নাজিফা নিমু: ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। রোজ সকালে পত্রিকার পাতায় অথবা ফেসবুকের নিউজফিডে সামনে চলে আসে,‘চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু’, “ ভুল চিকিৎসা এবং চিকিৎসকের অবহেলায় স্কুল ছাত্রের মৃত্যু”, “ চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যু” ইত্যাদি। চিকিৎসায় অবহেলা এবং ভুল চিকিৎসার ফলে রোগীর ভোগান্তির খবর প্রায় সবসময় পাওয়া যায়। মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষুধ সেবন, ভুল রোগ নির্ণয়, ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ডোজ এবং দীর্ঘদিন ব্যবহার, ভুল অস্ত্রপাচারের কারণে কেও কেও বরণ করছে পঙ্গুত্ব এবং কেও কেও ধাবিত হচ্ছে মৃত্যুর পানে।
কথায় আছে, “ যার জ্বালা সেই বোঝে”। ভুল চিকিৎসার কারণে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারানোর কষ্ট সেই পরিবারের সদস্যরা ছাড়া অন্য কেও বুঝবে না, সদ্য পৃথিবীতে আসা নবজাতক নিজের মাকে হারাচ্ছে, বাবা- মায়ের একমাত্র আদরের সন্তানের লাশের ভারের বোঝা কত ভারী তা বলতে পারবে শুধুই সে বাবা, পঙ্গুত্ব বরণ করে সারাজীবন পরনির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকার কষ্ট সেই মানুষটা ছাড়া আর কেও বুঝবে না।
আমার এক কাছের বন্ধুর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা বলি। সাধারণ জ্বর নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছিলো সে। ডাক্তার তাকে ধরিয়ে দিয়েছিলো একগাদা টেস্ট, সব টেস্ট করানোর পরে ডাক্তার তাকে বললো তার জন্ডিস হয়ে গেছে। সেই অনুযায়ী সে চিকিৎসাও নেওয়া শুরু করলো। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবন করার পরেও যখন তার অসুস্থতা না কমে উল্টো বেড়ে গেল তখন সে উন্নতমানের চিকিৎসার দ্বারপ্রাপ্ত হলো। যথারীতি আবারো ডাক্তার তাকে বেশকিছু টেস্ট ধরিয়ে দিলো,, টেস্টের রেজাল্টে ডাক্তার বললো তার লিভার ক্যান্সার এবং তাও লাস্ট স্টেজ। তার কাছে আর খুব বেশী সময় ও নেই, এই খবর শোনার পরে না সে বিশ্বাস করতে পেরেছিলো না পেরেছিলেন আমরা সবাই। অতঃপর মাত্র ৭ দিনের মাথায় আমার সেই বন্ধু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আমরা এখনো আফসোস হয় যদি ৪ মাস আগে যখন সে প্রথম ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলো যদি ডাক্তার তাকে সঠিক চিকিৎসা দিতো তাহলে হয়তো সে আমাদের সাথেই থাকতো আজ!
সবাই কাম্য করে নির্ভুল চিকিৎসাব্যবস্থার। জীবনের কঠিন যুদ্ধে টিকে থাকার জন্য যখন একজন অসুস্থ মানুষ চিকিৎসকের কাছে যায়, তখন সে কোন আকুতি নিয়ে যায় না, তাকে সেবা প্রদান করা এই মহান চিকিৎসা ব্যবস্থার মানবিক ধর্ম। যখন এই ধর্মের অবক্ষয় হয় তখন সাধারণ মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলে তাদের উপর। যারা বিত্তবান তারা পাড়ি জমায় সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারতে আর যারা নিম্নবিত্ত তারা ধুঁকে ধুঁকে অপেক্ষা করে মৃত্যুর।
সাধারণ জনগণের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে দ্রুতই কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তরুণ চিকিৎসকের যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং দিক নির্দেশনার মাধ্যমে রোগীর সেবায় নিয়োজিত করা উচিত কারণ রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন অযৌক্তিক। লাইসেন্স ছাড়া এবং প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঔষুধ বিক্রি এখন সময়ের দাবি। দেশে গড়ে উঠেছে অহরহ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান যেমন: ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিক। চিকিৎসা সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠা এইসব প্রতিষ্ঠানের সেবা আসলেই কেমন এবং কোন মানের তা আসলেই যাচাই-বাছাই করা উচিত। এছাড়াও রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রপাতির মান নির্ণয়, টেকনিশিয়ানদের দক্ষতা ক্ষতিয়ে দেখা, ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ অতীব জরুরি।
সর্বোপরি ভুল চিকিৎসায় রোগীর ভোগান্তির নিরসনে শীঘ্রই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লিখেছেন : নাজিফা নিমু, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।