে থাকুক।’